এরকমই একটা ক্যাসিনোর নাম হল লা রোমা। ঝাঁ-চকচকে হোটেলের পুরো নীচের ফ্লোরে প্রায় এক বর্গমাইল জুড়ে বিশাল ক্যাসিনো। ক্যাসিনোর ভেতরে প্রচুর সিকিউরিটি জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে অত্যাধুনিক বন্দুক। দরকার হলে গুলি চালাতে দ্বিধা করবে না।
জন এ হোটেলের সিকিউরিটি হেড হিসেবে প্রায় দশ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। অন্য বেশিরভাগ রাতের মতো আজকের রাতও ঘটনাহীন। পেশাদারি গ্যাম্বলারদের ভিড় বেশিরভাগ খেলায়। এরা কোটি কোটি টাকা বাজি ধরে খেলে। লক্ষ টাকা হারলেও এরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে না। কিছু নতুন অচেনা মুখ কৌতূহলী হয়ে মাঝেমধ্যে খেলছে।
সেরকমই একটা নতুন মুখকে বেশ খানিকক্ষণ ধরে দেখছে জন। ভারি সুন্দর দেখতে। ফরসা মাঝারি হাইট। তীক্ষ্ম বুদ্ধিদীপ্ত নীল চোখ। মাথা ভরতি কঁকড়া চুল। হাঁটাচলা দেখলেই বোঝা যায় সে ক্যাসিনোতে কখনও আসেনি। সবরকম খেলা ঘুরে ঘুরে দেখছে। নিয়ম বোঝার চেষ্টা করছে। টেবিলের শুটারদের মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করছে। এখানে এরকম অনেকেই আসে। কিন্তু জনের অভিজ্ঞ চোখ তাদের সবাইকে অনুসরণ করে না।
তার কারণ ছেলেটা খেলছে, আর নতুন হলেও বেশিরভাগই জিতছে। আর বেটও করছে। বড় বড় টাকার অঙ্ক–যা বড় জুয়াড়ি ছাড়া কেউ করে না।
জন শুধু সিকিউরিটি হেড নয়, বিজ্ঞানের ভালো ছাত্র। এই খেলাগুলোর পেছনে ভাগ্য ছাড়াও বুদ্ধি কাজ করে। তার থেকেও বড় কথা যে এরকম বারবার জিতছে, সে কোনও চুরি করছে না তো? প্রযুক্তি এখন এতটাই এগিয়ে গেছে যে কে কীভাবে তাকে প্রয়োগ করে তাও বোঝা মুশকিল। এই তো মাসখানেক আগে একজন এখানে রেটিনাতে মিনি ভিডিয়ো রেকর্ডার। ইমপ্ল্যান্ট করে এসেছিল।
ছেলেটা এক বোর্ডে বেশিক্ষণ খেলছে না। দু-তিনবার জেতার পরে অন্য বোর্ডে চলে যাচ্ছে। বোর্ডের চারদিকে লুকিয়ে রাখা আছে মাইক্রো-ভিডিয়ো ক্যামেরা। যে-কোনও জাল কারচুপি ওতে ধরা পড়ে যায়। তাতেও খুঁটিয়ে বেশ খানিকক্ষণ দেখল জন। নাহ্, ছেলেটার কাছে তো সেরকম কোনও যন্ত্র নেই!
ছেলেটা এবার স্কিল জোনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আগের ক্যাসিনোর গেমগুলোতে ভাগ্যই একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল। যতই বুদ্ধি থাকুক না কেন, ভাগ্য সঙ্গে না থাকলে জেতা শক্ত। কিন্তু স্কিলজোন অন্যরকম। এই গেমে লাকের থেকে আগে থাকে স্কিল, ইনটেলিজেন্স।
ছেলেটা ওখানে গিয়েও একের পর এক জিততে শুরু করল। কালার রেস। একটা গোলাকার জায়গার নানা অংশে বারবার নানান রং ফুটে উঠছে খুব দ্রুত। দু-মিনিটের মধ্যে কোন রং কতবার হয়েছে সেটা বলতে হবে।
যে ঠিক সংখ্যার সব থেকে কাছাকাছি বলবে সে জিতবে। ছেলেটা এটাও তিনবার জিতল। তারপর প্রায় বিরক্ত হয়েই পাশের গেমটার দিকে এগিয়ে গেল। নাম্বার সিকোয়েন্স গেম। একটার পর একটা সংখ্যা ফুটে উঠেছে, আর তার মধ্যে আছে দুর্বোধ্য প্যাটার্ন। মাঝে মাঝে ওই সিকোয়েন্সের পরের সংখ্যাটা অনুমান করতে হচ্ছে। সময় খুব কম। তারমধ্যে যে আগে ঠিক বলতে পারবে সেই জিতবে।
জন জানে যে এসব গেমে যারা যোগ দেয় তারা প্রত্যেকেই এ বিষয়ে এক্সপার্ট। মাসের পর মাস-বছরের পর বছর প্র্যাকটিসের পরে এখানে আসে। বিশেষ করে এসব ক্যাসিনোতে এসে যারা বেটিং করে তারা সবরকম সাবধানতা নিয়েই নামে। কিন্তু এ ছেলেটা এসে যেন আজকে সবার প্ল্যান ভণ্ডুল করে দিয়েছে। এটাও হেসেখেলে দুবার জিতে নিল। তারপর আরেকটা বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেল।
এবার জন এগিয়ে এল। আর আড়াল থেকে দেখার দরকার নেই। নিশ্চিত কিছু গন্ডগোল আছে। জনকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে ও এখানকার সিকিউরিটিতে আছে। সাধারণ পোশাক।
জন ছেলেটার কাছে গিয়ে বলে উঠল, বাহ, তুমি তো দেখলাম অসাধারণ প্লেয়ার। একের পর এক জিতছ। তোমার নাম কী?
–পল। একঝলক জনের চোখের দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল ছেলেটা। তারপর অন্য কোনও বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে ক্যাসিনোর ফ্লোর থেকে বেরোতে গেল।
জন দ্রুত পায়ে পিছু নিয়ে ফের বলে উঠল, তুমি কোথা থেকে এসেছ?
ক্যালিফোর্নিয়া।
আমি এখানকার সিকিউরিটি। তোমার আইডিটা দেখি।
ছেলেটা কোনও দ্বিধা না করে ওয়ালেট থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স বার করে তুলে ধরল। জন একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিল। নাহ, আইডিতে কোনও গন্ডগোল নেই। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের লাইসেন্স। ছেলেটার বয়স মোটে কুড়ি। তবু একে এত সহজে ছাড়া যাবে না। জানা দরকার কীভাবে সমানে জিতে চলেছে।
–তুমি আমার সঙ্গে একবার আমাদের সিকিউরিটি রুমে চলো। দরকার আছে।
জন ভেবেছিল যে ছেলেটাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভয় দেখাতে হবে। বলপ্রয়োগেরও দরকার হতে পারে। তাই এক বিশালদেহী গার্ডকে ইতিমধ্যেই ডেকে নিয়েছিল। কিন্তু তার কোনও দরকার হল না। ছেলেটা বেশ হাসিমুখেই ওর পিছু পিছু এগিয়ে চলল।
বিশালদেহী কালো গার্ডটা ছেলেটার পাশে পাশে হাঁটছিল। এসক্যালেটরের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ পেছনে একটা আওয়াজ হল। জন মাথা ঘুরিয়ে দেখল যে গার্ডটা মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
জন দেখতে না পেলেও আরেকটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন গার্ডের চোখ এড়ায়নি ঘটনাটা। সে আঙুল তুলে ছেলেটার দিকে ছুটে এল।
–ও ঘুষি মেরে জোকোকে ফেলে দিয়েছে।