এর টেকনিক্যাল নাম সোয়ার্মবটস, রেঞ্জার্সরা ডাকে হাই-মেমস নামে।
সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে কাছাকাছি উড়তে থাকা মার্কিন ড্রোনটির অপারেটিং কন্ট্রোলের কাছে ল্যামেগো থেকে একটি কোডেড মেসেজ আসে। ল্যাংলেতে বসে থাকা ড্রোন অপারেটরটি ডাবল লেয়ারড কোডটি পাসওয়ার্ড হিসেবে এন্টার করে। মার্টিনেজের কানে এলপিআই নেভিগেশন বেয়ে নেমে এল শীতল কনফার্মেশন, ব্ল্যাকবার্ড আম্ফা। টু, আন্ডার সেন্ট্রাল কমান্ড নাউ।
এইবার শূন্যে স্থির হয়ে থাকা যন্ত্রভ্রমরটি ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে উড়ে প্যাসেজের একদম ওপরে গিয়ে শেষের দিকে তার যন্ত্রমুখ নির্দেশ করে স্থির হল। আর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বাঁহাত সামনে এনে ভিজিকমটা অন করলেন মার্টিনেজ। মার্কিন ড্রোনটির ইনপুট ফ্রিকোয়েন্সিতে সেই যন্ত্রভ্রমরের যান্ত্রিক চোখ ও তড়িতাহত নার্ভ থেকে একইসঙ্গে দুটি সিগন্যাল ভেসে আসে,ইনফ্রারেড ইরকন ও থার্মাল ইমেজিং। শত সহস্র কিলোমিটার ওপরে ভেসে থাকা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্যামোস নামের স্যাটেলাইটটি দুটো সিগন্যালকেই ডিজিটালি প্রসেস করে মুহূর্তের মধ্যে স্ট্রিমিং ভিডিওতে ভরে দেয়। মার্টিনেজের হাতে ধরা ভিজিকমের স্ক্রিনটা।
দেখা গেল যে মাপা পদক্ষেপে, আফগানি পোশতু পোশাক পরা বিশাল একটি শরীর শ্বাপদের সতর্ক হিংস্রতায় আশেপাশে তাকাতে তাকাতে এদিকেই আসছে। হাতে কালান্তক কালাশনিকভ। কাঁধে আরও দুটি রাইফেল ঝুলছে, সারা শরীরে রয়েছে আরও বিভিন্ন অস্ত্রাদি, তার মধ্যে কিছু আধুনিক, কিছু প্রাচীন। যেমন কোমরের বাঁদিক থেকে ঝুলছে পুলওয়ার, বিরাশি সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের আফগান তরবারি, যে আফগান নরখাদক অস্ত্রটির দৌলতে ব্রিটিশ সিংহকে নাকানিচোবানি খাইয়ে দিয়েছিল এই তথাকথিত অর্ধসভ্য পাহাড়ি পুশতো জনজাতি।
লোকটা প্রায় বাঁকের কাছে এসে পৌঁছেছে, মার্টিনেজ সামান্য পেছন ঘুরে দাঁতের ফাঁক দিয়ে একাক্ষরে ঠিক পেছনের রেঞ্জার্সটিকে কী যেন বললেন। সে ঠিক ক্রিকেট মাঠের উইকেটরক্ষকের ভঙ্গিতে দুটি হাতে দুটি হ্যান্ডগান নিয়ে উবু হয়ে বসল আর মার্টিনেজ এলপিআইয়ের নেভিগেশন সিস্টেমে হিসহিস করে উচ্চারণ করলেন শুধু একটি শব্দ, ব্লেজ।
মুহূর্তের মধ্যে সেই যন্ত্রভ্রমরের কপালের কাছ থেকে নির্গত হল এক তীব্র অগ্নিদীপ্ত আলোকরেখা, সিধে গিয়ে পড়ল সেই আফগান মুজাহিদিনের দুই চোখে।
যত চৌখস যুদ্ধবাজ লোকই হোক না কেন, শূন্য থেকে হঠাৎ করে ওরকম তীব্র আলো চোখে এসে পড়লে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ারই কথা, আর সেই মুহূর্তটারই অপেক্ষায় ছিলেন মার্টিনেজ। ভাঁজ করা ডানপাটা বাড়িয়ে সাইলেন্সর লাগানো হ্যান্ডগানটা তুলে ঠিক গলা বরাবর পরপর চারটে ফায়ার করেন। মার্ক তেইশ হচ্ছে। হেকলার অ্যান্ড কোখের সবচেয়ে সেরা হ্যান্ডগান। তার হাফ ইঞ্চি সাইজের চার চারটে বুলেট গলা এফেঁড়ওফোঁড় করে দেওয়ার পরেও দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কম লোককেই দেখা গেছে, বিশেষত যদি তার মধ্যে খান দুয়েক বুলেট ঘাড়ের দিকে প্রথম ও দ্বিতীয় ভার্টিব্রার মধ্যের অংশটা ভেঙে দেয়। চোখে প্রচুর অবিশ্বাস আর মৃত্যুর আতঙ্ক নিয়ে বিশাল দেহটা মেঝের ওপর নেমে আসার আগেই মার্টিনেজ দুহাত বাড়িয়ে তার পতন রোধ করলেন। তারপর মৃতদেহটি এদিকে সরিয়ে এনে এলপিআইতে মেসেজ দিলেন মার্টিনেজ, ফিফটিথ্রি আল্ফা হ্যাশ ওয়ান টার্গেট লিকুইডেটেড।
কয়েক সেকেন্ড বাদে সবার কানেই ভেসে আসে আরেকটা কণ্ঠস্বর, সেকেন্ড ছয়জনের দলের টিমলিডার আদ্রিয়ানো জবাব দেয়, টুয়েন্টি টু ডেল্টা হ্যাশ, অ্যানাদার হিয়ার।
দুটি শয়তান নিকেশ। যন্ত্রভ্রমর উড়ে গেল সামনের দিকে। স্ক্রিনে ট্যাপ করে ভিজিকম অন করলেন মার্টিনেজ। আস্তে আস্তে সামনের দিকের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে আসে।
দুর থেকে জ্বালিয়ে রাখা বিশাল সার্চলাইটের আলোতে স্কুলের সামনেটা আলো হয় আছে। সামনের বারান্দায় দাঁড়ানো দুই আফগান, স্থির ও অকম্পিত। তাদের হাতে একটা করে কালাশনিকভ, কাঁধেও তাই আর কোমরে ঝুলছে পুলাওয়ার। এরাও খুব ভালো করেই জানে যে লড়াইয়ের সময় এইভাবে বীরের মতো বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা নির্বুদ্ধিতার চূড়ান্ত, এ প্রায় মৃত্যুকে সাদরে ডেকে নিয়ে আসার সমান। যে কোনো দক্ষ স্নাইপার এদের পেড়ে ফেলতে মিনিটখানেকের বেশি সময় নেবে না। কিন্তু ওরাও জানে যে এই মুহূর্তে ওদের দিকে বুলেট দূরে থাকুক, একটা ঢিল ছোঁড়ার সাহসও কারও নেই।
ওদের হাতেই এখন প্রায় একশোজন শিশুর টুটি।
আস্তে আস্তে, নিঃশব্দ ঘাতকের মতোই সেই কালো যন্ত্রভ্রমর উড়ে গেল সামনের বারান্দার দিকে, এদিক থেকে ওদিকে। ভিজিকমে নজর বুলিয়ে নিলেন মার্টিনেজ।
স্কুলের সমস্ত ক্লাসরুমের মুখ সামনের দিকে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে চারটে ক্লাসরুম, ওপরেও তাই। তার সামনে বারান্দা, যে বারান্দা সারা স্কুলকে ঘিরে রেখেছে বলয়ের মতন। পেছনের দিকটাই অরক্ষিত রেখেছে জঙ্গিরা, ওই খাড়া পাহাড় বেয়ে কেউ যে। স্কুলের দোতলার বারান্দা অবধি উঠে আসতে পারে, এ কথা স্বপ্নেরও অগোচর ছিল তাদের। একমাত্র এয়ার ড্রপ ছাড়া উপায় নেই, আর সশব্দ হেলিকপ্টারের আওয়াজ কানে আসা মাত্র এক একটি শিশু জবাই হবে, এ কথাটা খুব স্পষ্ট করেই বলে দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।