বাঃ, পানিশ করবে না? রুল ব্রেক করেছিলুম যে! মেঘদীপ মায়ের অজ্ঞতায় আশ্চর্য!
এবার মায়ের আরও বিস্ময়ের পালা। এবং ক্রোধের।
কেন? কোন রুল তুই ব্রেক করেছিলি? কেনই বা?
আমি এসএমএস করছিলুম।
ক্লাসের মধ্যে?
এবারে মেঘু চুপ।
কী এসএমএস করছিলি? ক্লাসের মধ্যে?
এবারে দিদিমণি দিদার আধখানা বুজে-যাওয়া গলা শোনা গেল।
ক্লাসের মধ্যে তোদের মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে দিল কেন? বলেছিল না বারণ? লকারে রেখে যাওয়ার কথা নয়? মায়ের কিন্তু তীক্ষ্ণ-কণ্ঠ।
বারণই তো? আমি তো ভুলে-ভুলে নিয়ে ফেলেছিলম ভিতরে।
ভুলে-ভুলে? আর এসএমএস-টাও কি ভুলে-ভুলে করে ফেলেছিলি? দুষ্টুমি করবে শাস্তি তো পাবেই।
আশ্চর্য। আমি কি কমপ্লেন করেছি? আমি তো বলেইছি, রুল ব্রেক করেছি, পানিশমেন্ট হবে, তাই বলিনি? আর কোনও দিনও মোবাইল নিয়ে যাব না ক্লাসের মধ্যে। এসএমএস করার চান্সও থাকবে না তা হলে। ফোনটা থাকলেই লোভ হয়। শুধু একঘণ্টা কাল ডিটেল্ড হব স্কুলের পরে। তোমরা ভাবনা কোরো না, আইল বি ফাইন।
কত বড় হয়ে গিয়েছে এই কিছুদিনের মধ্যেই, মেঘুর এখন বারো পূর্ণ।
.
হপ্তা দুয়েক পরেই, আবার একদিন ইশকুল থেকে এসে মেঘু ঘোষণা করলে, আবার আমি কাল ডিটেল্ড হচ্ছি, মা। আমিও জেনি-ও।
এবারে তোমার অপরাধ কী?
আমরা দুজনের ক্লাসের মধ্যে কাগজের টুকরোয় কমেন্টস এক্সচেঞ্জ করছিলুম তো, তা-ই। টিচার ধরে ফেলেছেন।
ফোন নেই, তাও তোমাদের রক্ষে নেই? এবারে টুকরো কাগজ?
আমি কী করব, আমি তো আগে লিখিনি, জেনি লিখেছিল।
কী লিখেছিল মেয়েটা তোকে?
আমাকে আই লাভ ইউ নোটিস পাঠাচ্ছিল। বারণ করলে শুনছিল না। আমি তার উত্তর দেব না?
টিচাররা সেসব দেখলেন?
হ্যাঁ, দেখলেন তো।
বে-শ। মায়ের ক্ষোভ এবারে ফোঁস করে ওঠে।
তুমি কী লিখেছিলে দাদুভাই? খারাপ কিছু লেখখানি তো?
আমি? না, খারাপ কেন হবে? ওঃ, মেয়েটা আমাকে যা জ্বালায় না দিদা ভীষণ বিরক্ত করে। কিছুতেই আমার কথা শুনবে না, আমি ওকে ডেট করতে চাই না, ও ব্লন্ড, পাকাচুলের মতো দেখায়, কিন্তু ও আমাকে ডেট করবেই করবে। খালি-খালি আই লাভ ইউ ওই সমস্ত কথা লিখে নোট পাঠাচ্ছে ক্লাসের মধ্যে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে নয় কিছু না! তাই আমি একটাতে লিখেছিলাম, বাট আই ডোন্ট। তার পরেরটায় লিখলাম, জাস্ট ড্রপ ডেড। আর শেষেটাতে লিখেছিলাম, জাম্প ফ্রম তা ক্লিফ। এই তো কেবল? কী এমন খারাপ কথা? পিছনে লাগলে যে কেউই বলবে। জেনি বলত না, যদি আমি ওকে এইরকম ভাবে বিরক্ত করতাম?
পরের দিন বিকেল। দুজনকেই ডিটেন করেছে ইশকুলে। বিচারসভা বসছে হেডমাস্টারের ঘরে। ফিরতে দেরি হবে।
বাড়িতে সবাই প্রস্তুত : কী জানি কী হয়। কত রাতে ফেরে?
ডোরবেল বাজল খানিক পরেই।
কী রে? ডিটেনশন পিছিয়ে দিল।
না। স্কুলব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে শ্রীমান মেঘদীপের একগাল হাসি। ছেড়ে দিলেন।
.
আরাম করে সফটি আইসক্রিম আর চকোলেট কেক খেতে-খেতে মেঘু বললে, হেডমাস্টার বললেন, এক তো রুল ভেঙে ক্লাসের মধ্যে চিঠি চালাচালি করেছ। দুই, একটি মেয়েকে এত বিশ্রী বিশ্রী কথা কেন লিখেছ? জেনি বলছে সে তোমারে শুধু আই লাভ। ইউ লিখেছিল, তার উত্তরে তুমি আমি দেখি জেনি-র মুখ ভয়ে এতটুকু। কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তখন বললুম–
হা স্যর, কথাটা ঠাট্টা করেই বলেছিল ও, আমারই অতটা রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি, সব দোষ আমার, জেনি-কে পানিশ করবেন না, ওকে আপনি ছেড়ে দিন, ও বেচারির কোনও দোষ নেই। আমাকে পানিশ করুন আমি রুল ভেঙেছি। হঠাৎ অত রেগে গিয়ে ক্লাসের মধ্যে বিশ্রী বিশ্রী করে চিঠি লেখালিখি আমার উচিত হয়নি। ওকে ছেড়ে দিন স্যর।
সব শুনে, দুজনেরই সব চিঠি পড়ে, আমাকে শিভালরাস জেন্টলম্যান বলে খুব আদর করে ছেড়ে দিলেন স্যার। জেনিসকেও একটু বকুনি দিয়ে ছেড়ে দিলেন। কী ভালো না দিদা, আমাদের হেডমাস্টার? অথচ সবাই তাকে ভয় পায় খুব।
সত্যি খুব চমৎকার মানুষ। কিন্তু তুমি তার মুখ রাখবে তো দাদুভাই? এই যে মোবাইলের পরে চিঠি চালাচালি, সব ক্ষমা করে দিলেন, আবার কিছু বাধিয়ে বোসো না যেন। এরপর আর ছেড়ে দিতে পারবেন না উনি।
ধ্যেৎ, তা কখনও হয়। আমি না শিভালরাস জেন্টিলম্যান হয়ে গেছি? আর নিয়ম ভাঙা মানায়।
দিদু তখন শিভালরাস জেন্টিলম্যানকে কোলে জড়িয়ে একটা চুমু খেলেন।