দু-হাজার লাগবে। মহিন শান্তভাবে জবাব দিল।
জানি। আমার চেনা একজনের কাছ থেকে আমি আপনার সব খবর পেয়েছি। কিন্তু এই ব্যাপারটা একটু কমপ্লেক্স।
মহিনের কপালে ভাঁজ পড়ল। ভুরুজোড়া কুঁচকে উঠল : তার মানে?
মানে–এই খুনটায় আপনি রিভলভার ব্যবহারের চান্স পাবেন না। তাই আমার সাজেশান অনুযায়ী আপনাকে খুনটা করতে হবে।
কারণ?
কারণ আমার ভিকটিম বাড়ি ছেড়ে খুব একটা বেরোয় না। আর যখনই বেরোয় আমর্স নিয়ে বেরোয়। অর্থাৎ সেও আপনারই মতো একজন প্রফেশনাল কিলার!
কী বলছেন আপনি? প্রফেশনাল কিলার?
হ্যাঁ–তার নাম সতীশ দেবনাথ। তবে শার্প ব্রেনের জন্যে সকলে তাকে শার্প দেবনাথ বলে ডাকে।
মহিন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ওর মুখে ফুটে উঠল আবেগহীন হাসি। শূন্য দৃষ্টিতে ও কিছুক্ষণ চেয়ে রইল দেওয়ালের দিকে। তারপর দাঁতে দাঁত ঘষে উচ্চারণ করল, মিস্টার শর্মা, আমার উত্তর শুনলে আপনি হয়তো খুব অবাক হবেন।
শর্মা জিজ্ঞাসার চোখে মহিনের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।
এ-খুনটার জন্যে একটা পয়সাও আমি আপনার কাছ থেকে নেব না। কারণ, সতীশ দেবনাথ আমার একনম্বর রাইভাল।
ডোন্ট গেট এক্সাইটেড, মিস্টার রায়। হাত তুলে মহিনকে বসতে অনুরোধ করলেন কাকু শর্মা ও পুরো ঘটনাটা আগে আপনার শোনা দরকার।
মহিন রায় ধীরে-ধীরে চেয়ারে বসে পড়ল। কিন্তু ওর ডান হাত বুকের কাছে লাগানো রিভলভারে খামচি মেরে রইল।
মিস্টার রায়, রিমা কাশ্যপকে আপনি চেনেন? হঠাৎই প্রশ্ন করলেন শর্মা।
উঁহু। মাথা নাড়ল মহিন।
রিমা কাশ্যপ ছিল একজন ক্যাবারে ড্যান্সার–অশোক বারে ও নাচত। ওর ক্যারেকটার খুব একটা ভালো ছিল না, কিন্তু তবুও আমি ওকে ভালোবাসতাম। হ্যাঁ, শুনে আপনার হয়তো অবাক লাগছে, মিস্টার রায় বাট ইট ওয়াজ আ ফ্যাক্ট। বিয়ে-শাদি আমি করিনি। একা থাকি, দুহাতে পয়সা খরচ করি। তাই জীবনের একমাত্র শখ হিসেবে পুষেছিলাম রিমাকে। কিন্তু তার বছরখানেক পরে, এই গত জুলাইয়ে, একটা ঘটনা ঘটল। এক ভদ্রলোক একটা ইন্টারন্যাশনাল র্যাকেটে রিমাকে জড়িয়ে ফেললেন। রিমা নিজে জানতেও পারল না, কখন ও এক ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যখন জানল, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সেই সময়েই এক ক্লায়েন্টের কথায় সতীশ দেবনাথ ওকে খুন করে। সতীশ রিমার জুতোর তলায় দুটো ছোট-ছোট স্টিলের বল লাগিয়ে দেয়। তাতে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় পা পিছলে রিমা এক প্যাথেটিক অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। পুলিশ ঘটনাটাকে নিছক অ্যাকসিডেন্ট হিসেবে দেখেছিল, কারণ, পরে রিমার জুতোর নীচে সেই স্টিলের বলদুটো আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মিস্টার রায়, রিমা ছিল আমার সব। একজন তিনকুলে-একা পুরুষকে ও লোনলিনেস ভুলিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং সামবডি মাস্ট পে ফর রিমাজ অ্যাকসিডেন্ট। এবং সেই সামবডি সতীশ দেবনাথ ছাড়া আর কেউ নয়। মানি ইজ নো প্রবলেম, মিস্টার রায়–তাই সতীশকে সরানোর দায়িত্ব আমি আপনাকেই দিতে চাই। এবং ইট মাস্ট লুক লাইক অ্যান অ্যাকসিডেন্ট নট মারডার। যেমনটা হয়েছিল রিমার বেলায়।
মহিন একমনে কাকু শর্মার কথা শুনছিল। শৰ্মা থামতেই ও নীচু গলায় বলে উঠল, আমার ৪৫৭ ছাড়া আমি এক পাও চলি না–সেটাই আমার শেষ কথা।
আমি তা জানি, মিস্টার রায়। আপনার মেশিন আপনি ইচ্ছে করলে সঙ্গে রাখতে পারেন, কিন্তু কিছুতেই সেটা ইউজ করতে পারবেন না। আশা করি সেরকম দরকারও হবে না। উঁহু, ব্যস্ত হবেন না। আগে ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনুন। পয়েন্ট নাম্বার ওয়ান, সতীশ দেবনাথ বাড়িতে সবসময় রিভলভার সঙ্গে নিয়ে ঘোরে না। নাম্বার টু, আপনি যখন ওকে ধাক্কা দিয়ে চারতলার ওই বারান্দা থেকে নীচে ফেলে দেবেন, তখনও ওর কাছে আর্স থাকবে না। সুতরাং আপনি নির্ভয়ে এ কাজটা হাতে নিতে পারেন। রিমার মৃত্যুর বদলা নিতে যত টাকা লাগে, আমি খরচ করব। না, নাটাকা নিতে আপনার আপত্তি থাকলেও আমি শুনব না। কাজ শেষ হয়ে গেলে দু-হাজার টাকা আপনাকে আমি গিফ্ট হিসেবে দিতে চাই।
মহিন নীরব। একদৃষ্টে ও চেয়ে রইল শর্মার মুখের দিকে।
আপনার যদি এ-কাজে আপত্তি না থাকে তো বলুন– শর্মা বলে চললেন, কালই প্রিলিমিনারি ইনস্পেকশানটি সেরে ফেলি।
প্রিলিমিনারি ইনস্পেকশান? ভীষণ অবাক হল রায় : তার মানে?
সেটা আপনাকে জানাব–যদি কাজটা আপনি হাতে নেন। তার আগে নয়।
ভালো। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে সম্মতি জানাল মহিন।
ধন্যবাদ। পকেট থেকে এক প্যাকেট ক্যাপস্টান আর দেশলাই বের করে মহিনের দিকে এগিয়ে দিলেন শর্মা। মহিন মাথা নেড়ে না বলল। তখন নিজেই একটা ধরিয়ে প্যাকেট এবং দেশলাই আবার পকেটে চালান করলেন।
অলসভাবে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে তিনি বললেন, মিস্টার রায়, আমার একটা আশ্চর্য গুণ আছে। তা হল, পৃথিবীর যে-কোনও তালাই আমি মিনিটদুয়েকের মধ্যে খুলে ফেলতে পারি।
কিন্তু এর সঙ্গে খুনের কি সম্পর্ক তা তো বুঝতে পারছি না? শর্মাকে বাধা দিয়ে প্রশ্ন করল মহিন।
আছে, মিস্টার রায়, আছে। বহু কষ্টে আমি সতীশ দেবনাথের ফ্ল্যাটের ঠিকানা খুঁজে বের করেছি। কাল সতীশ যখন থাকবে না, তখন আপনাকে নিয়ে আমি একবার সতীশের ফ্ল্যাট ইনস্পেকশানে যেতে চাই। স্পটটা আগে থেকে দেখা থাকলে আপনার অনেক সুবিধে হবে, তাই না?