মানলাম। তা হলে এসব কী ঘর ভর্তি? এগুলোর ব্যাখ্যা?
অনুমান করাটা কঠিন নয়। সম্ভবত বেন ডিলনও অবগত সাদা পোশাকের ভূতটা সম্বন্ধে। হয়তো বউয়ের মৃত্যুটা আত্মহত্যা ভাবছে না ও। কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ভূতটাকে দায়ী করে বসে আছে কি না, তা-ই বা কে জানে! আর নয় তো সত্যিই ইন্টারেস্ট আছে ওর অকাল্টে।
কিন্তু গেল কোথায় লোকটা?
ভূত শিকারে, ঠাট্টা করল আয়ান। যেখানেই হোক, গেছে। তবে যাওয়ার আগে বাড়ি বন্ধ করে দিয়ে গেছে কিন্তু!
মানে?
মেঝেতে আলো ফেলল আয়ান। এটা দেখেছিস? লবণের চক্রটার কথা বলছে।
পবিত্র সার্কেল! লবণ নাকি?
জানিস তা হলে! …আরও আছে। বিড়ালের চোখ।
ওয়াক! ছিহ!
সত্যি সত্যি ভাবছিস নাকি? ক্যাটস আই পাথরের কথা বলছি। ঘরের কোনায় কোনায় রেখেছে… ভূতপ্রেত যাতে কাছে ঘেঁষতে না পারে!
হুম। তো, আমাদের এখন করণীয় কী?
আমরাও বেরোব।
ভূত শিকারে?
ধরতে পারলে বিখ্যাত হয়ে যাব কিন্তু। টিকেট কেটে দেখতে আসবে লোকে। এক ধাক্কায় বড়লোক।
ঠাট্টা না, সিরিয়াসলি বল।
সিরিয়াসলিই। এখানে যে-মেয়েটার কথা লিখেছে, সে নাকি সিলভানিয়া ব্রিজের উত্তর মাথার দিকে থাকত। আঠারো শ পঞ্চাশ সালের দিকে মারা গেছে। কারণ- অজ্ঞাত। এখনও আছে বাড়িটা… পরিত্যক্ত।
ওখানেই যেতে চাস?
যেতে হবে। যদি কিছু পাওয়া যায়, মিলবে ওখানেই।
শিয়োর তুই?
সাশা যে আমাদের কালপ্রিট না, অনেক আগেই শিয়োর হয়েছি সেটা। ওই ছবিগুলো দেখে। ডিলনের রিসার্চ যদি সঠিক হয়, ভূতটার প্রথম শিকার তা হলে আঠারো শ ছেষট্টিতে। তারপর থেকে একের পর এক খুন হয়ে আসছে সাশা মারা যাওয়ার পর হাইওয়েতে প্রথম টার্গেট হলো চার্লি। কিন্তু তার আগে যে সতেরো জন মারা গেছে, ওদেরকে কে মারল?
আর কেনই বা?
জানতে পারলে ভালো, না জানলেও ক্ষতি নেই। মেয়েটার জীবনে কী ঘটেছে, জানা নেই আমাদের। হতে পারে, কোনও পুরুষমানুষ মৃত্যুর কারণ হয়েছিল ওর। হাইওয়েতে সম্ভ্রম হারিয়েছিল মেয়েটা। ইজ্জত লুটে খুন করেছে ওকে লোকটা, অথবা আত্মহত্যা করেছে মেয়েটা। বদলা নিচ্ছে। তারপর থেকে। পুরুষদের প্রতি রাগ। বছরের। বিশেষ একটা সময়ে শিকার খোঁজে সে। হয়তো ওই দিনই মারা গিয়েছিল। সবই অনুমান।
তোর অনুমান ঠিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, বলল বিমূঢ় হয়ে যাওয়া আয়মান। এখন আমারও মনে হচ্ছে, সাশা না মেয়েটা। খেয়াল আছে, ব্রিজের উপরে এক পলকের জন্য চেহারা দেখেছিলাম ওর? জেরিকো, হেরাল্ডে সাশার যে ছবি ছেপেছে, মেলে তার সঙ্গে?
আরে, তাই তো!
তা ছাড়া… পোশাকটাও তো মিলছে না! ভূতটার পরনে কী ছিল? মনে হয় না, সোয়া শ বছর আগের পোশাক?
আরিব্বাস! ভাইয়ের পিঠ চাপড়ে দিল আয়ান। তুই তো কামাল করে দিয়েছিস!
শুরু হয়ে যাক তা হলে… অপারেশন: সাদা ভূত!
অ্যাহ! মুখ বিকৃত করল আয়ান। নাম পেলি না আর!
বাংলায় এর থেকে ভালো নাম বের কর দিকি!
এর থেকে হাজারটা ভালো নাম পাওয়া যাবে, বৎস! বাংলা এমন এক ভাষা…
কথা বাড়াচ্ছিস কেন খামোকা? তুই একটা নাম দিয়ে দে না!
একটুখানি চিন্তা করল আয়ান। হাসি ফুটেছে ওর মুখে।
অপারেশন: শ্বেতবসনা।
ক্যয়া বাত! ক্যয়া বাত! ক্যয়া বাত! বাদশাহী ভঙ্গিতে তারিফ করল আয়মান, সুরটা কৌতুকের। এখনই রওনা হবি?
একটু পরে। গোসলটা সেরে নিই আগে।
ভুলেই গেছিলাম। নাক টিপে ধরল আয়মান। ডলা দিয়ে নিস ভালো মতো। যে গন্ধ, ভূত পালাবে!
নয়
ভুতুড়ে বাড়ির জংলা কোর্ট-ইয়ার্ডে এসে ঢুকল ইমপালা। থেমে দাঁড়াল। ইঞ্জিন বন্ধ করল আয়ান। আলোগুলোও নিভিয়ে দিল। সেই পুরানো প্রবাদ: আলো থাকলে ভূত দেখা দেয় না। ওরা তো মোলাকাত করতেই চায়।
গাড়ি থেকে বেরোল দুই ভাই।
এটাকে তো আমার ওয়েস্টার্ন আমলের র্যাঞ্চহাউসের মতো লাগছে!
লাগাটাই স্বাভাবিক। সোয়া শ বছর আগে ওয়েস্টার্ন যুগই ছিল।
অয়, চিটাগাঙের আঞ্চলিক ভাষায় বলল আয়মান। কথা বলার সময় প্রায়ই শব্দটা ব্যবহার করেন ওদের বাবা। এখন কী তা হলে?
ঢুকব।
ভিতরে?
তো, আর কোথায়?
না, মানে…
ভয় পেলে থাক। বাইরেই থাক তুই।
পরিষ্কার ব্ল্যাকমেইল। মুখ গোঁজ করল আয়মান। না, যাব।
নিশুতি রাত।
ভাঙা দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল দু জনে। টর্চ রয়েছে সঙ্গে, তার পরও যথারীতি আলো জ্বালছে না। লাগছেও না। জ্যোৎস্না আছে। চাঁদের আলো ঢুকছে বাড়ির ফাঁকফোকর দিয়ে।
প্রথমেই বাধা। মাকড়সার জাল। সারা বাড়িতেই জাল বিছিয়ে রেখেছে আটপেয়েগুলো। জড়িয়ে যাচ্ছে হাতে-মুখে। ভীষণ অস্বস্তিকর অবস্থা।
ওদের পায়ের চাপে মড়মড় করছে কাঠের মেঝে। আওয়াজে চমকে লুকাচ্ছে টিকটিকি-হঁদুরের দল।
ফটাস করে শব্দ হলো একটা। আয়মানের পায়ের তলায়। পড়ে অক্কা পেয়েছে একটা তেলাপোকা।
ঝট-পট আওয়াজ হচ্ছে। বাদুড় নাকি?
বিষ্ঠা আর পেচ্ছাপের গন্ধে টেকা দায়।
আচমকা হাঁচি মারল আয়মান। স্তব্ধ রাত্রি ভেঙে পড়ল। যেন খান-খান হয়ে।
আয়ানের মনে হলো, পৃথিবীর সমস্ত মুর্দার ঘুম বুঝি ভেঙে গেছে ওই আওয়াজে।
প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আয়মানকে লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিল পেতনিটা। মাকড়সার মতো ঝুলছিল এতক্ষণ কড়িকাঠ থেকে। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে লক্ষ করছিল ওদের কার্যকলাপ।
কিন্তু ছেলেটার কাছে পৌঁছোবার আগেই ঘটে গেল আরেক ঘটনা। কোত্থেকে ছুটে এল আরেকটা প্রেত! ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রথমটার উপরে!