মা আর্তনাদ করে কেঁদে উঠলেন! তার আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হল যে সমগ্র বাংলায়!
*
এক সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী চরমভাবে পরাজিত হল। বেশির ভাগ পাকিস্তানী সৈন্য মারা গেল। বাকিরা এদিক ওদিক পালাল। এক পাকিস্ত নী তাড়া খেয়ে আশ্রয় নিল এক মহিলার ঘরে। ঘটনাচক্রে মহিলাটি ছিল বিহারী। বিহারী বলেই সে পাকিস্তানী সৈনিকটিকে হয়ত আশ্রয় দিল। মহিলাটি পাকিস্তানী সৈনিকটিকে তার চকির নিচে ঢুকিয়ে লুকিয়ে ফেলল। মুক্তিযোদ্ধারা ঐ পলাতক পাকিস্তানী সৈনিকটিকে খুঁজতে খুঁজতে ঐ মহিলার বাড়িতেও ঢুকলো। মহিলা দরজা খুলে বলল তার এখানে কেউ নেই। মুক্তিযোদ্ধারা তার কথা বিশ্বাস করে ফিরে গেল।
তারপর ঘটল ভয়ঙ্কর ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধারা চলে গেলে পাকিস্তানী সৈনিকটি বের হয়ে তারআশ্রয় দাতা মেয়েটিকে ধর্ষন করে। তবে শেষ রক্ষা হয় নি ঐ বিহারী মেয়েটিই পরে পাকিস্তানী সৈনিকটিকে ধরিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।
*
দুই ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে। সেই অপরাধে বৃদ্ধ বাবাকে ধরে নিয়ে গেল রজাকাররা আর্মী ক্যাম্পে। বলা হল ছেলেরা কোথায় আছে বলতে হবে নইলে গুলি করে মেরে ফেলা হবে। বৃদ্ধ বাবা বললেন ঠিক আছে মেরে ফেল। পাকিস্তানী আর্মী ক্যাপ্টেন একটু অবাক হল বাবার এরকম সরাসরি প্রতি উত্তরে। নির্দেশ দিল রাজাকারদের বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে মেরে ফেলতে। রাজাকাররা তাকে নিয়ে চলল নদীর ধারে। নদীর ধারে দাঁড় করানো হল বাবাকে গুলি করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রাজকাররা রাইফেল কক করছে এ সময় বৃদ্ধ বাবা হাত তুললেন
— কিছু বলবেন চাচা? রাজাকাররা জানতে চায়
— হ্যাঁ বলব।
— বলেন কি বলবেন
— আমি আমার দুই ছেলেকে ধরিয়ে দিচ্ছি আমাকে মের না।
— সত্যি?
— সত্যি
— বেশ তাহলে এখনি চলেন তারা কোথায়
— তোমরা আমার সঙ্গে আস। বলে বৃদ্ধ বাবা তাদেরকে নিয়ে চললেন। চারজন রাজাকার বৃদ্ধ বাবার পিছনে পিছনে চলল।
অনেকদূর হাটার পর একটা জঙ্গলের মত জায়গায় ঢুকলো বাবা। রাজাকাররা রাইফেল হাতে সতর্ক বুড়া আবার কোন ফন্দি করছে নাতো?– কি চাচা আর কত দূর
এইতো আইসা গেছি। বলে বৃদ্ধ মুখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে চুপ করতে বলল ফিস ফিস করে একটা অন্ধকার ঝুপড়ি বাড়ি দেখিয়ে বলল ‘এই বাড়িতে আছে আমি ঢুকে ওদের ডেকে আনি। তোমরা বাইরে প্রস্তুত থাক!’ বলে রাজাকারদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঢুকে গেলেন অন্ধকার ঘরে। রাজাকাররা বাইরে থেকে রাইফেল হাতে প্রস্তুত। ভিতরের ছাপড়া ঘরে মেচ জ্বললো যেন তারপর একটু পর সেই বৃদ্ধ হটাৎ বেরিয়ে এল একটা ধারালো রাম দা নিয়ে.. এবং রাজাকাররা কিছু বোঝার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়ল ওদের উপর অসুরের শক্তি নিয়ে…একজন স্পট ডেড, দুজন গুরুতর আহত চতুৰ্তৰ্জন অবশ্য গুলি করে দিল বৃদ্ধকে। তিনি শহীদ হলেন তবে সঙ্গে নিয়ে গেলেন তিন বিশ্বাস ঘাতক রাজাকারকে, গুরুতর আহত দুই রাজাকারও পরে বাঁচে নি।
*
ধরা যাক তার নাম গাফফার। খুবই গরীব এক তরুন। তখন শুরু হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ। শান্তিবাহিনীর তত্ত্বা বধানে তৈরী হয়েছে রাজাকার বাহিনী গাফফার রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিল। জীবনের প্রথম চাকরী বেতন আছে ড্রেসও আছে ক্ষমতাও আছে। তার বেশ ভালই লাগছে, ডিউটি থানায়… আর্মী ক্যাম্পে। রাইফেল হাতে পাহাড়া দিতে হয়। মাস শেষে বেতন। ভালই কাটছিল গাফফারের জীবন। কিন্তু হটাৎ তার খটকা লাগল যেদিন অন্য রাজাকারররা কিছু মেয়ে ধরে আনল ক্যাম্পে। তার ঠিক পছন্দ হল না, বিষয়টা তার কমান্ডারকে জানালে কমান্ডার দিল ধমক।
— তোমার কাজ তুমি কর। চোখ কান বন্ধ কইরা ডিউটি করবা
— জি স্যার।
গাফফার ডিউটি করে কিন্তু মন খচ খচ করে। আজ আরো কয়েকটা নতুন মেয়েকে আনা হয়েছে। তারপরও চোখ কান বুজে ডিউটি করে। চাকরী বলে কথা জীবনের প্রথম চাকরী টাকা পয়সার মুখ দেখছে। বাড়িতে বাবা খুশী এদ্দিনে ছেলের একটা গতি হয়েছে। কিন্তু মা নাখোশ। ছেলে মুক্তি না হয়ে রাজাকার কেন হল? এই বিষয়টা অবশ্য সহজ সরল গাফফারের মাথায় খেলে না। সে যা বুঝেছে মুক্তি হলে ( মানে মুক্তি বাহিনী) কোন লাভ নাই বেতন ভাতা নাই ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিতে হবে, খালি যুদ্ধ করতে হবে। দেশের জন্য মরতে হবে। কি দরকার বাবা এইতো সে ভাল আছে নিজের গ্রামে, দেশও আছে …চাকরীও আছে। বেতন পাচ্ছে। রাজাকার কমান্ডার বলেছে ঠিকমত ডিউটি করলে বেতন নাকি আরো বাড়বে।
গাফফার তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তার পাশের বাড়ির মেয়েটিকে তার ভাল লাগে। আগে বলতে সাহস হয় নি। এবার বলা যায় চাকরী বাকরী আছে ক্ষমতাও আছে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন অঘটন ঘটলো। ডিউটি করছিল গাফফার। দেখে অন্য রাজাকাররা তিনটা মেয়ে কে ধরে আনছে তার মধ্যে তার পাশের বাড়ির মেয়েটিও আছে। তার মাথা কাজ করে না। সে ছুটে যায় কমান্ডারের কাছে।
— স্যার … এইডা কি করলেন?
কমান্ডার কি বুঝে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় গাফফারকে। গাফফারের মাথার ভিতর যেন একটা বিস্ফোরন ঘটে। সে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে বসে রাজাকার কমান্ডারকে তারপর পাগলের মত এলো পাথারি গুলি করতে থাকে। ঐ মেয়ে তিনটা বেঁচে যায়, তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় কিন্তু রাজাকার গাফফারকে গুলি করে মারে আর্মীরা তবে তার এলাপাথারী গুলিতে দুজন রাজাকার তিনজন পাকিস্তানী আর্মী মারা যায়।