–ইনহিউম্যান নয়, সুপার হিউম্যান বা অতিমানব তৈরির প্রোজেক্ট। অসাধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন লোক তৈরির।
কী স্ট্যাটাসে ছিল যেন প্রোজেক্টটা?
–শুনেছিলাম শেষের দিকে। ফাইনাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
–কে দেখছে প্রোজেক্টটা?
–সেটাই তো জানি না। সেজন্যই তো ফোন করেছিলাম আপনাকে। আপনার কাছ থেকে যদি কিছু জানা যায়।
–শোনো, একটা ঘটনা ঘটেছে। আমার ধারণা ওটা এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত। আমি আধঘণ্টা পরে ভিডিয়ো কনফারেন্স রাখছি। ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্ট এজেন্সির হেড ডঃ কেভিনকেও ডেকে নিচ্ছি। এই প্রোজেক্টটা আমাদের ইমিডিয়েটলি বন্ধ করার দরকার। জানা দরকার যে কে আসলে এটা নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা তিনজনেই যদি না জানি, তাহলে আর কে জানবে? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট?
.
১৭.
লাস ভেগাস আর নাসার ল্যাংলে রিসার্চ সেন্টারের ঘটনা দুটোর ভিডিয়ো ফুটেজ বেশ কয়েকবার দেখলেন রবিন। সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স রবিনের সন্দেহ নেই যে দুটোই সাধারণ মানুষের কাজ নয়। বিদ্যুৎবেগে এরা যাতায়াত করে। খালি হাতে কংক্রিটের দেওয়াল ভেঙে ফেলে। নির্ভুল লক্ষ্যে পরের পর গুলি চালিয়ে যেতে পারে। এক লাফে পঞ্চাশ ফুট পেরিয়ে যায়। খুব চটপট ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে।
ওনার সঙ্গে আজ মিটিং-এ আছেন সিআইএ-র ডিরেক্টর রবার্ট।
–তা আপনার কাছে যা খবর তাতে এসব পরীক্ষা চলছে প্রোজেক্ট এইচ-এর অংশ হিসেবে?
–হ্যাঁ, শুধু এই নয়, কয়েকদিন আগে আমেরিকায় যে পাওয়ার গ্রিড ফেলিওর হয়েছিল, সেটাও নাকি ওরাই ঘটিয়েছিল।
–সেকী? সেবার তো পুরো আমেরিকা পাঁচ ঘণ্টার জন্য অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। নাহ্, এদের এগেনস্টে স্টেপ নিতেই হচ্ছে। তা এসব করে এদের লাভ?
–দেখাতে চায় যে এরাই সেরা মানবজাতি। কুড়িজনেই সারা পৃথিবী দখল করার ক্ষমতা রাখে।
বলো কী?
–শুধু তাই? আমি তো এ-ও খবর পেয়েছি–আপনাকে নাকি কিডন্যাপ করার প্ল্যান আছে।
সর্বনাশ! মেরে-টেরে ফেলবে নাকি?
–না, সেটা অবশ্য জানায়নি। বেঁচে থাকতেও পারেন। তবে এদের কাছে প্রাণের তো বিশেষ দাম নেই। যারা টেস্ট দিতে গিয়ে কয়েকজনকে মেরে ফেলে, তারা পরীক্ষা পাশের পরে কতজনকে মারবে কে জানে!
এই এসি-র ঠান্ডাতেও রবিন রীতিমতো ঘামতে শুরু করলেন।
–তা এই প্রোজেক্ট এইচ চালাচ্ছেটা কে?
–আমি খবর পেয়েছি ডঃ কোলিন বলে একজন। আর্মিতে ছিলেন একসময়। প্রোজেক্টের গোপনীয়তার জন্য যাবতীয় ক্ষমতা ওনার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
–ওনাকে জানিয়ে দিন এ প্রোজেক্ট বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে।
–আর যে সব অতিমানবদের অলরেডি সৃষ্টি করা হয়েছে?
–অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।…ওহ, সেদিন এসি চলেনি বলে আমার কুকুরটার যে কী কষ্টই না হয়েছিল! এখনই কোলিনকে ফোন করুন।
–ব্যাপারটা অত সহজে হবে না। মনে রাখবেন এরা প্রত্যেকেই খুব স্পেশাল ক্ষমতা রাখে। অতজন সিকিউরিটি মিলে দুজনকে সামলাতে পারেনি। দেখতে হবে যাতে ওরা কেউ টের না পায়। আমি এমনও শুনেছি যে ওরা সবাই ওদের ওখানে একজনের কথা ছাড়া অন্য কারও কথা শোনে না। এমনকী ডঃ কোলিনেরও নয়।
–কেন? এমন কেন?
–আসলে আর্মির জন্য তৈরি হতো। তা না হলে ওদের মধ্যে ডিসিপ্লিন বোধ আনা যেত না। যে যার ইচ্ছেমতো চললে তো সর্বনাশ। এরা সবাই একজনেরই নির্দেশ শোনে।
–হুঁ বুঝলাম। তা তার সঙ্গেও কথা বললো তাহলে। মোদ্দা কথা এ প্রোজেক্ট ইমিডিয়েটলি বন্ধ করতে হবে। আমাকে কিডন্যাপ কী সর্বনেশে কথা!
.
১৮.
কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ডঃ কেন। একটা সময়ে উনি এ প্রোজেক্টে অংশগ্রহণ করতে চাননি। চাননি অতিমানব তৈরি করতে। উনি জানতেন এর বিপদ। একবার তৈরি করার পর এদের নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। কারণ এরা বুদ্ধির দিক থেকেও সাধারণ মানুষের থেকে অনেক এগিয়ে। বলার আগেই বুঝে যায়।
কিন্তু উপায় ছিল না। ওনার বিরুদ্ধে টেররিজমের চার্জ আনা হয়েছিল। তার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় এই প্রোজেক্টের চিফ সায়েন্টিস্ট হওয়া। সবাই জানত যে জিন নিয়ে ছেলেখেলা যদি কেউ করতে পারে–সে একজনই, ডঃ কেন। কীভাবে মানুষের জিনের মধ্যে পরিবর্তন এনে তাকে স্পেশাল ক্ষমতা দেওয়া যায় সে প্রযুক্তি শুধু ডঃ কেনেরই জানা ছিল। আর এটাই সর্বনাশ ডেকে আনল। ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন। আর এই ষড়যন্ত্রের জাল পাতল কে? আর কেউ নয়, স্বয়ং গভর্নমেন্ট। যে সে গভর্নমেন্টও নয়, সব থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্রের গভর্নমেন্ট। এ ধরনের জাল থেকে চেষ্টা করলেও একজনের একার পক্ষে বেরোনো সম্ভব নয়।
আর ভাগ্যের কী পরিহাস! আজ সেই গভর্নমেন্টই আদেশ দিয়েছে তার সব সৃষ্টিকে ধ্বংস করে দিতে। এরা কি একটা মাটির পুতুল যে তৈরি করলাম আর ভেঙে দিলাম! এরা প্রত্যেকেই ডঃ কেনের সন্তানের মতো। এরা ডঃ কেনকেই এদের বাবা বলে জানে। এরা ছোটবেলায় ডঃ কেনের কাছে গল্প না শুনে ঘুমোতে যেত না। সকালে ডঃ কেনের সঙ্গে বসে প্রার্থনাসঙ্গীত না গাইলে এদের ভোর শুরু হত না। এরাই বিস্ফারিত চোখে, মুখে খাবার নিয়ে বসে থাকত, আর ডঃ কেনের তাসের ম্যাজিক দেখত। এদের কারও জ্বর হলে ডঃ কেনই মাঝরাতে বারবার এসে কপালে হাত দিতেন। রাত জেগে বসে থাকতেন। আর এদেরকেই মেরে ফেলতে হবে?