পিকু ওঠামাত্র গাড়িতে বসে থাকা লোকটা গাড়ি স্টার্ট দিল। ওর মুখ দেখে অবাক হয়ে গেল পিকু। এ যেন নিজেকেই আয়নায় দেখছে। গাড়ি চালাতে চালাতেই ছেলেটা বলে উঠল,–দেখতে এক হলে কী হবে, আমার নামটা কিন্তু একদম অন্যরকম। ব্রায়ান। চট করে। কয়েকটা দরকারি কথা বলে নিই। সাইমনের হাতে একটা খাম পাঠিয়েছিলাম। ওর মধ্যে একটা প্লেনের টিকিট আছে। আর পাম স্প্রিং-এর একটা ঠিকানা আছে। ওই ঠিকানায় কাল সকাল ছটায় আমরা মিট করব। তুমি যে প্রশ্নের খোঁজে এসেছ, সে প্রশ্নের উত্তর ওখানেই পাবে।
একটু থেমে ব্রায়ান একবার সাইড মিররে তাকিয়ে নিয়ে বলল,–যা ভয় পেয়েছিলাম। তাই দেরি হয়ে গেছে। ফলো করছে।
–কে পুলিশ?
না, না, পুলিশ হলে তো সোজা ছিল। এ হল ড্যানিয়েলের বন্ধু। খুব বিপজ্জনক। ও তিন মিটার অব্দি হাইজাম্প দিতে পারে। আট সেকেন্ডে একশো মিটার ছুটতে পারে। তা, তুমি কি গাড়ি চালাতে জানো?
-কেন?
–তুমি চালাও। আমি ওকে গুলি চালিয়ে থামানোর চেষ্টা করি।
–কিন্তু আমার যে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এখানকার।
জোরে হেসে উঠল ব্রায়ান,–আগে তো প্রাণ বাঁচাও, তারপরে নিয়ম।
গাড়ি চালু অবস্থাতেই ড্রাইভিং সিটে কোনওরকমে চলে এল পিকু। বলল,–কোনদিকে এয়ারপোর্ট?
–আরে যে-কোনওদিকে যাও। স্পিডটা শুধু দেড়শোর কম কোরো না, আর পুলিশের গাড়ি দেখলেও দাঁড়িও না।
পিকু আগে গাড়ি চালিয়েছে, কিন্তু ভারতে আর আমেরিকাতে চালানোর মধ্যে অনেক তফাত। তবু এখন একটাই নিয়ম। ধাক্কা বাঁচিয়ে ম্যাক্সিমাম স্পিড। করলও তাই। ট্রাফিক কাটিয়ে ঝড়ের বেগে গাড়ি চালাতে লাগল–ঠিক ভিডিয়ো গেমসের মতো। ওর রিফ্লেক্স এমনিতেও খুব ভালো।
জানলা থেকে হাত বাড়িয়ে ব্রায়ান পিছনে তাড়া করে আসা গাড়িটাতে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। পিছনের গাড়ির ড্রাইভারও বেশ ওস্তাদ। ডানদিক-বাঁদিক কাটিয়ে এমনভাবে চালাচ্ছে। যে গুলি করা খুব শক্ত। আর এর মধ্যেই পিকুর গাড়ির খুব কাছে চলে এসেছে।
ব্রায়ানের হাত বেশ পাকা। খানিকবাদেই তাড়া করে আসা গাড়িটার ডান দিকের টায়ারে গুলি লাগল। গাড়িটা কাছে চলে এসেছিল। ওই ছেলেটাও গুলি চালাতে শুরু করেছে। কয়েকটা গুলি ব্রায়ানের গাড়িতে এসেও লেগেছে। ব্রায়ানও এখন ছেলেটাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
হঠাৎ ব্রায়ান চেঁচিয়ে বলে উঠল, বুকে গুলি লেগেছে ছেলেটার। তবে তাতে ওর কিছু হবে কিনা বলা শক্ত। আমার গাড়ির কাঁচ বুলেট প্রুফ বলে বাঁচোয়া।
পিছনের গাড়িটা থেমে গেছে। ব্রায়ান চেঁচিয়ে উঠল, দাঁড়িও না। জোরে চালিয়ে যাও।
এয়ারপোর্টে পিকুকে ড্রপ করে ব্রায়ান বলল,সাবধানে যেও। পাম স্প্রিংস-এ দেখা হবে। ড্যানিয়েলের বন্ধুকে আমি একটু সামলে আসি। ও জানে যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। বেঁচে থাকতে কোনওভাবে সেটা ও হতে দেবে না। গুলি লেগেছে ঠিক, কিন্তু মরেছে কিনা তা দেখে আসি।
পিকু হাঁ করে দাঁড়িয়েছিল, ব্রায়ান বলল,–শিগগির ভেতরে ঢুকে যাও। তুমি আমার জন্য চিন্তা কোরো না। আমি তোমার মতো সাধারণ নই। আমি লড়তে শিখেছি। ব্রায়ান জোরে গাড়ি চালিয়ে দিল আবার।
৫. ডেট্রয়েট থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস
ডেট্রয়েট থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পাম স্প্রিংস মোটে আধঘণ্টার ফ্লাইট। মাঝে অবশ্য একঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। পাম স্প্রিংস-এ ফ্লাইট থেকে বেরিয়েই পিকু দেখল এক্সিট গেটের পাশে ট্যাক্সি বুকিং বুথ। বোর্ডিং পাস স্ক্যান করে, কত সময় বাদে ট্যাক্সি লাগবে বললেই ঠিক সেই সময়ে ট্যাক্সি এসে যাবে। রাত আটটা বাজে। সাড়ে আটটায় ট্যাক্সি বুক করে লাগেজ নেওয়ার জন্য এগোল পিকু। লাগেজ নিয়ে বেরোতে বেরোতে আটটা কুড়ি। এয়ারপোর্টটা ছোট। মরুভূমির মধ্যে বানানো শহর। বিত্তবানদের থাকার জায়গা। গরমে তাপমাত্রা পঞ্চাশ ডিগ্রি ছোঁয়। এখন অবশ্য গরম তেমন পড়েনি। বিশেষ করে সন্ধেবেলা বলে বেশ হাওয়া বইছে। দূরে মরুভূমির মধ্যে মাথা উঁচু করা ছোট ছোট পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আর সে পাহাড়ের সঙ্গে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় লুকোচুরি খেলছে মেঘে ভাসা নীল আকাশ।
ঠিক সাড়ে আটটায় ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল পিকুর সামনে। বুকিং-এর সময়ে যে ট্যাক্সি নাম্বারটা পেয়েছিল, সেই নাম্বারটা মিলিয়ে ট্যাক্সির পিছনে লাগেজ রেখে ভেতরে উঠে বসল। ট্যাক্সি ড্রাইভার একটু উদ্ধতই হবে, কারণ লাগেজ গাড়িতে তোলার ব্যাপারে কিছুমাত্র সাহায্য করল না।
পিকুকে ব্রায়ান যে খামটা দিয়েছিল, তার মধ্যে এয়ার টিকিট ছাড়াও হোটেল বুকিং আর আগামীকাল কোথায়, কটায় দেখা করবে তার ডিটেলস ছিল। সেই হোটেলের অ্যাড্রেসই ট্যাক্সি ড্রাইভারকে দিল পিকু। কোনও কথা না বলে অ্যাড্রেসটা নিয়ে লোকটা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে টাইপ করতে গাড়ি ছুটে চলল মরুভূমির বুক চিরে প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে।
রাস্তার দুধারে কী আছে তা অন্ধকারে স্পষ্ট বোঝা না গেলেও এটুকু পিকু বুঝতে পারল যে আশেপাশে জনবসতি নেই। গাড়ির আলোতে যেটুকু দেখা যাচ্ছে তা হল দু-ধারে প্রসারিত মরুভূমি আর ছোট ছোট ক্যাকটাস জাতীয় গাছ।
আধঘণ্টা বাদে হঠাৎ গাড়িটার স্পিড কমে গেল। কিছু কথা না বলে হঠাৎ গাড়িটা পাশের শোল্ডারে দাঁড় করিয়ে দিল ড্রাইভার। মুখ ঘুরিয়ে তাকাল পিকুর দিকে।–পৌঁছে গেছি, নামতে পারো।