ঠোঁটের এক পাশ দিয়ে হাসল জন। না, বব। আমি যা করেছি, সেটা কোনও তুকতাক নয়। ইনটুইশন বলতে পারিস। আর কিছুটা সিক্সথ সেন্স।
কিন্তু… এই যুগে… নিষ্প্রাণ হাসল বব। যাক গে! তোর কথাই ঠিক হয়েছে। সম্পর্ক আছে লাশ দুটোর মধ্যে! ভবঘুরেটার নখের নিচে অন্য মানুষের টিসু পেয়েছে। প্যাথলজিস্ট। মার্কাসের টিসু, জন! ব্লাড টাইপ মিলে গেছে। ডিএনএ রিপোর্ট পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। কিন্তু আর সন্দেহ নেই আমার। ভবঘুরে আর মার্কাস… শিকারি আর শিকার ওরা দুজনে!
কিছু জানা গেল ভবঘুরেটার ব্যাপারে?
হ্যাঁ। স্টিভ রজারস নাম লোকটার। প্রাক্তন কয়েদি।
কেসটা কী ওর?
একটা না, অন্তত হাফ ডজন বার ফাটকে ঢুকেছে লোকটা। সশস্ত্র ডাকাতি… গাড়ি চুরি… ইত্যাদি-ইত্যাদি। ছাড়া পেয়েছে পাঁচ বছর আগে।
তারপর আর অপরাধ করেনি?
না। একদম ক্লিন রেকর্ড। এমন কী প্যারোল অফিসারের দেয়া একটা ডেটও মিস করেনি।
বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে বব। অসন্তুষ্ট মনে হচ্ছে জনকে। সম্ভবত স্টিভ রজারসের সুনাগরিক হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না ও!
মিলছে না, বব! বলেই ফেলল শেষমেশ।
তো, আমি কী করব, চাঁদ! যা সত্য, তা-ই তো বললাম তোকে।
মাথা-গরম একটা লোক… বার-বার আইন ভাঙছে, বার-বার ধরা খাচ্ছে… এত সহজে সাধু হয়ে যাবে! না, বব, জন্ম-ক্রিমিনাল লোকটা।…অন্য কিছু আছে এর মধ্যে!
বারো
বিচারক-ভবন।
ব্রেট বেকারের বাম পায়ে প্লাসটার করছে বিচারক। কাজটা শেষ করে হাত ধুতে গেল লোকটা।
এবারের অভিযুক্ত তরুণ এক ছোকরা। আর আমাদের মক্কেল হচ্ছে- বাষট্টি বছরের এক বুড়ি। ছোকরাটার কারণে নিজের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং-এর সিঁড়ি থেকে পড়ে মারাত্মক চোট পেয়েছে মহিলা। তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণও মিলেছে অভিযোগের। সত্যিই লাথি মেরে বুড়িকে সিঁড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে ছোকরাটা। …ঠিক আছে, এবার রায় ঘোষণার পালা আমার।
পরনের কালো আলখেল্লাটার মস্তকাবরণ মাথায় তুলে দিল বিচারক। বেকার, শুরু করল। তোমার উপরে নির্দেশ রইল অভিযুক্তের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার। নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যাবে ওকে তুমি, তারপর হাঁটু থেকে আলাদা করে। ফেলবে ডান পা-টা।
জো আজ্ঞা, ধর্মাবতার!
কাজটা করার সময় চেতনা থাকে যেন ছেলেটার। নিজ চোখে নিজের পাপের পরিণতি দেখুক, তা-ই চাই আমি।
চিন্তা করবেন না। সত্যিকারের বিচার কী, হাড়ে-মাংসে ৫ টের পাবে কুত্তার বাচ্চাটা!
উঁহু। ভুলেও কোনও রাগ রাখবে না পাপিষ্ঠের প্রতি। প্রতিশোধের আদালত নয় এটা- ন্যায় বিচারের আদালত। পাপ যে করবে, আমার আদালতে শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কখনওই এর কোনও নড়চড় হবে না।
আপনি মহান! মহা নায়ক আপনি! ভক্তিতে গদগদ কণ্ঠে বলল বেকার। আপনার জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্য অশেষ কৃতজ্ঞ এই অধম। জীবনটা সার্থক হলো আমার!
.
কালো রাত্রির পটভূমিতে নির্জন হাইওয়ে। পুরোপুরি জনহীন। নয় অবশ্য। নকল প্লাসটার-করা-পা নিয়ে রাস্তায় উপস্থিত রয়েছে বেকার। নিজের অচল হয়ে পড়া গাড়ির পাশে ধৈর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কারও অপেক্ষায়।
শিগগিরই অপেক্ষার অবসান হলো ওর। দূরে থাকতেই বুঝতে পারল, আসছে ওর কাক্ষিত জন। থামাতে হবে হাল ফ্যাশনের গাড়িটাকে। অথচ পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারে, সে-ভয়টাও আছে। অতএব, ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল বেকার, মাথার উপরে দু হাত তুলে অভিনয় করছে সাহায্যপ্রার্থীর। প্রবল বেগে নাড়াচ্ছে হাত দুটো।
কাজ হলো। খিস্তি দিয়ে থামতে বাধ্য হলো তরুণ ছোকরা। ।
তেরো
ধূসর, স্যাঁতসেঁতে একটা দিন। খুব বেশি আলো নেই আজ। রাস্তার বাতিগুলো জ্বলছে এখনও।
সিয়াটল পোস্ট অফিসটা শহরের পুরানো অংশে। বিষণ্ণ চেহারার দালানটার ভিতরে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। রোজকার নিয়মে। কনভেয়র বেল্টে চেপে একের পর এক প্যাকেট আসছে, আর করা হচ্ছে এক্স-রে। মনিটরে চোখ রাখার দায়িত্বে কম বয়সী এক মহিলা। প্রতিটি প্যাকেট চেক করছে, ফাঁকে ফাঁকে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে। প্যাকেটের ভিতরে কী-কী রয়েছে, ফুটে উঠছে। মনিটরে।
মেন ইন ব্ল্যাকের তিন নম্বর পার্টটা দেখেছ? জিজ্ঞেস করল পুরুষটি। দেখলাম কাল রাতে। যা একখান টুইস্ট এ দিয়েছে না শেষটায়!
দেখতে হবে। উইলি আছে এটাতে?
আরে, ওর জন্যই তো দেখা!
তা হলে তো দেখতেই- ইয়াল্লা, কী এটা! সটান উঠে দাঁড়িয়েছে মহিলা। বেল্ট পিছাও! বেল্ট পিছাও! বলল সে চিৎকার করে।
নগ্ন আতঙ্ক নিয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা।
প-পু-পা!!!
সুপারভাইজারকে ডাকো! সুপারভাইজারকে ডাকো!
৩০২ গলার রগ-টগ ফুলিয়ে গোটা অফিস মাথায় তুলল মহিলার কলিগ।
চোদ্দ
মর্গ। পোস্ট অফিসে পাওয়া পা-টা নিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছে প্যাথলজিস্ট লেফটেন্যান্ট, জন, ডিটেক্টিভ, স্মিথ- ওরাও উপস্থিত রয়েছে মর্গে। দাঁড়িয়ে আছে। এগজামিনেশন টেবিল ঘিরে।
কাটা পা-টা থেকে মোজাটা খুলে আনল প্যাথলজিস্ট। লেফটেন্যান্ট থটনের এগিয়ে দেয়া ট্রেতে রাখল মোজাটা।
আশা করছি, জমে শক্ত হয়ে যায়নি মাংস, মনের ভাবগুলো মুখে প্রকাশ করছে প্যাথলজিস্ট। ছত্রিশ থেকে এক শ ঘণ্টার মধ্যে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে পা-টা, বলল কিছুক্ষণ পর।