লাগছে না।
স্টিভ রজারসের ছবিটা সরিয়ে নিয়ে নতুন একটা ছবি দেখানো হলো বিচারককে। এটা?
ব্রেট।
আরেক জন ভাড়াটে?
সে?
ভাগলওয়া।
…
…
কিছুক্ষণ পর। রুষ্ট চেহারা নিয়ে সাউণ্ডপ্রুফ কামরাটা থেকে বেরিয়ে এল বব। ঘড়েল মাল শালা!
ওয়ান-ওয়ে মিরর দিয়ে সবই দেখেছে জনরা। স্পিকারের মাধ্যমে শুনতে পেয়েছে ভিতরের কথাবার্তা।
ছেড়ে দিতেই হচ্ছে! মলিন চেহারা করে বলল লেফটেন্যান্ট।
বিশ
ঘুটঘুঁটে অন্ধকার রাত। বিচারকের খামারের অদূরে, এক ঢিপির আড়ালে ঘাপটি মেরে রয়েছে জন আর বব। নাইটভিশন দুরবিন দিয়ে নজর রাখছে বাড়িটার উপরে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই ঘটল না।
তোর কথা শুনে আসাই উচিত হয়নি এখানে! গজগজ করল বব। শরীরের অর্ধেক রক্তই তো নাই করে দিল ভ্যাম্পায়ার শালারা!
পরে অন্য রকম মনে হবে। এখনও দৃঢ় বিশ্বাস আমার, ওখানেই রয়েছে ব্রেট বেকার।
বেকার মানুষ, কই আর যাবে!
যাচ্ছি। উঠে দাঁড়াল জন আড়াল ছেড়ে।
যাচ্ছি মানে?
গিয়ে দেখি। কাছাকাছিই থাকিস। কাভার দিস কিছু হলে। বন্ধু আপত্তি করার আগেই বাড়িটার দিকে হাঁটা দিল। জন।
.
ঘোঁত-ঘোঁত করছে শুয়োরের দল। সতর্ক পদক্ষেপে গোটা বাড়ি এক চক্কর ঘুরে এল জন। ঘুমিয়ে পড়েছে বাড়ির মালিক। নাকি নেই বাড়িতেই? রাতটার মতোই অন্ধকারে ডুবে আছে একতলা দালানটা।
দেখা দরকার। ভিতরে ঢুকবে বলে মনস্থির করে ফেলল। জন। আগের চাইতেও ধীর পায়ে এগোল ও বন্ধ দরজাটার দিকে।
নব ঘুরিয়ে বুঝল, দরজাটা খোলা। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিগুণ সতর্ক হয়ে উঠল ওর সমগ্র সত্তা।
পুরোপুরি অন্ধকার ভিতরটা। এবং নীরব। না… ক্ষীণ শব্দ আসছে… বোধ হয় কিচেন থেকে। ক্ষীণ আলোও বুঝি রয়েছে ওখানে।
পায়ে পায়ে এগোল জন রান্নাঘরের দিকে।
ব্রেট বেকার। একটা বিয়ারের ক্যান হাতে। এক চুমুকে অবশিষ্ট তরলটুকু শেষ করল বেকার, মুঠোর মধ্যে ভর্তা বানাল ক্যানটাকে, তারপর ঠাস করে মেঝেতে আছাড় মারল ওটা। নীরব রাতে পীড়াদায়ক ভাবে কানে আঘাত করল শব্দটা।
পুলিস তুমি? একটুও যেন অবাক হয়নি বেকার। আগন্তুককে দেখে। যেন জানতই, আসবে জন।
না, পুলিস নই আমি, সাবধানে উত্তর দিল জন। একজন সাধারণ নাগরিক।
আমার মতোই।
আরেকটা বিয়ারের জন্য রিফ্রিজারেটরের কাছে হেঁটে গেল বেকার। খোলা ফ্রিজের আলোয় দেখা গেল, ঊর্ধ্বাঙ্গে শার্ট নেই লোকটার। বাহু আর বুক উল্কি আর কাটাকুটিতে। ভর্তি। নতুন কাটাগুলো। শরীরের এখানে-সেখানে ছোপ ছোপ রক্ত।
নতুন একটা ক্যান খুলল বেকার। দীর্ঘ একটা টান দিল বিয়ারে।
খুঁজছ কাউকে? জিজ্ঞেস করল হাতের চেটোয় মুখ মুছে।
এই বাড়ির মালিককে। কোথায় সে?
সর্বত্র।
কথাটা বিশ্বাস করেই যেন চারপাশে তাকাল জন। তারপর নিজের বোকামি বুঝতে পেরে বলল, বুঝলাম না তোমার কথা।
নিজেকে ঈশ্বরের সমকক্ষ মনে করে শালা। ভাবে, সর্বত্র বিরাজমান সে।
নাগালের মধ্যে লাইটের সুইচ পেয়ে টিপে দিল জন।উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠল কিচেন।
পালানোর রাস্তা নেই তোমার, বেকার।
পালাব না। কাঁধের উপর দিয়ে ঠাণ্ডা বিয়ার পিঠে ঢালল বেকার। বাড়ি ফিরে যেতে চাই আমি।
বাড়ি!
জেলখানা।
এত কাটাকাটি হলো কীভাবে?
ও কিছু না। কাজ করতে গিয়ে কেটে গেছে।
নতুন কথা খুঁজছে জন। ট্যাঙ্কের ভিতরের ছোকরাকে তুমিই খুন করেছ?
ওকে এবং আরেক জনকে।
স্টিভ রজারস?
বুলস আই!
মালিক কোথায় তোমার? আবার জিজ্ঞেস করল জন।
সে আমার মালিক নয়! রাগে জ্বলে উঠল ব্রেট বেকারের ভাসা ভাসা চোখ জোড়া।
এই বাড়ির মালিক… কোথায় সে?
শুয়োরের বাচ্চাকে জায়গামতো পাঠিয়ে দিয়েছি! চিবিয়ে চিবিয়ে বলল বেকার।
হঠাৎ কেমন একটা আশঙ্কা হলো জনের। তুমি কি… তুমি কি…
বিচিত্র হাসল বেকার। অসুস্থ মানুষের ভীতিকর হাসি।
কেউ কি জানে, আমি একজন সাইকোপ্যাথ?
বিমূঢ় হয়ে পড়ল জন। সাইকোপ্যাথরা বুঝতে পারে না যে, সাইকোপ্যাথ তারা! বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল ও।
আমি ব্যতিক্রম, গর্বিত কণ্ঠ বেকারের।
.
আধঘণ্টা পর। পুলিসে লোকারণ্য শুয়োরের খামারটা। ক্রাইম-সিন টেপ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। একের পর এক ছবি নিচ্ছে পুলিসের ফোটোগ্রাফাররা। ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে আলোকিত করা হয়েছে খামারবাড়ির চতুর্দিক।
হাতকড়া পরিয়ে পুলিস-কারে তোলা হয়েছে বেকারকে। আক্ষেপ করল লেফটেন্যান্ট, পালের গোদাটা পালিয়ে গেল!
মনে হয় না, এখন নিশ্চিত জন।
মানে?।
ঘোঁত-ঘোঁত শব্দ ভেসে আসছে খোয়াড় থেকে। কানে বাজছে জনের: শুয়োরের বাচ্চাকে জায়গামতো পাঠিয়ে দিয়েছি!
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও। খোঁয়াড়ের মাটিটা খোঁড়ার ব্যবস্থা কর।
জানে ও, কী পাবে ওখানে। নিশ্চিত, ভুল নয় ওর অনুমান।
ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার
মিলল না কল্পনার সঙ্গে।
বিশাল বাড়িটা। এতটাই বড় যে, নার্ভের উপর চাপ দিচ্ছে রীতিমতো।
ভেবেছে, গতানুগতিক ধাঁচের অ্যাপার্টমেন্ট দেখবে। কিন্তু না। দুর্গ-টাইপ।
বিষণ্ণতার প্রতিমূর্তি যেন।
ছমছমে। দেখলে মনে হয়, না জানি কত রহস্যের নীরব স্বাক্ষর দেয়ালে-দেয়ালে।
এই রহস্যময়তার ছিটেফোঁটাও ধারণ করতে পারেনি অবশ্য দ্য ভ্যাঙ্কুভার সান-এর ব্রড শিট।
খবরের কাগজটা আরও একবার চোখের সামনে ধরল। লামিয়া।
সাদামাটা বিজ্ঞাপনটা। যেমনটা হয় দৈনিক পত্রিকার বাড়ি ভাড়াবিজ্ঞপ্তিগুলো।