দ্রুত হতভম্ব ভাব কাটিয়ে মশাল নিয়ে সেই কুয়োর মধ্যে উঁকি দিলেন তিনজনে, চেঁচিয়ে উঠলেন স্লিম্যান, মাই গুডনেস, এই পাগল লোকটাকে তুলতে হবে এক্ষুণি। খোদাবক্স, ফিরিঙ্গিয়া জলদি চলো, লম্বা দড়ি লাগবে আর আরও কিছু লোক, কাম কুইক।
মশাল হাতে জঙ্গলের বাইরের দিকে দৌড়তে লাগলেন তিনজন।
********
লোকলশকর নিয়ে যখন ফিরে এলেন স্লিম্যান, তখন রাত্রির তৃতীয় প্রহর। মরা চাঁদের মৃত্যুশীতল জ্যোৎস্নার বিষণ্ণ হিম ছড়িয়ে আছে বিশ্বচরাচরে। সেই চোরা আলো-আঁধারিতে, আধোচেনা গুঁড়িপথ বেয়ে মশালের আলো আর ধোঁয়ায় সদলবলে এসে পৌঁছালেন স্লিম্যান, তখনও অপার্থিব আশঙ্কায় মূক চারিদিক। একটি পাতাও নড়ছে না, জঙ্গল যেন ভুলে গেছে নিঃশ্বাস নিতেও, আর কোনো শব্দ নেই, কোনো প্রাণের চিহ্ন নেই, শুধু সেই ম্লান রক্তজ্যোৎস্নায় ধুয়ে আছে এই বনভূমি।
কুয়োটির এককোণে জড়ো হয় ক্ষুদ্র দলটি। মশাল নিয়ে একজন দেশি সেপাই প্রথমে সেই কুয়োর মুখে যায়, ধীরে ধীরে উঁচু করে তুলে ধরে সেই আলো এবং প্রায় তৎক্ষণাৎ আর্তনাদ করে মূর্ছা যায় সে, ভূলুণ্ঠিত মশাল নিভে যায় দ্রুত।
সঙ্গে সঙ্গে অজানা আশঙ্কায় দলটি পিছু হটে যায়। স্লিম্যান বিরক্ত গলাখাঁকাড়ি দেন, ওহে খোদাবক্স, ফিরিঙ্গিয়া, এদিকে এসো তো একবার, দেখা যাক কী হাতি ঘোড়া লুকিয়ে আছে কুয়োর নীচে যে বেওকুফ লোকজন দেখেই ফেইন্ট হয়ে যাচ্ছে, কাম হিয়ার। এই বলে মশাল ফের জ্বালিয়ে হাতে নিয়ে স্লিম্যান আর বাকি দুই শাগরেদ সেই কুয়োর মধ্যে উঁকি দেন। এবং তিনজনেই সেই হাড় হিম করা বিভীষিকার সামনে স্তব্ধ আতঙ্কে স্থবির হয়ে যান।
তাদের সামনে, কুয়োর মধ্যে দুর্গাশঙ্করের শতচ্ছিন্ন মৃতদেহ, মাথাটা সম্পূর্ণ উলটো করে মুচড়ে ছিঁড়ে ওপরের দিক মুখ ফেরানো, মুখে ভয়াবহ এক অপার্থিব হিংস্র হাসি, হাত দুটো দেহবিচ্ছিন্ন হয়ে দুই কোণায় পড়ে, পা দুটো কুঁচকি থেকে মুচড়ে আধছেঁড়া, যেন কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্র শরীর থেকে পা দুটো ছিঁড়ে নিতে গিয়ে এই মশালের আলো দেখে থমকে আছে, অন্ধকার হলেই শুরু করবে এই অসমাপ্ত কাজ। চোখ দুটো কে যেন খুবলে নিয়েছে, কালো গহ্রদুটি ঠা ঠা করে হাসছে এবং কামড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে খুবলে খুবলে খাওয়া হয়েছে দুর্গাশঙ্করের সারা শরীর, রক্তে ভেসে যাচ্ছে সমস্ত দেহ। কে বা কারা খেয়েছে তান্ত্রিকশ্রেষ্ঠ দুর্গাশঙ্করকে, সেটা বুঝতে বেশি কষ্ট করতে হয় না। কারণটা খুবই স্পষ্ট, প্রতিটি খুলি আর আধাপচা শবের মুখে-দাঁতে লেগে আছে তাজা রক্তের দাগ!