এটাও কি রজারসেরই কাজ? আপন মনে মন্তব্য করল গোয়েন্দা। মারা যাওয়ার আগেই করেছে জঘন্য কাজটা?
আরও কাছাকাছি হলো জন। পরিচয় জানা গেছে পায়ের মালিকের?
হুম, জেনেছি। লোয়েল কানিংহ্যাম। অকালে বিপত্মীক হয়েছে ছোকরা।
প্যাকেজের সিল-ছাপ্পড় থেকে কী জানা গেল?
নাথিং। ড্রপ-বক্সে ফেলে যেতে পারে কেউ প্যাকেটটা, বলছে ওরা।
সুন্দর ভাবে কাটা হয়েছে পা-টা, যেন প্রশংসা করছে, এমনি ভাবে বলল প্যাথলজিস্ট। ঠিক প্রথম তিনটার মতো। একটু পরে মন্তব্য করল, কাটার সময় জীবিতই ছিল ভিকটিম।
আমার মনে হয় না, রজারস করেছে এই কাজ, মন্তব্য জনের।
তা হলে কে? প্রশ্ন ববের।
অন্য কেউ। মোজাটা দেখি তো!
ময়লা মাখা মোজাটা এগিয়ে দেয়া হলো ওকে।
একটা খাম তুলে নিল জন। মুখটা ফাঁক করে ববের হাতে তুলে দিল খামটা। গ্লাভস পরতে পরতে বলল, আমার ধারণা, ভিকটিম এখনও জীবিত।
মোজাটা তুলে নিল ও ট্রে থেকে। মুখ-খুলে-ধরে-রাখা খামটার ভিতরে ঝাড়তে লাগল ধুলো।
.
ল্যাব। ধুলোর নমুনাটুকু একটা টিউবের মধ্যে ঢোকাল ড্যানিয়েলা শর্ট। এর সঙ্গে দরকারি লিকুইড যোগ করে ছিপি এঁটে সেন্ট্রিফিউজে ঢুকিয়ে রাখল টিউবটা।
পনেরো
মারগট রোবির স্বামীর কোর্ট রেকর্ডগুলো জোগাড় করতে পেরেছে স্মিথ। ডকুমেন্টগুলো ফ্যাক্স করে দিচ্ছে, এই ফাঁকে জনকে ফোন করল অফিসার।
হ্যাঁ, স্মিথ, নিজের বেইসমেন্ট থেকে বলল জন।
পেয়েছ?
পেলাম এই মাত্র। চোখ বোলাচ্ছি এখন। থ্যাঙ্কস আ লট, ম্যান!
আমিও দেখে নিয়েছি এক নজর। মার্কাস নামের ওই জিভ কাটা পুলিস আর মারগট রোবির মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কার করেছি আমি! সাবেক ওই পুলিস অফিসার ছিল মহিলার স্বামীর কেসটার প্রসিকিউশন উইটনেস। লোকটার দেয়া সাক্ষ্য ডগ রোবির বিপক্ষে যায়।
মিথ্যা সাক্ষ্য, খুব সম্ভব। এজন্যই ডকুমেন্টগুলো দেখতে চাইছিলাম আমি।
তা হলে কি ব্যাপারটা এই যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার অপরাধে লোকটার জিভ কেটে পাঠিয়ে দেয়া হলো অন্যায়ের শিকার মারগট রোবির কাছে? কিন্তু পাঠালটা কে? উদ্দেশ্যটা কী লোকটার?
আমার ধারণা, নিজের থিয়োরি গুছিয়ে এনেছে জন। কেউ একজন চাইছে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে!
ষোলো
মোজা থেকে পাওয়া স্যাম্পলের অ্যানালাইসিস নিয়ে লেফটেন্যান্টের অফিসে দেখা করল ড্যানিয়েলা। সেসময় কিছু একটা নোট করছিল বিলি বব থর্নটন।
সয়েল কম্পোজিশন বলছে, মাটিটা এসেছে জলা অঞ্চল থেকে! উত্তেজিত স্বরে বলতে লাগল মহিলা। কীটনাশক কিংবা রাসায়নিক সারের অস্তিত্ব নেই মাটিতে। বদলে পেয়েছি ক্র্যানবেরি বীজের নমুনা। বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছি না, আমি যেই সিদ্ধান্তে এসেছি, সেটা হচ্ছে: এমন এক ক্র্যানবেরি ফার্ম থেকে এসেছে এই মাটি, যেখানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরে।
শোনো, স্মিথ (এই মাত্র ঢুকেছে সে লেফটেন্যান্টের চেমবারে)! কী বলছেন উনি!
আপনারা কি শাহলান কাউন্টির নাম শুনেছেন?
শাহলান কাউন্টি? বলল বব। নিশ্চয়ই!
এক্ষুনি একটা টপোগ্রাফিক ম্যাপ চাই আমার! ওই ধরনের খামার কোথায়-কোথায় থাকতে পারে, দেখাতে পারব হয়তো।
.
সম্ভাব্য সাইটগুলোর একটিতে চলছে চিরুনি-অভিযান। ধুব ধুব শব্দে কয়েকটা হেলিকপটার চক্কর কাটছে আকাশে। পিপডের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে শেরিফের ডিপার্টমেন্টের ডেপুটিরা। দল আরও ভারি করেছে। লেফটেন্যান্ট বব ও তার লোকজন। আদেশ-নির্দেশ, হাঁকডাকে গোটা অঞ্চল সরগরম।
মাটির দিকে চোখ রেখে অনুসন্ধান করছিল লেফটেন্যান্ট; জুতোর নিচে, ঘাসের মধ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিকতা গোচরে আসতে থামতে হলো ওকে।
তাজা টায়ারের-দাগ সোজা চলে গেছে সামনের দিকে। একজন ডেপুটিকে নিয়ে এগোল ও সেদিকে।
কিছু দূর যেতে-না-যেতেই পুরানো এক অয়েল স্টোরেজ ট্যাঙ্কের সামনে থমকে দাঁড়াতে হলো ওদেরকে।
ট্যাঙ্কের পাশের হ্যাঁচটা খোলার চেষ্টা করল লেফটেন্যান্ট। না পেরে পাশের ঝালাই-করে-জুড়ে-দেয়া মই বেয়ে উঠে গেল ট্যাঙ্কের ছাতে। উপরের গোল ঢাকনাটা খুলতে পারল এবারে।
বোটকা, গুমট একটা গন্ধ ধাক্কা মারল লেফটেন্যান্টের নাকে। চেহারায় অস্বস্তি নিয়ে ভিতরের আবছা অন্ধকারে উঁকি দিল অফিসার।
অন্ধকার কিছুটা সয়ে আসতে মৃতপ্রায় এক যুবককে আবিষ্কার করল ভিতরে। কাটা পা নিয়ে পড়ে আছে রক্তের মধ্যে।
পাওয়া গেছে! পাওয়া গেছে! ডেপুটির উদ্দেশে হাঁক ছাড়ল লেফটেন্যান্ট। স্ট্রেচার… স্ট্রেচার আনতে বলো জলদি!
ওয়্যারলেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল শেরিফের ডেপুটি।
অস্বস্তি উপেক্ষা করে ট্যাঙ্কের ভিতরে নামল থর্নটন। চোখ খোলা আহত যুবকের। গায়ে হাত দিয়ে উপলব্ধি করল, আহত নয়, নিহতই হয়েছে লোকটা!
সতেরো
মর্গ।
কতক্ষণ হলো, মারা গেছে লোকটা? জানতে চাইল বব।
বেশিক্ষণ না, জবাব দিল কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। ঘণ্টা দুই হবে। কিছুটা কমও হতে পারে।
আরও আগেই মারা যেত, মন্তব্য করল প্যাথলজিস্ট। রক্ত পড়াটা বন্ধ করতে পারায় বিলম্বিত হয়েছে মৃত্যুটা।
ভিকটিমের বেল্ট দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল রক্তক্ষরণ, নিজেকেই শোনাল যেন বব।
কল্পনা করতে পারেন ওই সময়ের অনুভূতিটা? মমতায় ভরে উঠেছে ড্যানিয়েলা শর্টের নারী-হৃদয়। আপনি জানেন, মারা যাচ্ছেন আপনি! ইশশ!