এখন আর একাধিক বিয়ে করার কোনো সুযোগ নেই, সামর্থ্যও নেই। তা সত্ত্বেও বহুবিবাহের প্রচলন ছিল, তখনও মানুষ বহুগামী ছিল এবং একাধিক মহিলার সঙ্গে যৌন-সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। বহুগামিতার একটি পরিচিত রূপ হল বহুপত্নীকতা। বহুপত্নীক বিবাহবন্ধন সাধারণত একজন স্বামী ও একাধিক স্ত্রীর সমন্বয়ে গড়ে উঠে। অধিকাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাষ্ট্র ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বহুবিবাহের বৈধতা দেয়। কিছু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রও এর বৈধতা দিয়েছে। কিন্তু চারটির বেশি কখনোই নয়, তাও শর্তসাপেক্ষে। অতএব চারটি বিয়ে করে ফেলা মোটেই কাজ নয়। মুসলিম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের মানুষদের একের অধিক বিয়ে করার অধিকার বর্তমানে নেই। অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় আফ্রিকা মহাদেশে বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ব্যাপক। এর কারণ হিসাবে পণ্ডিতগণ আফ্রিকায় নারী-পুরুষের সাংখ্যিক অনুপাত এবং দাসপ্রথাকেই দায়ী হিসাবে উল্লেখ করছেন। নৃতত্ত্ববিদ জ্যাক গুঁড়ি অ্যাথনোগ্রাফিক এটালাস ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বিবাহের তুলনামূলক গবেষণায় উপ-সাহারান আফ্রিকান সমাজগুলির ক্ষেত্রে ব্যাপক খামার বাগান এবং বহুগামিতার মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক প্রদর্শন করেন।
মানুষ কি জিনগতভাবেই বহুগামী? সেক্স থেরাপিস্ট গের্টরুড ভোলফ অবশ্য এ ব্যাপারে তাঁর অবস্থান এককথায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মানুষ জিনগতভাবেই একগামী নয়।” ভোলফের এক-তৃতীয়াংশ ক্লায়েন্টই তাঁর কাছে আসেন প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে। একটি দম্পতি বা যুগলের যে-কোনো একজন অন্য জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, এমন অভিযোগই বেশি। আর অনেক যুগলের কাছেই, যৌনজীবনে সৎ থাকা মানে একগামিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি প্রায়ই এমন মানুষের মুখোমুখি হই, যাঁরা বলেন যে তাঁরা কোনোদিনই প্রতারণা করবেন না। এবং তাঁদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী যদি প্রতারণা করেন, তাহলে তাঁকে ক্ষমা করবেন না।” তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, তাঁদের অনেকে আবার আমার সামনে এসে বসেন, কেন-না, তাঁরা আসলে যৌনজীবনে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।”
অনেক মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, একগামিতার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত। একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেটা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। আর কারও কারও মতে, একগামিতা আসলে সেকেলে ধারণা, যা শীঘ্রই সমাজ থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। ভোলফ মনে করেন, একগামিতা হচ্ছে পুরুষের আবিষ্কৃত এক ধারণা, যাকে সাংস্কৃতিক অর্জন বলা যেতে পারে। আর এটা এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও। ভোলফ তাঁর বই ‘Construction of Adult’-এ মানুষের যৌনাকাঙ্ক্ষার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেখানে তিনি দুই ধরনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। একটি ধরন হচ্ছে, যেটি পুরোপুরি শারীরিক চাহিদা থেকে সৃষ্ট। এখানে ঘনিষ্ঠতার কোনো ব্যাপার নেই, বরং পুরোটাই শারীরিক চাহিদা। এই সম্পর্ক সাময়িক।
সেটা ছিল পড়ন্ত বিকেল, মদের নেশাটাও বাড়ছিল, মোটের উপর সঙ্গিনীও ছিল আকর্ষণীয়। ফলে হাসিঠাট্টা এক পর্যায়ে চুমুতে রূপ নেয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে বিছানায়। ম্যাক্স মাঝেমাঝেই এভাবে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। আর এটা কোনো সমস্যা হত না, যদি-না তিনি বিবাহিত হতেন। ম্যাক্স মনে করেন, তাঁর এই যৌনাকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও এমনটা করা ঠিক নয়। বর্তমানে ৩০ বছর বয়সি এই নারী বয়স ২০ পেরুনোর পর নানাভাবে যৌনতার স্বাদ নিয়েছেন। কখনো সুইঙ্গার ক্লাব মানে তাৎক্ষণিক সঙ্গী বদলের ক্লাবে গিয়েছেন, কখনো এমন সব স্থানে সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন, যা স্বাভাবিকভাবে ভাবা যায় না। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল যতটা সম্ভব আনন্দ, উত্তেজনা উপভোগ করা।
আর দ্বিতীয় ধরনের সম্পর্ক হচ্ছে, যেখানে যৌনতার মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া ঘনিষ্ঠতা, যা মানসিকও হতে পারে। ভোল্ফের ভাষায় যাকে বলে, “সংস্কৃতির আদলে যৌনতা।” তাঁর মতে, এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একগামিতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে, কেন-না, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ককে মজবুত করে তোলেন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কিটি পার্টির আয়োজন হচ্ছে সর্বত্র। যে পার্টিতে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর অদলবদল করে যৌনসঙ্গী করে নিচ্ছে সাময়িক সময়ের জন্য। একঘেঁয়েমি যৌনজীবন থেকে মুক্তি পেতেই এই ধরনের পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছে।
গের্টরুড ভোল্ফের কাছে আরও এক ধরনের ক্লায়েন্ট আসেন, যাঁদের যৌনচাহিদা তাঁদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী পূরণ করেন না। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, দুজনের চাহিদা ভিন্ন কিংবা একজনের চাহিদা অন্যজনের পছন্দ নয়। সেসব যুগলের ক্ষেত্রে সম্পর্কটা একসময় এমন এক পর্যায়ে চলে যায় যে, তাঁদের কেউ কেউ নিজের চাহিদা পূরণে অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। এবং প্রতারণা তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় না। ভোল্ফ মনে করেন, যৌনতা নিয়ে এমন কোনো একক সমাধান নেই, যা সব যুগলের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। কিছু যুগল এই সমস্যার সমাধানে তাঁদের সম্পর্কটা উন্মুক্ত করে দেন, অর্থাৎ যৌনজীবনে একগামী থাকার ব্যাপারটি বাদ দিয়ে দেন।