অস্থির ভাবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আয়মান। কেউ দেখে ফেললে কী যে হবে, সেটা নিয়েই শঙ্কিত।
এক মিনিটও লাগল না তালা খুলতে। দরজার কান মুচড়ে ধরে কবাট ঠেলল আয়ান। সিধে হলো নিচু অবস্থা থেকে। ভাইয়ের দিকে চেয়ে হাসছে সবজান্তা শমসেরের হাসি। আয়।
মাথা খারাপ!
এক দিকের কাঁধ ঝাঁকাল আয়ান। ক্লিপটা পকেটে পুরে ঢুকে পড়ল ভিতরে।
অতএব, ঢুকতে হলো আয়মানকেও। ঢুকে, তড়িঘড়ি করে লাগিয়ে দিল দরজা।
জ্বালানো হলো না আলো। সাবধানের মার নেই। একটা পেনসিল-টর্চ বের করেছে আয়ান পকেট থেকে। অন্ধকারের বুক চিরছে সেটা দিয়ে। তবে আরেকটা কাজ করেছে তার আগে। পরদাগুলো টেনে দিয়েছে ভালো মতো।
খালি নয় কটেজটা। তবে এই মুহূর্তে কামরাতে নেই ভাড়াটে। বাইরে কোথাও গেছে হয়তো।
আয়মানও একটা টর্চ হাতে নিয়েছে। এগিয়ে গেল এক দিকের দেয়ালের দিকে। ছোট-বড় কাগজ সাঁটা সারা ঘরের দেয়ালে। ম্যাপ। পেপার-কাটিং। ছবি। এ ছাড়া রয়েছে হাতে লেখা নোট। টেপ দিয়ে লাগানো একটা ক্লিপিং দেখল। ডাইনি নিধনের উপরে। জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে দুই মহিলাকে। মরটিস ডান্স বা মরণনৃত্যের উপরে আরেকটা কাটিং। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ভীত লোকজনের দিকে শিং বাগিয়ে তেড়ে যাচ্ছে মনুষ্যকঙ্কাল-সদৃশ এক প্রাণী। আরও আছে শয়তান আর দানবের উপরে একটা কলাম। ডাকিনীর উপরে। একসোরসিজম নিয়ে। এ ছাড়া রয়েছে বই, পত্রপত্রিকা। প্রচুর। টেবিলে। অগোছাল বিছানায়। ফ্লোরে উঁই করা। কয়েকটা নাম পড়ল দুই ভাই। ইনফিনিটি স্টপস হিয়ার। দে আর কামিং। তৃতীয় নয়ন। মিথ। আরও নানা হাবিজাবি। অতিপ্রাকৃত ব্যাপারস্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। লোকটার। সিম্বলজির উপরেও বই দেখল কয়েকটা। ( মৃদু শিস দিয়ে উঠল আয়ান। বান্দা দেখা যাচ্ছে ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার। কিউরিয়াস মাইণ্ড ওঅণ্টস টু নোউঃ হু ইজ হি?
টেবিলের দেরাজ খুলল ও টান দিয়ে। আলো ফেলল ভিতরে। একটা ডায়েরি দেখা যাচ্ছে। একটা জপমালা। বের
করেই ওলটাল দিনলিপির মলাটটা। লেখকের নামটা দেখে শিস দিল আবার। এবার একটু জোরে।
কী পেলি? বলতে বলতে কাছে এল আয়মান।
কাকতালীয় ব্যাপার।
দেখি-দেখি।
দেখাল, ওকে আয়ান। ডায়েরির প্রথম পাতায় নীল কালিতে লেখা: বেনজামিন ডিলন।
বেন ডিলন! অফুটে বলল আয়মান। এখানে কী করছে। লোকটা?
সেটাই তো কথা! আয়, উত্তরটা বের করে ফেলি।
খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল অদ্ভুত এক ব্যাপার। জুতোর। নিচে কিচকিচ করে উঠতে আবিষ্কার করল ওরা, লবণ দিয়ে চক্র তৈরি করা হয়েছে মেঝেতে।
অনেকখানি বোঝা হয়ে গেল আয়ানের।
দেখ-দেখ, আয়ান! কামরার এক প্রান্ত থেকে ডাকল আয়মান।
এগিয়ে দেখল আয়ান। কাগজ সাঁটা বড় একটা বোর্ড।
উপরের দিকে গোটা গোটা হরফে লেখা: সেনটেনিয়াল হাইওয়ে ভিকটিমস। ডাবল-আণ্ডারলাইন করা লেখাটার। নিচে। তার নিচে মানুষের ছবি কয়েকটা। বোর্ড-পিন দিয়ে আটকানো। কোনওটা ফোটোগ্রাফ, কোনওটা বই থেকে কাটা। প্রতিটা ছবির সঙ্গে রয়েছে ক্যাপশন। ১. পড়ল ও লেখাগুলো। জিম ক্যারি, ২১, ১৮৬৬। পিটার পারকার, ২৭, ১৮৭১। জেমস ক্যামেরন, ১৯, ১৮৭৯। জোহান জেরেমি, ২১, ১৮৮২। টম ক্রুজ, ৩০, ১৮৯০। স্যাম মিলফোর্ড, ২২, ১৮৯৮। ম্যাট জেরাল্ড, ৩০, ১৯০৫। ডিক … লরেন্স, ২৯, ১৯১৬। শন মারফি, ২৫, ১৯২৮। কেভিন বেকন, ৩১, ১৯৪১। মেলভিন ক্লার্ক, ১৭, ১৯৫০। কলিন ফার্থ, ২৮, ১৯৫১। ডিন কেইন, ২২, ১৯৬৩। রিচার্ড হোয়াইটসাইড, ২৪, ১৯৭১। টমি জেন, ২৬, ১৯৮২। বিল প্যাক্সটন, ২৬, ১৯৯৭। বার্নার্ড হিল, ৩২, ২০০৭। সব শেষেরটা- চার্লি অ্যালান, ২৮, ২০১৪। যারা-যারা মারা গেছে, সবার নাম সিরিয়ালি সাজানো। মৃত্যুর সময় এবং বয়স সহ। সব ক জন পুরুষ।
আয়ান যখন ছবিগুলো দেখছে, আরেক দিকে সরে গেছে তখন আয়মান। একখানা পেণ্টাকল দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ওর। কাঠের তৈরি। দেয়ালের একটা হুক থেকে ঝুলছে জিনিসটা।
একটা আর্টিকেল রয়েছে কবচটার তলায়। ইন্টারনেট থেকে প্রিন্ট-আউট নেয়া। কাছে গিয়ে পড়ল হেডিংটা। হাইওয়েতে আতঙ্ক।
আয়ান! দেখে যা! ডাকল আয়মান। ভাই কাছে আসতে বলল, আমাদের সাবজেক্ট!
চট করে লেখাটা পড়ল আয়ান। হাতে আঁকা একটা ছবিও রয়েছে। নির্জন রাস্তায় শিকারের অপেক্ষায় রয়েছে এক নারী।
ঘাপলা নাম্বার এক, ঘোষণা করল ও গম্ভীর গলায়। এটা আমাদের সাবজেক্ট না!
না?
না। তবে ইনডাইরেক্টলি সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে।
কীভাবে বুঝলি, সম্পর্ক নেই?
তার আগে বল, সাবজেক্ট কী আমাদের।
ওই মেয়েটা… সাশা।
কবে মারা গেছে?
পাঁচ বছর আগে।
এবার এটা দেখ। ফিচারটার নিচের দিকে আঙুল ঠেকাল আয়ান। কলামটার বাইরে ট্রেস রেখে দিয়েছে কমপিউটার- কবে, কোন পত্রিকা থেকে প্রিন্ট নেয়া হয়েছে। এখানে বলছে, লেখাটা সতেরো বছর আগের।
ভালো রকম একটা ধাক্কা খেল আয়মান। চার্লির মত্যর জন্য যদি সাশার প্রেতই দায়ী হয়, তা হলে এটা কে? সতেরো বছর আগে তো মেয়েটা জিন্দাই ছিল!
বিহ্বল দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকাল আয়মান।
আর, তোর কথাই যদি ঠিক ধরি, তা হলে সাশা আমাদের সাবজেক্ট না, সাবজেক্ট এটা!
বলতে চাস, লোকে সাশা আর এই মেয়েটাকে গুলিয়ে ফেলেছে?
তা-ই তো মনে হচ্ছে। মরার সময় সাশার পরনে ছিল সাদা গাউন। আর এই মেয়েটাও… লোকের ধারণা, সাদা পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়। আর আমার ধারণা, এজন্যই ঘর ছেড়েছে বেন ডিলন… পাড়া-পড়শির কথা থেকে বাঁচতে। লোকে তার বউকে দুষ্ট প্রেত ভাবে, সেটা নিশ্চয়ই অজানা নয়। তার।