প্যারোল অফিসার নাকি? চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ভিতরে ফের ফেরত যাওয়ার কথা আমার।
দুটো খুন, একঘেয়ে স্বরে বলে চলেছে বক্তা। একজন টাকোমা-র এক মেয়ে। গত বার এই খুনের দায়ে জেল খাটা অবস্থায় পেয়েছিলেন প্যারোল। আরেক জন এক হোমোসেক্সয়াল। রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিল আপনাকে লোকটা। সতেরো বছর বয়স তখন আপনার। অন্যদের জেলখানার ভিতরেই খুন করেছেন। মাল আছে, বলতে হবে, আপনার মধ্যে! …বিশ্বাস করুন, পৃথিবীকে কিছু দেয়ার আছে। আপনার, মিস্টার বেকার। সেটা যাতে পারেন, সেটাই চাইছি আমি। আরও বড় কিছুর জন্য জন্ম হয়েছে আপনার মতো লোকেদের।
আমার দায়িত্ব নিচ্ছেন আপনি? চাইছেন যে, ওখানে আর ফিরে না যাই আমি?
আমি সাহায্য না করলে কাস্টডিতে নিয়ে যাবে ওরা আপনাকে। কিছু দিনের মধ্যেই, খুব সম্ভব। কিন্তু আমি যদি সাহায্য করি…
বুঝেছি। আপনি একজন লইয়ার, রাইট?
না, মিস্টার বেকার। আমি একজন বিচারক।
সাত
রাত্রি। অন্ধকারে ডুবে আছে শুয়োরের খামারটা। ওটার মালিক স্বঘোষিত সেই বিচারক।
খোয়াড়ের ভিতরে ঘোঁত-ঘোত করছে শূকরগুলো। নিজ বাড়িতে আদালত বসিয়েছে বিচারক।
খবর এসেছে, আদালতের কঠোর নির্দেশ লঙ্ঘন করা হয়েছে, তথাকথিত বিচারক অভিযোগ তুলল নৈর্ব্যক্তিক ভাবে।
সত্যি কথাটা জানা দরকার আপনার, মহামান্য বিচারক! বলে উঠল দোষী রজারস। জ্যান্ত অবস্থায় কারও জিভ কেটে নেয়া যে কত কঠিন একটা কাজ, যে না করেছে, বুঝবে না সেটা! কারও সন্দেহ না জাগিয়েই কবজা করতে চেয়েছিলাম লোকটাকে। কিন্তু রক্তপাত একেবারে এড়ানো যায়নি পার্কিং লটে। জিভটার জন্য যখন চেষ্টা করছিলাম, গোঁ-গোঁ চিৎকার করছিল হারামজাদা!
তোমার উলটোপালটা কাজের জন্য আদালত কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হলো, বুঝতে পারছ? ঠাণ্ডা স্বরে বলল বিচারক।
মার্জনা চাইছি, ধর্মাবতার! মাথা হেঁট করল রজারস। আর হবে না এরকম ভুল!
আমি কে বা কী, স্মরণ রাখবে সব সময়! শাসাল ভণ্ড বিচারক। লাশটার কী করেছ?
ওই তো… যা করা হয় সব সময়।
আমার ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্মত হয়েছিলে তুমি! রায় ঘোষণার সুরে বলল বিচারক। তুমি মনে করো, নিজের সাথে যেরকম প্রতারণা করো তুমি, আমার সাথেও লাগাতার মিথ্যা। বলে পার পেয়ে যাবে… ।
ল-লাশটা খুঁজে পাবে না কেউ! ভয় দেখা দিয়েছে। মিথ্যুক রজারসের দু চোখে। আ-আমার তৃ-তাড়া ছিল, ম্-ম্–
স্টিভ রজারস! স্বার্থপরের মতো কাজ করেছ তুমি! একে তো বিচার-প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে পালন করোনি, তার উপরে শাক দিয়ে মাছ ঢাকছ এখন। রাগে জ্বলছে বিচারকের চোখ দুটো। আদালতের দেয়া দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করলাম আমি তোমাকে!
ব্রেট বেকার প্রবেশ করল কামরায়।
বেকার… নামটা উচ্চারণ করল বিচারক। ওর দলে। লোকটা অন্তর্ভুক্ত হতেই সম্বোধন পালটে নিয়েছে দলনেতা–আপনি থেকে নেমে এসেছে তুমিতে।
নিজ হাতে বিশেষ এক ধরনের টুপি পরিয়ে দিল সে দলের নতুন সদস্যটির মাথায়। শাস্তিদাতার ভূমিকা পালন করতে হবে তোমাকে!
খপ করে রজারসের চুল ধরে শক্ত ঝাঁকি দিল বেকার। বহু দিন পর আবার মনের মতো কাজ পেয়েছে সে।
বাইরে, ঘোঁতঘোঁতানি বেড়ে গেল শুয়োরগুলোর।
আট
জঙ্গলাকীর্ণ একটা জায়গা। পায়ে চলা একটা পথ চলে গেছে বনের ভিতর দিয়ে। সেই পথ ধরে হেঁটে আগে-চলে-যাওয়া পোষা কুকুরটার দিকে এগোচ্ছে দু জন মহিলা। সেই সঙ্গে চলছে ডাকাডাকি।
কিছু একটা ধরা পড়েছে কুকুরটার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে। পাগলের মতো খুঁড়ে চলেছে ওটা এক জায়গার মাটি।
হারকিউলিস! হারকিউলিস! চলে আয়, বদমাস! চেষ্টা অব্যাহত রাখল দুজনের একজন। এলি!
চলে আয়, হারকিউলিস! বলছে অপরজন। নইলে পিটি আছে তোর কপালে। পাশের জনের দিকে চেয়ে হেসে বলল, না জানি কোন্ গন্ধঅলা হাড় পেয়ে গেছে ওখানটায়। …কী রে! কী হলো!
খোঁড়া থামিয়ে দিয়েছে কুকুরটা। মাটিতে পড়ে থাকা পচা পাতার দঙ্গলের মধ্যে অস্থির ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে শ্বাপদের দৃষ্টি। ভক করে একটা গন্ধ এসে ধাক্কা মারল দুই মহিলার নাকে।
ওরে, খোদা! নাক টিপে ধরেছে এক মহিলা। কী দুর্গন্ধ, বাপ রে, বাপ!
ওয়াক!
হারকি! ভাগাড় থেকে উঠে আয়, বলছি! এক্ষুনি উঠে আয়!
কী জানি টানাটানি করতে লেগেছে কুকুরটা। কিছু একটা ছিঁড়ে আনল দাঁত দিয়ে।
অ্যাই, ছোঁড়া! এলি না এখনও? কী পেয়েছিস তুই ওখানে!
ভালো করে দেখার জন্য কাছাকাছি হলো দুজনে।
ওসব পচা-গান্ধা, নোংরা জিনিস নিয়ে করবিটা কী, অ্যাঁ? বল তুই, কী করতে চাস!
অবাধ্য কুকুরটাকে ওটার আগ্রহের জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে সচেষ্ট হতেই মহিলার নাকে-মুখে হামলা চালাল, গোটা কতক মাছি। তার পরই প্রাতঃভ্রমণকারিণীর চোখে পড়ল অর্ধগলিত শরীরটা।
নাদিয়া! নাদিয়া! ডাকল মহিলা বান্ধবীকে। ভয়ানক ব্যাপার… দেখে যা!
ক্-কী! কী দেখব!
একটা লাশ!
নয়
নিজ বাড়ির বেইসমেন্টে কাজের মধ্যে ডুবে রয়েছে জন। কুরিয়ারে আসা চার ইন্দ্রিয়ের ছবিগুলো দেখছে এক মনে। একটা হার্ডবোর্ডে গেঁথেছে ও ছবিগুলো।
এসময় নেমে এল মনিকা নিচে।
জন?
হ্যাঁ, মনি। ডেস্কের উপরে উলটে রাখল জন বোর্ডটা। কিছু বলবে?
তেমন কিছু না। বলেই ইতস্তত করতে লাগল মনিকা। আম্… জন, সেরাতে পেয়েছিলে যে পার্সেলটা… কী নিয়ে কাজ করছ ইদানীং?