খুব সম্ভব নিজস্ব কোনও তরিকা অনুসরণ করছে খুনি, ধারণা করল জন। শিকারকে তিলে তিলে হত্যা করাটা হয়তো তারই অংশ।
হয়তো কারও কাছ থেকে নির্দেশ পাচ্ছে খুনি, ধারণা জোগাল স্মিথ।
কার কাছ থেকে? জিজ্ঞাসা ববের।
এমন কেউ, একমত জন স্মিথের সঙ্গে। নিজের হাত যে-লোক নোংরা করতে চায় না। কিংবা অভ্যস্ত নয় খুনোখুনিতে। সে কারণে দাগী কাউকে বেছে নিচ্ছে এ কাজের জন্য।
এই সব দাগী আসামীদের চলাফেরার গণ্ডিটা খুব সীমিত, বাতলে দিচ্ছে স্মিথ। সামাজিক ভাবে অনেকটা একঘরে তারা।
ও কী বলতে চাইছে, বুঝতে পারল জন। বোঝাতে চাইছে, কোথায়-কোথায় হানা দিলে হদিস পাওয়া যেতে পারে কালপ্রিটের।
আঠারো
বেশ কয়েকটা জায়গায় টু মেরে এবারে একটা বার-এ ঢুকেছে। জন আর বব। স্মিথ আর ফ্রিম্যান অপেক্ষা করছে বাইরে, গাড়ির মধ্যে।
নজর রাখার জন্য কোণের একটা টেবিল দখল করল। জন। বব গেল কাউন্টারে। হালকা বাতচিতের ফাঁকে কোনও তথ্য আদায় করা যায় কি না বারটেণ্ডারের কাছ থেকে, সে উদ্দেশ্যে।
বন্ধুর টেবিলে এসে বসল সে কিছুক্ষণ পর। স্বাভাবিক কৌতূহলের ভান ধরে ভিতরে উপস্থিত প্রত্যেককে জরিপ করছে জন। খেয়াল করছে, কে আসছে বাইরে থেকে।
নাহ, লাভ হলো না! হতাশা ব্যক্ত করল বব। মাথামোটা বারম্যানটা হয় কিছুই জানে না, না হয় বলবে না। কিছুই।
দ্বিতীয়টা হলে তো মাথামোটা বলা যায় না ওকে, নাকি? রসিকতা করল জন। এই মাত্র ঢোকা এক কাস্টমারকে অনুসরণ করছে ওর চোখ জোড়া।
কোনও দিকে না তাকিয়ে সোজা কাউন্টারে গিয়ে বসল ব্রেট বেকার।
অনেক তো দেখলাম, আশা নেই লেফটেন্যান্টের কণ্ঠে। মনে হয় না, কাজ হবে এভাবে। এর চে রিলিজ আর প্যারোল রেকর্ডগুলো চেক করাটাও বেটার।
আপাতত না। চলো, উঠি।
টেবিল ছাড়ল ওরা দুজনে। দরজার দিকে পা বাড়িয়েছে, জনের চোখ আটকে গেল একটা আয়নায়। দেখতে পেল; ওর পিঠের উপর সেঁটে রয়েছে মাত্র আসা লোকটার চোখ জোড়া।
.
বার-এর বাইরে, গাড়ির মধ্যে বসে রয়েছে ওরা।
কেন মনে হচ্ছে তোর, ওই লোককেই খুঁজছি আমরা?
ঘাড়ের পিছনটা খেয়াল করেছিস ওর? উল্কিটা?
না। তো?
একটা সংখ্যা ওটা। চোদ্দ। সাধারণত সংখ্যা দিয়ে ট্যাটু করানোর প্রবণতা থাকে কয়েদিদের।
এবারে আর জনের কথা ফেলতে পারল না বব।
.
ওরা যখন কথা বলছে, সেসময় ব্রেট বেকারও আলাপ সারছে। ফোনে ওর নিয়োগকর্তার সঙ্গে।
হাবেভাবে আইনের লোক মনে হচ্ছে ওদের, জানাল বেকার। কী করব, স্যর?
ভয় পেয়ো না। লক্ষ করেছে ওরা তোমাকে?
করেছে, মনে হয়।
হুম। যদি সন্দেহ করে থাকে তোমাকে, ধরে নিয়ে যাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আর যদি না নেয়, বুঝতে হবে, ফলো
করবে। ওকে। যা বলি, শোনো…
.
আর অপেক্ষা করতে পারছি না! বলল ধৈর্যহারা বব।
বেরোয় না কেন ব্যাটা? স্মিথ, দেখো তো!
সন্দেহভাজনের বর্ণনা পেয়েছে, গাড়ি থেকে নেমে বার-এ ঢুকল অফিসার। ডিটেক্টিভ ফ্রিম্যানও সঙ্গ নিয়েছে তার।
কোথাও দেখতে পেল না ওরা লোকটাকে। শেষে রেস্টরুম চেক করতে গিয়ে টের পেল, ভেন্টিলেটর গলে পালিয়ে গেছে পাখি।
.
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বার। এখনও বসে রয়েছে ওরা গাড়িতে। ফিরে এসে জানিয়েছে স্মিথরা, ফাঁকি দিয়েছে ওদের লোকটা। এতে আরও নিশ্চিত হয়েছে জন, ওই লোকই জড়িত খুনগুলোর সঙ্গে।
এখনও বসে আছি কী জন্য? বিরক্তি ঝরাল বব।
বোঝার জন্য। হাসল জন ঠোঁট টিপে।
কী বোঝার জন্য?
ওই যে, দেখ… এক-এক করে বেরিয়ে গেছে সবাই বার থেকে। অথচ একটা গাড়ি রয়ে গেছে এখনও বাইরে। কার ওটা? বারটেণ্ডারের? অসম্ভব। এত দামি গাড়ির মালিক হতে পারে না, লোকটা। তা হলে কি আমাদের সন্দেহভাজন? সেটাও পানি পায় না হালে… যদি না অন্য কারও গাড়ি ব্যবহার করে থাকে সে। ওকে যে নিয়ন্ত্রণ করছে, ধর, যদি তার গাড়ি হয়?
চোরাই গাড়িও তো হতে পারে। ভুয়া হতে পারে নাম্বারপ্লেট।
দেখা যাক।
উনিশ
গাড়িটার রেজিস্ট্রেশন যেখানে নিয়ে এল ওদের, সেটা একটা শুয়োরের খামার।
খামার-মালিকের দরজায় নক করল লেফটেন্যান্ট। দরজা খুলে যেতেই ব্যাজ দেখাল। লেফটেন্যান্ট বিলি বব থর্নটন। সিয়াটল পিডি। কয়েকটা প্রশ্ন করার ছিল আপনাকে।
অফিসারের ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে চাইল বিচারক।
ব্যাক-আপ টিম নিয়ে এসেছে বব।
আসুন, স্মিত হেসে বলল বাড়ির মালিক।
তার চেয়ে ভালো হয়, আপনিই যদি আমাদের সাথে আসেন।
.
সিয়াটল পাবলিক সেফটি বিল্ডিং-এর ইন্টেরোগেশন রুমে জেরা করা হচ্ছে বিচারককে।
চেনেন একে? টেবিলের উপর দিয়ে একটা ফোটোগ্রাফ ঠেলে দিল লেফটেন্যান্ট।
রক্তাক্ত স্থির চিত্রটা দেখল বিচারক। চিনি। স্টিভ। লাস্ট নেম জানি না, জিজ্ঞেস করিনি কখনও। শুয়োরের দেখাশোনা করার জন্য ভাড়া করেছিলাম ওকে। লোকটা ড্রিফটার, এবং অ্যালকোহলিক।
তারপর? কোথায় এখন সে?
ছবিতে। আঙুল দিয়ে দেখাল বিচারক। মারা গেছে, মনে হচ্ছে।
রসিকতা করবেন না। আমি জানতে চাইছি, ওকে কি, তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আপনি? থাকত কোথায় লোকটা?
যত দিন আমার ওখানে কাজ করেছে, থাকত আমার সাথেই। তারপর কোথায় গেছে, বলতে পারব না।
আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, আপনার এই ভাড়াটে একটা খুনের সাথে জড়িত। ক্রিস্টোফার মার্কাস নামে এক লোককে খুন করেছে সে। নামটা কি পরিচিত লাগছে?