তা হলে? ইংরেজি দেখছি যে!
বদলে গেছে। মানুষের পৃথিবীর সবচাইতে জনপ্রিয় ভাষা হচ্ছে ইংরেজি- সেই কারণেই।
যুক্তি আছে লোকটার কথায়।
আমার প্রশ্নটার জবাব দিলে না কিন্তু! খাতাটা নিয়ে নিশ্চয়ই কোনও পরিকল্পনা আছে তোমার। বড় কোনও পরিকল্পনা। যেভাবে মৃত্যুর পর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে চলেছ, খুব বেশি দিন লাগবে না মানুষের টের পেতে যে, একটাও স্বাভাবিক নয় মৃত্যুগুলো! …উদ্দেশ্যটা কী তোমার?
চুপ রইল অরণ্য।
জবাব দাও।
ওটাই চাইছি আমি… থামল ও এক সেকেণ্ডের জন্য। জানুক লোকে, কে আসলে নিয়ন্ত্রণ করছে এসব…
বুঝেছি। পৃথিবীর মনোযোগ চাও তুমি। তাই বলে এভাবে? অন্য ভাবেও তো পেতে পারো এটা। ভালো ছাত্র তুমি… লেখাপড়া শেষ করে বড় কিছু করবে…
বিরক্ত হয়ে হাত তুলল অরণ্য। ভালো মানুষের ভাত নেই দুনিয়ায়! …অপরাধীদের দুঃস্বপ্ন হতে চাই আমি। দুষ্টের। দমন করে সাব্বাসি কুড়াতে চাই পৃথিবীর। আপাতত বড় বড় ক্রিমিনালদের শায়েস্তা করছি। পরে ছোটখাটো অপরাধগুলোর দিকে নজর দেব। একজন দোষীও রেহাই পাবে না আমার হাত থেকে!
দুনিয়ার সব লোক সাফ করে ফেলবে, দেখছি… ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়! এভাবে তো নায়ক নয়, খল নায়ক হয়ে উঠবে একটা সময়!
ক্রুর হাসি দেখা দিল অরণ্যর ঠোঁটে। ভলতেয়ার-এর একটা কথা আছে: আ সোসাইটি গেটস আ ক্রিমিনাল ইট ডিজার্ভস। ক্রিমিনালদের জন্য ক্রিমিনাল হতে আপত্তি নেই আমার।
নিশ্চুপ মাউল।
পৃথিবীটা পচছে… এক্কেবারে পচে গেছে! এভাবে আর। চলতে পারে না। কিছু একটা করতেই হবে। …আর সেটাই করছি আমি।
আসলে… আমিও হাঁপিয়ে উঠেছি আপনার মতো। একঘেয়েমি কাটানোর সুযোগ হয়ে এসেছে ডায়েরিটা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
দু জনে দু জনের দিকে তাকিয়ে আছে।
চন্দ্রাহতের বিচিত্র এক টুকরো হাসি অরণ্যর মুখে।
নেমেসিস
সিয়াটল, ওঅশিংটন।
এ জায়গাটা একটা বোউলিং (বল গড়িয়ে দিয়ে বোতল সদৃশ বস্তুতে লাগাবার খেলা) অ্যালি। সাধারণত অ্যালি বলতে গলি বোঝানো হলেও বোউলিং অ্যালি মানে ক্লাব, যেখানে বিশেষ এই খেলাটার সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
ফ্যান্টম স্ট্রাইকারস নাম ক্লাবটার। খিদে পেলে খাওয়াটাও সেরে নেয়া যায়।
খেলে-টেলে ডাইনিং-এ এসে বসেছে ক্লাবের দুই সভ্য। ডিনার প্রায় শেষের দিকে। খেতে খেতে আলাপ করছে। দুজনে।
আরও লোক রয়েছে রেস্তোরাঁয়। সম্মিলিত কথাবার্তার বিজবিজ গুঞ্জন বাতাসে।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে দুর্যোগের হিমেল হাওয়া।
এই ট্রাম্প লোকটার ব্যাপারে যতই শুনছি, ততই অপছন্দ করছি লোকটাকে! খেদ প্রকাশ করল দুজনের একজন। এখন আবার শোনা যাচ্ছে, রাশার সাথে গোপন আঁতাত আছে ব্যাটার!
খুব খেয়াল করে, অ্যাণ্ডু। লোকটা কিন্তু এখন মিস্টার প্রেসিডেন্ট। এখন এসব বললে হবে? এত করে বললাম, ব্যাটাকে ভোট দিয়ো না… দিয়ো না… শুনলে আমার কথা?
ডিজার্ট এনে ওদের টেবিলে রাখল এক ওয়েইট্রেস।
থ্যাঙ্কস।
তরুণীর চোখ চলে গেল ডাইনিং-এর এন্ট্রান্সের দিকে। দাড়িঅলা এক যুবক এই মাত্র পদধূলি দিল রেস্টুরেন্টে। দেড়েলটা একটা টেবিল বেছে নিতে নিতে যন্ত্রচালিতের মতো নয়া অতিথির কাছে পৌঁছে গেল পরিচারিকা।
আপনার জন্য কী আনব, স্যর?
বিয়ার আর স্যাণ্ডউইচ দিয়ো… টুউনা সালাদ দেয়া।
মেয়েটা অর্ডার আনতে চলে গেলে অলস দৃষ্টিতে আশপাশে নিরীখ করল দাড়িঅলা। কী খুঁজছে, জানে। কিছুটা দূরের এক টেবিলে সেঁটে গেল যুবকের দৃষ্টি। বিশেষ একজনকে লক্ষ করছে ও, সেই দুই সদস্যের একজন। অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যবান লোকটা লাইম পাই খাচ্ছে তারিয়ে তারিয়ে। প্রতিটি গ্রাস মুখে পুরে চামচ চাটছে বাচ্চাদের মতো। দৃশ্যটা অশ্লীল। গা ঘিনঘিন করে। দূর থেকেও বোঝা যাচ্ছে, সবুজ হয়ে আছে লোকটার জিভ। ড্রিঙ্ক আর স্যাণ্ডউইচ চলে এলেও মনোযোগ টুটল না যুবকের।
টার্গেটের উপর থেকে চোখ না সরিয়েই বিয়ারের বোতলে চুমুক দিল ও।
ডিজার্ট শেষ করেছে ওরা। অ্যালিসিয়া মাশাদো-র সেক্স-টেপটা দেখেছ? কানে এল যুবকের।
ওহ… ওটা! স্মৃতি রোমন্থন করে উজ্জ্বল হয়ে উঠল মোটার সঙ্গীর চেহারা। দারুণ জিনিস।
ভেনেজুয়েলার মেয়েরা এত সুন্দরী হয় কেন, বলতে পারো?
ঈশ্বরের, পক্ষপাতিত্ব ছাড়া আর কী! মন্তব্য দ্বিতীয় জনের।
বিল নিয়ে এসেছে ওয়েইট্রেস। শেষ কাস্টমারের টেবিলের দিকে তাকাতেই ভ্রু দুটো কুঁচকে উঠল ওর। হাওয়া হয়ে গেছে দেড়েল। স্যাণ্ডউইচটা, মনে হচ্ছে, ছুঁয়েও দেখেনি। তবে বড় একটা নোট চাপা দেয়া বোতলের তলায়। খাবারের দামের চেয়ে বেশিই হবে।
.
দোতলায় অ্যালি, নিচের ফ্লোরে গ্যারাজ। বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে নিজের গাড়ির দিকে চলেছে মোটা খেলোয়াড়। ওর সঙ্গীটির বাসা কাছেই, হেঁটেই চলে যাবে।
দূরে কোথাও বাজ পড়ল জোরে। সেই আওয়াজে কেঁপে উঠল জনহীন গ্যারাজ।
নিসান-এর দরজায় চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিতেই পিছনে কারও উপস্থিতি টের পেল গাড়ির মালিক। দাড়িঅলা এক ছোকরা। অল্প আলোতে চেহারাটা পরিষ্কার না।
ইভনিং, ভদ্রতাবশে বলল ক্লাব-সদস্য।
জবাবটা এল শারীরিক ভাবে। দু হাতে ধরা ভারি বলটা সজোরে মোটুর মাথায় নামিয়ে আনল যুবক। এক বাড়িতেই জগৎ আধার।
দুই
দরজার বেলটা বাজছে। এই অসময়ে আবার কে এল! হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বেরোল গৃহকত্রী।