ডেলিভারি ম্যান। বিগলিত হাসি দিল মহিলার উদ্দেশে। মিসেস মারগট রোবি?
জি!
একটা পার্সেল আছে আপনার জন্য।
বিভ্রান্ত দেখাল মিসেস রোবিকে। আর ইউ শিয়োর? কিন্তু আমি তো কোনও কিছু অর্ডার করিনি!
এই যে, দেখুন! হাতের প্যাকেজটা মহিলার দিকে বাড়িয়ে ধরল ডেলিভারি ম্যান।
বিড়বিড় করে ঠিকানা লেখা লেবেলটা পড়ল মিসেস রোবি। থ্রি এইট ফোর ফোর রিজেন্ট সেইন্ট সিয়াটল… ঠিকই তো আছে!
তা হলে এটা আপনারই। চওড়া হেসে জিনিসটা প্রাপকের হাতে বুঝিয়ে দিল কুরিয়ার সার্ভিসের লোক। গুড ডে, ম্যাম।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বসার ঘরের সোফায় এসে বসল মহিলা। কে… কী… ধারণার বাইরে। তবে হালকা কিছুই হবে ভিতরের জিনিসটা। আন্দাজে সময় নষ্ট না করে খুলেই ফেলল কার্টনের গা থেকে হলুদ টেপের লম্বা স্ট্রিপটা।
পার্সেল করা জিনিসটা সেলোফেনে মোড়া। মোড়ক না খুলেই কোলের উপর রাখল ওটাকে প্যাকেট থেকে বের করে। ছাড়াল সেলোফেনটা। ওটা ছাড়াও মোড়ানো হয়েছে ছোপ ছোপ লাল দাগে ভরা খবরের কাগজ। শেষ আবরণটাও সরাল মহিলা রহস্যময় জিনিসটার উপর থেকে।
অবাক হলো। কালচে-সবুজ কী জিনিস এটা! বোঝার জন্য চোখের কাছে নিয়ে এল ওটাকে। ৭ মাত্র গাড়িতে উঠেছে ডেলিভারির লোকটা, ধড়াস করে এক লাফ মারল ওর হৃৎপিণ্ড। ৩৮৪৪ নং বাড়ি থেকে ভেসে আসছে নারীকণ্ঠের নারকীয় চিৎকার। থামছেই না মহিলা, চিৎকার করেই যাচ্ছে… করেই যাচ্ছে!
তিন
গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকাল জন ডিউক। অদ্ভুত সজীব গন্ধ বাতাসে! আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছে। আশ্চর্য সবুজ দেখাচ্ছে প্রকৃতি। পৃথিবীটা যেন মিষ্টি এক স্বপ্নপুরী।
কিন্তু স্বর্গেও সাপ থাকে। রোবি পরিবারের এই বাড়িটার উপরে পড়েছে অশুভ কোনও ছায়া।
রেডিয়োর আওয়াজ কানে এল জনের। পড়শিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন পুলিসের লোককে। ও যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকল, তখনও কাঁপুনি থামেনি মিসেস রোবির। বমি-টমি করে জীবনীশক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেন। জনের দিকে একবার চেয়ে নিয়ে ফিরল মহিলা লেফটেন্যান্ট বিলি বব থর্নটনের দিকে। বুঝতে পারছি না আমি, আমার সাথেই কেন! আমি তো কারও ক্ষতি করিনি!
চিন্তা করবেন না। যে-ই এটা করে থাকুক, পার পাবে না! জনের দিকে তাকিয়ে আরও গম্ভীর হলো লেফটেন্যান্ট। জিভ!
লিভিং রুমের মেঝেতে পড়ে আছে কাটা অঙ্গটা। গোড়ার দিকটা টকটকে লাল। ভালো করে দেখার জন্য গোড়ালিতে ভর দিয়ে বসল জন। ও-ও বসল, ফোটোগ্রাফারেরও ছবি নেয়া সারা।
ডেলিভারি সার্ভিসের সাথে কথা হয়েছে? সিধে হতে হতে জানতে চাইল জন। চোখ ছোট্ট কার্টনটার উপরে।
হ্যাঁ, খুন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বন্ধুটিকে জানাল লেফটেন্যান্ট। প্রেরকের নাম আর ধাম- দুটোই ভুয়া। নাম্বারটাও।
বাইরে বেরিয়ে এল দুই বন্ধু।
মোটিভ পরিষ্কার না, তাই না? বলল জন।
পুরোপুরি ধোঁয়াশা। মহিলা এক খামারির হিসাব রক্ষকের কাজ করে। নির্ঝঞ্ঝাট চাকরি। বারো বছর আগে বিধবা হয়েছে। ছেলেমেয়েরা থাকে অন্য শহরে। তবে মায়ের সাথে যোগাযোগ আছে নিয়মিত। অজাতশত্রু বলতে যা বোঝায়, তা-ই হচ্ছে মিসেস রোবি। এমন একজন মহিলাকে…
মহিলার কি অ্যাফেয়ার আছে কারও সাথে?
না, নেই।
কাউকে সন্দেহও করে না?
বললাম তো- অজাতশত্রু।
মাথা দোলাল জন। বুঝতে পেরেছে।
একবার নয়, দু বার নয়, চার-চার বার ঘটল এমন ঘটনা! সখেদে বলল বব। এ পর্যন্ত চারজন পেল শরীরের কাটা অংশ। চোখ, কান, নাক, আর এখন জিভ
কে পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে- কিছুই বুঝে আসছে না!
পরের জন কী পাবে, আন্দাজ কর।
কী?
থিয়োরি ঠিক হলে- পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের পঞ্চমটা।
কল্পনা করে শিউরে উঠল লেফটেন্যান্ট।
আচ্ছা, এই চার প্রাপকের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে? জিজ্ঞেস করল জন।
উঁহু, একটুও না।
চার
কলিং বেল বাজছে। লাতিন সুর। দোতলা থেকে নেমে এল জনের ইতালিয়ান বউটা। সদর দরজাটার দিকে এগোতে এগোতে ভাবছে: এই সন্ধ্যা বেলা কে এল আবার!
অল্প বয়সী এক ডেলিভারি ম্যান। নীল উর্দি আর মাথায় একই রঙের বারান্দাঅলা ক্যাপ পরেছে। তেলতেলে হাসল। মনিকা লোরেনের উদ্দেশে।
পার্সেলটা নিয়ে বেডরুমে ফিরে এল মনিকা। বিছানায় আধশোয়া হয়ে নন-ফিকশন পড়ছিল জন, চোখ তুলল বই থেকে।
তুমি কি কিছুর অর্ডার দিয়েছ? স্বামীর উদ্দেশে জিজ্ঞেস করল মনিকা।
না তো! সামান্য উঁচু করল প্যাকেজটা মহিলা। তোমার নামে।
হঠাৎ করেই মনে পড়ল জনের। ও… মনে হয়, ববের কাছ থেকে। সশব্দে বন্ধ করল বইটা। দেখি! বলে হাতটা বাড়াল।
কী আছে এর ভিতরে?
নথি।
বাক্সটা নিয়ে নিচতলায়, ওর কাজের ঘরে চলে এসেছে জন।
অন্যান্য ডকুমেন্টের সঙ্গে এক গাদা ছবি পেল বাক্সে, নানান অ্যাঙ্গেল থেকে নেয়া চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা আর জিহ্বার।
অদ্ভুত কেস! প্যাথলজি রিপোর্ট বলছে, শিকারি ওর শিকারের শরীর থেকে জ্যান্ত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন করেছে।
ওগুলো। শুধু একটা বাদে।
ছবি আর কাগজগুলো দেখতে দেখতে কে ফোন করল জন।
চোখ-কান-নাক হারানো কারও রিপোর্ট আসেনি তোদের কাছে? লেফটেন্যান্টের সঙ্গে তুই-তোকারির সম্পর্ক ওর।
উঁহু।
সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া কেউ কেউ হয়তো পড়েছে গিয়ে স্যাডিস্টটার খপ্পরে…
সেটা আমিও ভেবেছি।
হুম… জিভটার ব্যাপারে বোধ হয় ফাইনাল রিপোের্ট পাওয়া যাবে কালকে?