অন্যদিকে আমেরিকা তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তালিবানদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কমিউনিজম তথা সাম্যবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির সামান্য পুনরাবির্ভাবকে প্ৰতিহত করতে তারা তালিবানদের ব্যবহার করতে শুরু করেছে। মৌলবাদ ও ফ্যাসিজমের বিরোধিতা, জনগণ ইত্যাদি তাদের কাছে গৌণ।
কিন্তু তালিবানরা কিছু কিছু এলাকায় ক্ষমতায় আসতে না আসতেই তাদের আসল স্বরূপ প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র সমাজের অবিচ্ছেদ্য অর্ধাংশ যে নারী, তাদের উপর নানা কঠোর তালিবানী ফরমান থেকে এর আঁচ পাওয়া যায়।
তালিবানরা মেয়েদের চাকরি করা ও স্কুল-কলেজে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। মেয়েদের ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে, প্রয়োজনে বাজার হাট করতে গেলেও, বোরখা পরে পা-ঢেকে বেরুতে হবে। ইত্যাদি।
একইভাবে পুরুষদের জন্যও আছে কঠোর শরীয়তি আইন; আছে। পশ্চিমী পোষাক পরা, গান, টিভি, ভিডিও ইত্যাদির উপর নিষেধাজ্ঞা, মদ্যপান, ড্রাগ সেবন কিংবা অবৈধ যৌন সম্পর্কের শাস্তি হিসেবে পাথর দিয়ে মেরে ফেলার মধ্যযুগীয় বিধান ইত্যাদি। আসলে হিন্দু-মুসলিম-খৃষ্টান নির্বিশেষে মৌলবাদীদের চিন্তা-চেতনা মানসিকতা সবই মধ্যযুগীয় বা আরো আদিম,-সংকীর্ণতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, অন্য গোষ্ঠীর প্রতি বৈরিতা, হিংস্রতা ইত্যাদি। মানুষের এইসব পশ্চাদপদ ভাবনাকে ভাঙ্গিয়েই তাদের ক্ষমতা লাভের চেষ্টা।
ধর্মীয় মৌলবাদ সব মিলিয়ে এখনো মানুষের বড় একটি শত্রু। এর সঙ্গে রাজনৈতিক মৌলবাদী মানসিকতা ভিন্নতর বিপদের সৃষ্টি করছে এবং সার্বিক অবস্থাকে জটিলতর করে তুলছে। এ অবস্থায় মানুষের কল্পিত ঈশ্বরের এবং ঐ কল্পনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নানা প্রতিষ্ঠানিক ধর্মের মূলোচ্ছেদ করার কাজ অতি সক্রিয়ভাবেই পালন করা প্রয়োজন। বড় বেশি প্রয়োজন ‘ধৰ্ম’ থেকে ‘রাজনীতি’ সব ধরনের গোঁড়া মৌলবাদী অন্ধ বিশ্বাসের মূলোচ্ছেদ করে বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন করার ও মনুষ্যত্বের মুক্তচিন্তাকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করার।
———————–
(১) ক্ষমতা পাবার আগেই নিজ সংগঠন বহির্ভূত হিন্দুদের দিয়েও, এ কাজ করা যায়। কিনা তার যাচাই করার রিহার্সেল যথাসম্ভব হয়ে গেল। ২১শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ তারিখে গণেশকে দুধ খাওয়ানোর গণ উন্মাদনা সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে।
(২) শুধু বিজ্ঞান ও ধর্মের মিলনের প্রেসক্রিপশান নয়, পরিবর্তিত সময়ে, আধুনিক মনের গ্রহণযোগ্য করে এই ধরনের লোকেরা হাস্যকরভাবে ধর্মের নতুন নতুন সংজ্ঞাও হাজির করে। যেমন ধর্ম বলতে ঐ পূজা-প্রার্থনা, মন্দির-মসজিদ-গির্জা ইত্যাদি নয়, ধর্ম আসলে মানবিক ঐক্য বা সত্যই আসলে ঈশ্বর ইত্যাদি। তাহলে ঐ ধর্ম, ঈশ্বর এসব কথাকে আঁকড়ে রাখাই বা কেন? এসব গালগল্পও আসলে সূক্ষ্মভাবে ধর্ম ও ঈশ্বরকে টিকিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা মাত্র। শুধু তাকে একটু মানবিক পালিশ দেওয়া মাত্র।
(৩) মাওসেতুং চীনা পুরুষদের উপর তিন ধরনের আধিপত্যের কথা বলেছিলেন,–(১)রাষ্ট্রব্যবস্থা (রাজনৈতিক কর্তৃত্ব), (২) কুলব্যবস্থা (গোষ্ঠীগত কর্তৃত্ব) ও (৩) অতিপ্রাকৃত ব্যবস্থা (ধৰ্মীয় কর্তৃত্ব) নারীরা এই তিনটির সঙ্গে আরো একটি আধিপত্যের দ্বারা শাসিত–সেটি হল পুরুষদের দ্বারা শাসন (স্বামীর কর্তৃত্ব)।