তিনজন আর্মী বাজারে এল। আমানউল্লাহ তাদের পিছে পিছে ঘুরছে। তাদের ফাঁই ফর্মাশ খাটছে। হটাৎ কিছু একটা নিয়ে দুই আর্মীর সাথে এক আর্মীর লেগে গেল। তখন এক আর্মী আমানউল্লাহকে নির্দেশ দিল ‘উসকো বানাও’ মানে ওকে মার। আমানউল্লাহ আর দেরী করলো না। ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই তৃতীয় আমীর উপর। মারতে মারতে তাকে শুইয়ে ফেলল। পরে অন্য দুই আর্মীই তাকে ঠেকাল। এর মূল্য অবশ্য পরে আমান উল্লাহকে দিতে হয়ে ছিল। সে রাজাকারদেও পিটিয়েছিল একাধিকবার।
স্বাধীনতার পর সে বেচারা ঢাকায় শ্যামলীতে বোড এ্যাকসিডেন্টে মারা যায়। তার লাশ আমি আর আমার ছোট মামা মর্গ থেকে খুঁজে বের করি, সে এক মর্মান্তিক ঘটনা। বেচারার শেষ জীবনটা গেছে ভিষন কষ্টে।
*
এটাও ঠিক জোক না সত্যি ঘটনা। এক বাবা পাকিস্তানী মাইন্ডের। তার ছেলেরা এ কারণে বাবাকে পছন্দ করে না। বাবা আবার বাজারে গিয়ে পাকিস্তানের খুব গুনগান গায় পাকিস্তানীরা যে ইসলাম রক্ষায় নেমেছে এজন্য তাদের ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ ইত্যাদী ইত্যাদী। তো একদিন বাজারে বিরাট হই চই, কি ব্যাপার? এক ছিঁচকে রাজাকারকে পেটানো হচ্ছে। ঐ বাবার ছেলে বাজারেই ছিল সেও গিয়ে ধুপ ধাপ দুই তিন লাথি মেরে টান দিয়ে রাজাকারের পকেট ছিঁড়ে নিয়ে এল। বাড়ি এসে সেই ছেঁড়া পকেট সবাইকে দেখাল বলল আজ এক রাজাকারকে পিটিয়ে তার পকেট ছিঁড়ে নিয়ে এসেছি। এই নিয়ে বাড়িতে খুব হাসাহাসিও হল। একটু পরেই খবর এল। তার বাবা হাসপাতালে কে বা করা মেরেছে। সবাই ছুটলো হাসপাতালে দেখে রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা শয্যাশায়ী। গায়ের কাপড় চোপড় ছিড়া শার্টের একটা পকেট নেই। এই ঘটনার পর আর তাকে পাকিস্তানীদের পক্ষে কিছু বলতে শোনা যায় নি।
*
বিহারী লাল নামে এক হিন্দুকে পাকরাও করল হানাদার পাক আর্মী।
— তোমহারা নাম কিয়া?
হিন্দু ভদ্রলোক ভাবলেন। এমনেও মরছি ওমনেও মরছি। মরার আগ আর মিথ্যা নাম বলব না। আসল নামই বলব
দৃঢ় স্বরে বললেন–
–মেরা নাম বিহারী লাল হ্যায়
–ওহ তোম বিহারী হ্যায়…যাও যাও…
মূর্খ পাক আৰ্মী ছেড়ে দিল বিহারী লালকে। বেঁচে গেলেন সে যাত্রায় বিহারী লাল।