জানতাম।
And that is the cause—
কি বলছ তুমি?
তাই। প্রতুল সুভাষ ও কুনাল তিনজনই গীতাকে ভালবাসত—সবাই মনে মনে গীতাকে চাইছিল, কিন্তু গীতা যখন প্রতুলকে বেছে নিল জীবনে, ব্যাপারটা জটিল হয়ে উঠল। যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে ওই নিষ্ঠুর মৃত্যুবরণ করতে হয়।
সত্যি বলছ?
হ্যাঁ। প্রেম যেমন সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারে, তেমনি প্রচণ্ডতম নিষ্ঠুর ও হিংস্রও হতে পারে। আর এক্ষেত্রেও হয়েছিল তাই–
কিন্তু কে?
গীতার তিন বন্ধুরই মধ্যে একজন।
কে?
কাল বলব। তুমি ওদের তিনজনকে কাল সন্ধ্যায় ডেকে পাঠাও।
.
পরের দিন সন্ধ্যায়।
ঘরের মধ্যে সকলেই উপস্থিত। শান্তনু, কিরীটী, দত্তরায়, সুভাষ, কুনাল ও প্রতুল।
কিরীটী বলছিল, আপনারা নিশ্চয়ই অবাক হবেন শুনলে, গীতাকে আপনাদের তিনজনের মধ্যে একজন খুন করেছেন।
প্রতুল বলে, কি আবোল-তাবোল বকছেন মশাই?
আবোল-তাবোল নয়, নিষ্ঠুর সত্য–
সুভাষ বলে, কিন্তু আমরা তো কেউ সে-রাত্রে ছিলামই না। একসঙ্গে তিনজন বের হয়ে যাই।
গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আবার সে-রাত্রে ফিরে আসা তো অসম্ভব কিছু ছিল না।
তার মানে? সুভাষ বলে।
তার মানে ভেবে দেখুন, কে এবং আপনাদের তিনজনের মধ্যে কার পক্ষে সে রাত্রে আবার ফিরে আসা সম্ভবপর ছিল!
কার?
কেন—আপনি সুভাষবাবু! আপনার গাড়ি ছিল, আপনি বন্ধুদের পৌঁছে দিয়ে এখানে সোজা আবার চলে আসতে অনায়াসেই পারতেন না। আর তাই হয়েছিল, আপনি সে-রাত্রে আবার ফিরে আসেন নিরালায়?
আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি!
মাথা যে আমার খারাপ হয়নি, আপনার চাইতে সে-কথা আর কেউ ভাল জানে সুভাষবাবু। আর আপনি যে ফিরে এসেছিলেন তার প্রমাণও আছে।
প্রমাণ! প্রশ্নটা প্রতুল করে এবার।
হ্যাঁ। এক নম্বর সে-রাত্রে গীতার ঘরে কথাবার্তা শুনেছিলেন মাসীমা, আপনারা তো কেউ সে-রাত্রে উপরে গীতার ঘরে আসেননি, নিচ থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। শান্তনুও বাড়ি ছিল না। তবে সে কে? দুই-নম্বর, সে-রাত্রে গীতা ওপরে আসবার পরও শম্ভুচরণ সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনেছিল। সে কার পায়ের শব্দ? তিন-নম্বর, আপনার বাড়ি ঘড়ির কাটা আধ ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়েছিলেন, সময়ের ব্যবধানটা প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য। এর পরও অস্বীকার করত চান সে-রাত্রে আবার আপনি আসেননি?
হঠাৎ সুভাষ হো হো করে হেসে ওঠে—চমৎকার! যদি ধরুন আমিই–প্রমাণ কি তার?
হ্যাঁ, চার নম্বর, এই রুমালটা আপনার-কোণে আপনার নামের মনোগ্রাম করা আছে। দেখুন।
সুভাষ একেবারে বোবা। যেন পাথর।
এটা কোথায় পাওয়া গেছে জানেন? গীতার ঘরে। এটাই শম্ভুচরণ পাঠিয়েছে। আপনাকে–
শম্ভু!
হ্যাঁ, তাকে আপনি ভয় দেখিয়ে কলকাতা ছাড়া করবার চেষ্টা করেছিলেন, কারণ আপনার সন্দেহ হয়েছিল সে কিছু জানে। বেচারী ভয় পেয়ে পালিয়ে না গেলে হয়ত শেষ পর্যন্ত এই মোক্ষম প্রমাণটা তার কাছ থেকে পেতাম না—আপনি হয়ত তাকেও হত্যা করতেন। শুনুন সুভাষবাবু, সেদিন আপনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যে প্রচণ্ড ঘৃণা ও আক্রোশ আপনার কথাবার্তায় প্রকাশ পেয়েছিল গীতা সম্পর্কে, সেটাই আমাকে সর্বপ্রথম অনুসরণের আলো দেখায়।
সুভাষ নির্বাক।