নারীর সুদৃঢ় নিতম্বের প্রতি পুরুষদের আগ্রহের অবশ্য আরও একটি বড় কারণ আছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বিগত পাঁচ মিলিয়ন বছরে মানুষের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়। ফলে এটি বাচ্চার জন্মের সময় তৈরি করেছে জন্মসংক্রান্ত জটিলতার। এই কিছুদিন আগেও সারা পৃথিবীতেই বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাওয়া মায়েদের সংখ্যা ছিল খুবই উদ্বেগজনকভাবে বেশি। আজকের দিনের সিসেক অপারেশন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি এই জটিলতা থেকে নারীকে অনেকটাই মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু আদিম সমাজে তো আর সি-সেকশন বলে কিছু ছিল না। ধারণা করা হয়, সভ্যতার উষালগ্নে ক্ষীণ নিতম্ববিশিষ্ট নারীদের মৃত্যু অনেক বেশি হয়েছে বড় মাথাওয়ালা বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে। টিকে থাকতে পেরেছে সুডৌল এবং সুদৃঢ় নিতম্ব-বিশিষ্ট মেয়েরাই। কারণ তারা অধিক হারে জন্ম দিতে পেরেছে স্বাস্থ্যবান শিশুর। ফলে দীর্ঘদিনের এই নির্বাচনীয় চাপ তৈরি করেছে। নারী দেহের সুদঢ় নিতম্বের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক উদগ্র কামনা!
চিত্র। পেজ ৭৯
চিত্রঃ অধ্যাপক দেবেন্দ্র সিংহ তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, কোমর এবং নিতম্বের অনুপাত মোটামুটি ০.৭ এর মধ্যে থাকলে তা তৈরি করে মেয়েদের ‘classic hourglass figure’, এবং এটি পুরুষদের মনে তৈরি করে আদি অকৃত্রিম যৌনবাসনা।
পুরুষের চোখে নারীর দেহগত সৌন্দর্যের ব্যাপারটাকে এতদিন পুরোপুরি “সাংস্কৃতি ব্যাপার বলে মনে করা হলেও আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক দেবেন্দ্র সিংহ তার গবেষণা থেকে দেখিয়েছেন যে, সংস্কৃতি নির্বিশেষে নারীর কোমর এবং নিতম্বের অনুপাত ০.৬ থেকে ০.৮ মধ্যে থাকলে সার্বজনীনভাবে আকর্ষণীয় বলে মনে করে পুরুষেরা। অধ্যাপক সিংহের মতে মোটামুটি কোমর নিতম্ব = ০.৭ এই অনুপাতই তৈরি করে মেয়েদের ‘classic hourglass figure’, যা পুরুষদের মনে তৈরি করেছে আদি অকৃত্রিম যৌনবাসনা। সংস্কৃতি নির্বিশেষে এই উপাত্তের পেছনে সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়[৭৮]। সম্প্রতি পোলিশ একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, সুডৌল স্তন, সরু কোমড় এবং হৃষ্ট নিতম্ব মেয়েদের সর্বচ্চ উর্বরতা প্রকাশ করে, যার পরিমাপ পাওয়া গেছে দুটো প্রধান যৌনোদ্দীপক হরমোনের (17-B-estradiol & progesterone) আধিক্য বিশ্লেষণ করে[৭৯]। পুরুষের মনে প্রথিত হওয়া যৌনোদ্দীপক কোমর/নিতম্বের অনুপাত আসলে তারুণ্য, গর্ভধারণক্ষমতা (Fertility) এবং সাধারণভাবে সুসাস্থ্যের প্রতীক। কাজেই এটিও পুরুষের কাছে প্রতিভাত হয় এক ধরনের ‘ফিটনেস মার্কার হিসেবে। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানী ভিক্টর জন্সটন তাঁর “Why We Feel? The Science of Emotions’ বইয়ে বলেন যে মেয়েদের কোমর ও নিতম্বের অনুপাত ০.৭ হলে এন্ড্রোজেন ও এস্ট্রোজেন হরমোনের যে অনুপাত গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে অনুকুল সেই অনুপাতকে প্রকাশ করে। এরকম আরেকটি নিদর্শক হলো সুডৌল ওষ্ঠ। সেজন্যই গড়পড়তা পুরুষেরা এঞ্জেলিনা জোলি কিংবা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের পুরুষ্টু ওষ্ঠ ছবিতে দেখে লালায়িত হয়ে ওঠে। কাজেই দেখা যাচ্ছে সৌন্দর্যের উপলব্ধি কোনো বিমূর্ত ব্যাপার নয়। এর সাথে যৌন আকর্ষণ এবং সর্বোপরি গর্ভধারণক্ষমতার একটা গভীর সম্পর্ক আছে, আর আছে আমাদের দীর্ঘদিনের বিবর্তনীয় পথপরিক্রমার সুস্পষ্ট ছাপ।
.
বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা
শচীন দেব বর্মনের গাওয়া আমার একটা খুব প্রিয় গান আছে। গানটির কথাগুলোর সাথে অবশ্য অনেকেই পরিচিত (এখানে একটি কথা বলে রাখি, গানটির গীতিকার কিন্তু হলেন মীরা দেব বর্মন; শচীন কর্তার স্ত্রী![৮০])–
বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে
হৃদয়ে দিয়েছ দোলা
রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে
একি তব হোলি খেলা।
তুমি যে ফাগুন রঙেরও আগুন
তুমি যে রসেরও ধারা।
তোমার মাধুরী তোমার মদিরা
করে মোরে দিশাহারা
মুক্তা যেমন শুক্তিরও বুকে
তেমনি আমাতে তুমি
আমার পরানে প্রেমের বিন্দু
তুমিই শুধু তুমি …
প্রেমের কথা বলতে গেলে গন্ধের কথা আলাদাভাবে বলতেই হবে। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে গন্ধের অনুভূতিই সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন। এমনকি এককোষী ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত কেবল ‘গন্ধ শুকে বুঝতে পারে কোন খাবারটা পুষ্টিকর আর কোনটা তাদের জন্য মরণবিষ। এখন দেখা যাচ্ছে শুধু খাদ্যদ্রব্য শোকাই নয় যৌনতার পছন্দ অপছন্দের ক্ষেত্রে কিংবা যৌনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও গন্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইঁদুর, বিড়াল, কুকুরসহ অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীই বেঁচে থাকা কেবল নয়, যৌনসম্পর্কের ব্যাপারেও অনেকাংশে নির্ভরশীল থাকে গায়ের গন্ধের উপর। আসলে যৌনতার নির্বাচনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয় শরীরের গন্ধকে। আমাদের প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ যেমন আলাদা, তেমনি আমাদের প্রত্যেকের শরীরের গন্ধও আলাদা, যা অবচেতন মনেই সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, গন্ধের এই তথ্যগুলো জীবদেহে লিপিবদ্ধ থাকে এক ধরনের জিনের মধ্যে, যার নাম ‘হিস্টোকম্পিট্যাবিলিটি কমপ্লেক্স জিন’ বা সংক্ষেপে MHC gene[৮১]।