হ্যাঁ।
দেখা হবে।
পাঁচ
শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে… কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আঁধারে… যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ… মরিবার হলো তার সাধ…
মর্গের করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইনগুলো মনে এল জনের। আব্বুর কণ্ঠে অসংখ্যবার শুনে শুনে মুখস্থই হয়ে গেছে কবিতাটা। বাবা, বাংলাদেশি ওর, মা আমেরিকান।
এফবিআই-এর হমিসাইড এক্সপার্ট জনের বর্তমান এই কেসের সঙ্গে লাইনগুলোর পার্থক্য হলো: ভিকটিমরা কেউই এখানে সাধ করে মরতে যায়নি। মরতে ওদের বাধ্য করা হয়েছে।– জিভটা যে পরীক্ষা করছে, নামটা তার আজব। ড্যানিয়েলা শর্ট। নামে খাটো হলেও এবনি এই মহিলা যথেষ্ট লম্বা।– জন, বব আর আরেক জন অফিসারের উপস্থিতিতে পরীক্ষা থেকে পাওয়া ডাক্তারি তথ্যগুলো রিভিউ করা শুরু করল সে।
আগের পরীক্ষাগুলো থেকে আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, ভিকটিম জীবিত থাকা অবস্থায় শরীরের অংশগুলো কেটে আলাদা করা হয়েছে ওদের, বলল মহিলা। কিন্তু এটার ব্যাপারে পরীক্ষা বলছে ভিন্ন কথা। হতভাগ্য লোকটার মৃত্যুর পর কেটে নেয়া হয়েছে জিভটা।
স্ক্যালপেল ব্যবহার করে জিভের গা থেকে পাতলা এক টুকরো ছাল ছাড়াল পরীক্ষক।
পরীক্ষা এ-ও বলছে, আবার বলল মহিলা। যে অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে অঙ্গটা, যথেষ্ট ধারাল ছিল না সেটা। আবার এ-ও ধরে নেয়া যায়, এ ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে অঙ্গচ্ছেদ করতে পারেনি শিকারি। যেমনটা পেরেছিল আগেরগুলোর বেলায়।
আ… এমন কি হতে পারে না, নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ ছিল না লোকটার, বাতলাল বিলি বব থর্নটন। উত্তেজিত হয়ে ছিল কাটাকাটির সময়?
সন্দেহ আছে। উত্তেজিত অবস্থায় কাটলে যেরকম শক্তি প্রয়োগের চিহ্ন থাকার কথা, সেরকম কোনও আলামত পাইনি আমি। স্রেফ আনাড়ি হাতের কাজ এটা। একবারে কাটতে পারেনি… ভুল ভাবে শুরু করেও থেমে গেছে কয়েকবার, ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেল মহিলা। একাধিক চেষ্টার চিহ্ন রয়েছে জিভে।
জন? সহকর্মীর মত চাইল লেফটেন্যান্ট।
এটা একটা লক্ষণীয় বিষয়, বলল জন। প্রত্যেকবার যে সুন্দর ভাবে কাজ সমাধা করছে, এবারে তার ব্যতিক্রম হলো কেন?
আমিও সেকথাই ভাবছিলাম, বলে উঠল অপর অফিসার। নিজের ছকবাঁধা নিয়ম থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে না।
তো, এ থেকে আমরা কী ধরে নিতে পারি? অনিশ্চিত জিজ্ঞাসা লেফটেন্যান্টের।
হয়তো কোনও কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল খুনি, কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাটির ধারণা। হয়তো ভাবতে পারেনি সে, জিভটা কাটার আগেই মারা যাবে ভিকটিম।
কিংবা হয়তো একঘেয়েমিতে পেয়ে বসেছে লোকটাকে, ধারণা করল অপর অফিসার স্মিথ। যে কারণে সুচারু ভাবে কাজ সমাধার দিকে মনোযোগ নেই এখন।
তার মানে খুব বেশি তথ্য পাচ্ছি না আমরা, তাই তো? উপসংহারে পৌঁছোতে চাইছে বব।
জন দিল জবাবটা।
ওয়েল। আমরা যা জানছি, তা হলো, ধরা পড়া নিয়ে খুব একটা গা করছে না অপরাধী। নইলে আরেকটু সাবধান। হতো। তাই বলে কম বিপজ্জনক বলা যাবে না লোকটাকে। হয়তো সে আমাদের ধারণার চাইতেও বিপজ্জনক। চিন্তিত চেহারায় জিভটার দিকে চেয়ে রয়েছে ও। এমন কিছু জানতে পারিনি আমরা, যেটা থেকে নিশ্চিত হতে পারি, এটাই ওর শেষ অপকর্ম। আর সেটাই হচ্ছে ভয়ের কথা।
ছয়
রাত। রাস্তার এক কোনায় দাঁড়িয়ে লোকটি। উপরের ঠোঁটে বিচ্ছিরি এক কাটা দাগের মালিক সে।
একটু পরে সামনের এক কোণ ঘুরে থামল এসে এক প্রিজন ভ্যান। ব্রেট বেকার নামে এক লোক নেমে এল গাড়ি থেকে। রাস্তার উলটো দিকের বারটার উদ্দেশে পা চালাল লোকটা।
এরই অপেক্ষাতে ছিল এতক্ষণ কাটা দাগ। খানিক অপেক্ষা করে বারে ঢুকে পড়ল অনুসরণকারী।
হালকা মিউজিক বাজছে ভিতরে। কাউন্টারে একটা টুল দখল করে বিয়ার টানছে বেকার। টিভির খবরে চোখ ছিল বারটেণ্ডারের, নতুন কাস্টমারের আগমনে চোখ নামাল দরজার দিকে।
টারগেটের পাশে বসতে বসতে বারম্যানকে ড্রিঙ্কের সঙ্কেত দিল কাটা দাগের মালিক।
চরম ফালতু একটা রাত! স্বগতোক্তির ভান করল অনুসরণকারী।
কী আনব আপনার জন্য? সামনে এসে জানতে চাইল। বারটেণ্ডার।
খালি বৃষ্টি আর বৃষ্টি… পানি। এক গ্লাস পানি।
এ-ই? তাচ্ছিল্য ঝরল টেকো বারটেণ্ডারের কণ্ঠ থেকে।
একজন অপরিচিত লোকের সাথে যে টোনে কথাটা বললে তুমি, তার জন্য তোমাকে আমি ক্ষমা করলাম, হালকা সুরে বলল কাটা দাগ। সাবধান। খুব সাবধান। …মিস্টার বেকারের জন্য আরেক রাউণ্ড।
ধন্যবাদ। একটু অবাক হয়েছে বেকার। সম্মানটা কী জন্য, জানতে পারি?
জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, সেজন্য। নতুন করে আবার জীবনটা শুরু করতে যাচ্ছেন, সেজন্য। ব্রেট বেকারের চোখে প্রশ্ন ফুটতে দেখে বলল ঠোঁট কাটা, একটু আগেই ভ্যান থেকে নামতে দেখেছি আপনাকে। সন্তুষ্ট এবারে?
দেখুন, মিস্টার… আপনি যদি সমকামী হয়ে থাকেন…
যদি ভেবে থাকেন যে সমকামী? বলেই প্রসঙ্গটা পাশ কাটাল কাটা দাগ। পনেরো বছর বয়স থেকে শুরু করে ছ -ছ বার জেল খেটেছেন আপনি এ পর্যন্ত। কিন্তু সব মিলিয়ে এক বছরও হবে না, জেলখানার বাইরে কাটাতে পেরেছেন!
পুলিস নাকি আপনি?
এবারে ছাড়া পেলেন আট বছর পর, নিজের মনে বলে চলেছে কাটা দাগ। সহিংস ডাকাতির অভিযোগ, ঠিক? …এ পর্যন্ত যা-যা কাণ্ড ঘটিয়েছেন আপনি, বেশির ভাগই চেষ্টা করে দেখা হয়নি আমার! কেমন জানি দুঃখ ঝরল লোকটার কণ্ঠ থেকে।