কেন, বলো তো!
না, মানে… অফিসের একজনের সাথে লাঞ্চ করছিলাম আজকে। যাদের কাউন্সেলিং করছে মহিলা, তাদের মধ্যে এক হাউসওয়াইফ রয়েছে, যে কি না কিছু দিন আগে একটা কাটা জিভ পেয়েছে ডাকে আসা পার্সেলে!
হ্যাঁ। মারগট রোবি।
আমার ওই কলিগ অবশ্য নাম বলেনি ওই মহিলার। …কিছু জানো নাকি মিসেস রোবির ব্যাপারে? মানে, ওর অতীত সম্পর্কে?
পুলিস কথা বলেছে মহিলার সাথে। না, উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু পাইনি আমরা।
তা-ই? দেখো তো, এই তথ্যটা কাজে লাগে কি না! ডাকাতির কারণে বারো বছর আগে জেলে গিয়েছে মহিলার স্বামী। এদিকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে লোকটার বিরুদ্ধে, এই মর্মে আপিল করেছিল অভিযুক্ত।
ফলাফল?
দুঃখজনক। বিষয়টার সুরাহা হওয়ার আগেই জেলের ভিতরে খুন হয় লোকটা!
মাথা ঝাঁকিয়ে তথ্যটা হজম করল জন। কৃতজ্ঞ হেসে স্ত্রীর হাত ধরল ও। থ্যাঙ্ক ইউ।
যাক। উদ্ভাসিত হেসে হাঁফ ছাড়ল মনিকা। ভাবছিলাম, অনধিকার প্রবেশ করে ফেললাম কি না এখানে।
আমার রাজ্যে সব সময়ই স্বাগত তুমি! খুশি মনে অনুমতি দিয়ে দিল জন।
ফোনটা বেজে উঠল এসময়। তুরিত উঠে রিসিভ করতে। গেল জন।
ইয়াহ?
জন! বব বলছিলাম, বলা হলো ওপাশ থেকে।
দশ
বব আর জন যখন মর্গে প্রবেশ করল, ইতোমধ্যে বন্ধুকে ব্রিফ করার কাজ প্রায় সারা লেফটেন্যান্টের।
যেন-তেন ভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল লাশটাকে, দুই মহিলা আর ওদের কুকুরটা যে মৃত দেহ আবিষ্কার করেছে, সেটার ব্যাপারে বলছে বব। ঢেকে দেয়া হয়েছিল লতাপাতা ছড়িয়ে। কি জানিস, জিভটা কাটা এই লোকের! মনে হচ্ছে, বড় একটা ব্রেক পেলাম, জন!
শবদেহটার জন্য অপেক্ষা করছে ওরা, এসময় চাকা লাগানো খাটে করে আরেকটা লাশ নিয়ে ঢুকল এক মর্গ সহকারী। পলকের জন্য ওটার প্রতি কৌতূহল বোধ করল জন। লাশের দুটো পা-ই হাঁটুর নিচ থেকে গায়েব। ডিটেক্টিভ ফ্রিম্যান মর্গে পৌঁছোতে নতুন আসা লাশটার কথা ভুলে গেল জন।
আসছে জিভ কাটা, জানাল গোয়েন্দা। এক্ষুনি আমাদের সাথে যোগ দেবেন প্যাথলজিস্ট।
বলতে-না-বলতেই দু জন মর্গ-সহকারীকে নিয়ে হাজির হলো প্যাথলজিস্ট লোকটা। জঙ্গলে পাওয়া লাশটা এসেছে। ওদের সঙ্গে।
যাকে খুঁজছি আমরা, এ-ই কি সেই লোক? শুরুতেই কাজের কথা পাড়ল লেফটেন্যান্ট।
সব কিছুই ম্যাচ করছে, সন্তোষজনক জবাব দিল প্যাথলজিস্ট। শ্বেতাঙ্গ। পুরুষ। পা দিয়েছে পঞ্চাশের ঘরে। ভালো স্বাস্থ্যের ইঙ্গিতও পেয়েছি। খুলিতে ভোতা বি। আঘাতের ফলে হয়েছে মৃত্যুটা… হ্যাঁ, ছুরি-চাকুর আঘাতগুলোর আগেই, খুব সম্ভব।
ভালো করে দেখার জন্য ঝুঁকে পড়ল বব। রাবারের একটা গ্লাভ এক হাতে গলিয়ে লাশের ডান হাতটা দেখতে লাগল ও। ওদিকে অন্য হাতটা পরীক্ষা করছে জন।
আত্মরক্ষার ফলে সৃষ্ট ক্ষত নেই কোনও, জানাচ্ছে। প্যাথলজিস্ট।
ওই লাশটা কার? সিধে হয়ে চোখের ইঙ্গিত করল জন। আবারও ওর মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে একটু আগে আসা অন্য লাশটা।
ভবঘুরে-টুরে নাকি? প্যাথলজিস্টকে জিজ্ঞেস করল বব। সেরকমই তো মনে হচ্ছে কাপড়চোপড় দেখে।
হ্যাঁ। ঘাড় দোলাল প্যাথলজিস্ট। ভোরের দিকে পাওয়া গেছে লাশটা… পেয়েছে রেলওয়ে পুলিস। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে লোকটার। সম্ভবত চলন্ত মালগাড়িতে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে হড়কে গেছে পা, কাটা পড়েছে চাকার নিচে।
ফি-বছর দুটো-তিনটে করে ঘটবেই এমন ঘটনা! গাল কুঁচকে উঠল লেফটেন্যান্টের। জনের উদ্দেশে বলল, দেখতে চাস নাকি লাশটা?
সায় জানিয়ে পা বাড়িয়েছে জন সেদিকে, এসময় প্রবেশ অফিসার স্মিথের।
জিভ কাটার পরিচয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জানাল অফিসার। ক্রিস্টোফার মার্কাস। সিয়াটল পুলিস অফিসার… প্রাক্তন।
পুলিস? বিস্মিত হয়েছে জন।
সাত বছর আগে রিটায়ার করেছে। ডিভোর্সড। তর্কবাজ হিসাবে কুখ্যাতি ছিল লোকটার। ওর আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলব আমরা।
প্রথম লাশটার কাছে পৌঁছে গেল জন। পরীক্ষা করতে লাগল একটা হাত তুলে নিয়ে।
খানিক বাদেই বলল ও, সম্পর্ক আছে দু জনের মধ্যে!
মানে? বিরাট এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা দিয়েছে লেফটেন্যান্টের মুখের চেহারায়।
বলছি, সম্পর্ক আছে এই দুটো লাশের মধ্যে।
ভবঘুরে আর মার্কাস? চোখ জোড়া কপালে তুলেছে। লেফটেন্যান্ট। কী বলছিস, জন! একটা খুন… আরেকটা অ্যাকসিডেন্ট! বিস্তর ব্যবধান! ।
আপাতত আর কোনও মন্তব্য করল না জন। আবারও ঝুঁকে পড়েছে ও পা হারানো লাশটার উপরে।
এগারো
হ্যাঁ, জন?
স্মিথ?
হ্যালো!
শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?
ফড়ফড় করছে লাইনে। গাড়িতে আছি তো! কেটে যেতে পারে যে-কোনও মুহূর্তে!
শোনো, পুরানো কিছু কাগজপত্র দরকার আমার।
কীসের?
মারগট রোবির স্বামীর অ্যাফিডেভিট, পিটিশন সহ আর। যা-যা পেয়েছে, সেসব নিয়ে কমপিউটারে বসেছে জন। বলল, ডগ রোবির কোর্ট রেকর্ডগুলো। হার্ড কপি ছাড়া পাওয়া যাবে না এগুলো।
ওকে, জন, ব্যবস্থা হবে… যদি অনুমতি পাই।
ঠিক আছে, রাখলাম।
.
ফোন রাখতেই বেজে উঠল ডোরবেল।
বাইরে, দরজার দিকে পাশ ফিরে সূর্যালোকিত চারপাশ দেখছে বিলি বব থর্নটন।
দরজাটা খুলে বেরিয়ে এল জন।
পাঁচ শ বছর আগে হলে ডাইনি হিসাবে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হতো তোকে! নিশ্চিত বিশ্বাসের সুরে রসিকতা করল বব।