এই বলে পিঠের ব্যাগ থেকে একটা অদ্ভুত দর্শন বন্দুক বার করলেন মার্টিনেজ। সাধারণ বন্দুকের তুলনায় এটি অনেকটা লম্বা, আর গোড়ার দিকটা, অর্থাৎ যাকে বাটস্টক বলে, সেটা এতটাই চওড়া যে মার্টিনেজের কাধ থেকে পেট অবধি কভার করে, দেখে মারণাস্ত্র কম, অত্যাধুনিক গিটার মনে হয় বেশি।
প্রায় দশ কিলো ওজনের এই অত্যাধুনিক বন্দুকটি মার্কিন মিলিটারির সর্বশেষ সংযোজন। মার্কিন সহযোগী দেশগুলির সর্বোচ্চ স্তরের কমান্ডো ফোর্সকেই এগুলো দেওয়া হয়েছে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্যে।এভাবেই খান দশেক এসেছে পর্তুগালে।এসব। এখনও নিয়মিত নিয়োগের জন্যে সার্টিফিকেট পায়নি। মার্টিনেজই ভালোবেসে এর নাম দিয়েছেন হেল অ্যাভেঞ্জার!
বেশ কয়েকবছর আগে অ্যামোস গোলান নামের এক ইজরায়েলি কমান্ডার তৈরি করেন এক অদ্ভুতদর্শন বন্দুক, নাম কর্নারশট। এই বন্দুকের মাঝামাঝি থেকে বাকি অংশটা অনুভূমিকভাবে নব্বই ডিগ্রি ডানদিকে বা বাঁদিকে বাঁকানো যায়। বন্দুকের। টিগার যেখানে থাকে তার ওপরেই, অর্থাৎ যাকে অপটিক মাউন্ট বলে, সেখানে রাখা থাকে ছোট্ট ভিডিও ইউনিট। এতে আপনি কোনো দেওয়ালের এক কোনায় দাঁড়িয়েও বন্দুকের মাথাটা নব্বই ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে দেওয়ালের অন্যদিকে থাকা শত্রুকে নিকেশ করতে পারেন, ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর সামনাসামনি হওয়ার দরকারই নেই!
এই আইডিয়ার সঙ্গেই মার্কিন মিলিটারির গবেষণা বিভাগ যোগ করে আরও এক মারাত্মক মারণক্ষমতা।
মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ!
মাইক্রোওয়েভ বন্দুক বা ম্যাগনেট্রন, যা কিনা বুলেটের বদলে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মারাত্মক ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ নিক্ষেপ করে শত্রুদের উদ্দেশ্যে, তার তুল্য নিঃশব্দতম ঘাতক আজ অবধি আবিষ্কার হয়নি মারণাস্ত্রের ইতিহাসে। চার্জ করার সঙ্গে প্রথমেই টার্গেট অনুভব করে সারা শরীরে হাজার ডিগ্রির জ্বলনযন্ত্রণা। আর তারপরেই সেই কয়েকশো কিলোওয়াটের বিকিরণ আঘাত করে টার্গেটের মস্তিষ্কে, টার্গেট বুঝতেই পারে না কোথা থেকে কে তাকে আক্রমণ করল। বিনা প্রতিরোধে, বিনা শব্দে সে ঢলে পড়ে জ্ঞানহীনতার কোলে। তৎক্ষণাৎ মরে না যদিও, তার জন্যে সিক্রেট সার্ভিসের ঘাতকবাহিনী সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর যাবতীয় উপকরণ নিয়ে প্রস্তুত থাকে। ইন্টারোগেশন চেম্বারে!
এই ম্যাগনেট্রন প্রযুক্তি জোড়া হয়েছে কর্নারশটের সঙ্গে। কোনা থেকে অদৃশ্য হয়ে বিন্দুমাত্র আওয়াজ না করে শত্ৰুনিপাত করতে এর তুলনা নেই। সিক্রেট আর্মস সার্কেলে এর সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম হচ্ছে প্লাজমা ফায়ারফোর্স!
তৈরি হয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সেই হেল অ্যাভেঞ্জারের সামনের ফ্রন্ট সাইটটা নব্বই ডিগ্রি বাঁকিয়ে মাজলটা নিঃসাড়ে দেওয়ালের ওদিকে ঘুরিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। তারপর এল পি আই নেভিগেশনে ফিসফিস করে বললেন, ফিফটিথ্রি আল্ফা হ্যাশ, ডেথ বিউটি ইন অ্যাকশন।
ওধার থেকে জবাব ভেসে এল, টুয়েন্টি টু ডেল্টা হ্যাশ, অ্যায় অ্যায় ক্যাপ্টেন।
আঙুল দিয়ে ভিজিকমের রেজোলিউশন আরও বাড়ালেন মার্টিনেজ।
সেই দুই প্রহরী একইভাবে স্থির। ভেতরের দুটো ঘর থেকে উত্তেজিত চেঁচামেচি ভেসে আসছে পোশতু ভাষায়, বোঝা যাচ্ছে দরকষাকষির খুবই উত্তেজক পর্ব চলছে। যন্ত্রভ্রমরে দেখা যাচ্ছে যে প্রতিটি শিশুর মুখে অব্যক্ত আতঙ্কের ছাপ। প্রত্যেকে বেঞ্চে বসে আছে যেন মোমের নির্বাক পুতুল বসিয়ে রাখা আছে সারি সারি। মার্টিনেজের। দিকের ক্লাসরুমেই দলের পান্ডাটি বসে। সে পায়চারি করছে ক্রমাগত আর স্যাটেলাইট ফোন কানে নিয়ে চেঁচিয়ে আফগান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে যাচ্ছে যে আল্লাহর নামে, ইসলামের নামে, পবিত্র জিহাদের নামে শিশু জবাই করা কতটা শরিয়তসম্মত, বিশেষত যাদের যৌনকেশ সদ্য উদগত হয়েছে!
ঠিক এই সময়ে সামনের বেঞ্চের এক বছর দশেকের শিশু আর সহ্য করতে না। পেরে কেঁদে উঠল হাউ হাউ করে, কান্না জড়িত গলায় তার দাবি, সে তার মায়ের। কাছে যাবে!
তৎক্ষণাৎ সেই বিশালদেহী পান্ডাটি সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিল শিশুটির গালে। হতভম্ব ছেলেটির মাথা পাশে সামান্য নিচু হয়েই সোজা হলো আবার, চোখে আহত অপমানের দৃষ্টি নিয়ে সেই অবোধ শিশুটির ঠোঁট ফুলে উঠল অভিমানে, আর সেই ঠোঁটের পাশ দিয়ে বেরিয়ে এল শিশুটির নিষ্পাপ রক্ত।
আর সহ্য হল না মার্টিনেজের, নেভিগেশনে আদেশ দিলেন, ফায়ার।
সঙ্গে সঙ্গে তার হেল অ্যাভেঞ্জারের সামনের বাঁকানো নব্বই ডিগ্রি অংশটি সচল হয়ে ওঠায় কয়েকশো কিলোওয়াটের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ ধেয়ে গেল বারান্দায়। পাহারা দেওয়া দুই বীরপুরুষের দিকে।
দুজনে প্রথমে বুঝতেই পারল না কোথা থেকে কোন সর্বনাশা মৃত্যু এসে তাদের আঘাত করল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাদের শরীরের চামড়া আগুন ছাড়াই জ্বলে উঠল প্রায় হাজার ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রায়, সেই হতভম্ব ভাব কাটাবার আগেই তাদের মস্তিষ্কে এসে আঘাত করল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক চৈতন্যহীনতার আদেশ। দুজনেই কোমর সমান উঁচু পাঁচিলের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিল, জ্ঞান হারাতেই দুজনেই পাঁচিল টপকে ঝরে পড়লো নীচে, নিচ থেকে শোনা গেলো ধুপধুপ করে দুটি আওয়াজ।