ব্যাঙের ছাতার মতো হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনও রাজনৈতিক দলের নামকাওয়াস্তে মিছিলের মতো দলে হালকা এই গোষ্ঠীটা। তবে কথায় আছে: সূর্যের চেয়ে বালি গরম। এরই মধ্যে শাহবাগে মানববন্ধন-টন্ধন করে ফেলেছে ওরা। পুলিশী নির্যাতনে আসামি মরল কেন, জবাব চাই
ভাবে অরণ্য: এরা কি আকারে-প্রকারে তা হলে মেল শোভিনিস্ট? সম্পূর্ণ নিরপরাধ যে-মেয়েটি অবিচারের শিকার হলো, সেটা ওদের চোখে পড়ছে না এক বিন্দু!
অবস্থা বেগতিক দেখে সংবাদ-সম্মেলন ডাকতে বাধ্য হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এক। বাক্যে উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা বিরুদ্ধবাদীদের সন্দেহ। হিকমতের মৃত্যুর জন্য দায়ী নয় পুলিস…
মরল কেন তা হলে?
সেটারও সদুত্তর দিতে পারছেন না তারা। যত দোষ পুলিস ঘোষদের তাই মিডিয়া সামলাতে কালঘাম ছুটে যাওয়ার অবস্থা।
পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে লাশ… যদিও সাংবাদিক সহ অনেকেরই মনে সংশয়: আসল কারণটা হয়তো জানা যাবে না কোনও দিনই। ফলস একটা রিপোর্টের নিচে ধামাচাপা পড়ে যাবে প্রকৃত ঘটনা।
আর যদি সত্যই হয় পুলিসের বক্তব্য? কীভাবে মারা গেল তবে ফারজানা মিতার খুনি?
হার্টফেল করে?
না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ডায়েরিটাকে পাত্তা দিতে চায় না অরণ্য। যুক্তি-বুদ্ধি গুলিয়ে যাবে তাতে। হ্যাঁ, হতেই পারে হার্ট-অ্যাটাক। হায়াত-মউতের কথা তো বলা যায় না কিছুই। কিন্তু ডায়েরির কারণে হয়েছে বলে মনে করছে না ও। নিশ্চয়ই অন্য কোনও কারণ।
কী সেটা?
গত কাল থেকে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে অরণ্য। টিভির খবরে, ইন্টারনেটে, তারপর আজকের পত্রিকায়…
লোকটা কি আত্মহত্যা করতে পারে? পারেই তো। পুলিসের বিব্রত হওয়ার কারণ হয়তো এটাই। নিজেদের গাফলতি প্রকাশ পেয়ে যাক, কে-ই বা চায় তা।
আরে… অ্যাই! দাও, বলছি! প্লিজ, দিয়ে দাও ওটা!
ভাবনার জগৎ থেকে ক্লাসরুমে ফিরে এল অরণ্য। লাঞ্চ-টাইম।
ইবলিস নাম্বার টু- সালমান, ছিনিয়ে নিয়েছে জয়ন্তর মানিব্যাগ। ওটা পাওয়ার জন্য অনুনয় করছে সরল-সিধে ছেলেটা। হাত বাড়িয়ে নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছে। ওঅলেটটার। পাচ্ছে না। খেলাচ্ছে ওকে সালমান। এ ব্যাগটা শূন্যে ছুঁড়ে দিল ইবলিস। ধরতে চেয়ে ব্যর্থ হলো জয়ন্ত। খপ করে লুফে নিয়েছে সেটা ইবলিস নাম্বার ওয়ান।
এমিল… গলাটা বুজে এল জয়ন্তর।
এই তো, বাপ… দিচ্ছি… চট করে পাঁচ শ টাকার একখানা নোট বের করে নিল এমিল ডিকস্টা। নিয়েই মানিব্যাগটা ছুঁড়ে মারল জয়ন্তর দিকে। বুকে বাড়ি খেয়ে জয়ন্তর পায়ের কাছে পড়ল ওটা।
আমার টাকা… কেঁদে ফেলবে যেন জয়ন্ত।
ভুল, বলল এমিল কথার পিঠে। তোর না… তোর বাপের টাকা।
আলাল ও দুলাল… সুর করে বলল ইবলিস নাম্বার দুই।
আলাল ও দুলাল… আলাল ও দুলাল… আলাল ও দুলাল,…
তাদের বাবা হাজি চান…
চান খাঁর পুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ি… পৌঁছেতে এসে সশব্দে হাই-ফাইভ করল দুই ইবলিস।
আলাল ও দুলাল.:. আলাল ও দুলাল… লা-লা-লা-লা-লা… লা-লা-লা-লা-লা…
চোয়াল শক্ত হয়ে আছে অরণ্যর। অক্ষম রাগ। কিছু বলাও যাবে না এগুলোকে। হেল করে দেবে লাইফটা।
ডায়েরিতে নাম তুলে দেবে নাকি বজ্জাত দুটোর? …উঁহু! লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে যায়। উইদ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপন্সিবিলিটি।
নিজের উপরেই বিরক্ত হয়ে উঠল অরণ্য। ডায়েরিটা সত্যি বলে ভাবছে কেন ও? যত্ত সব!
নয়
আর তো সহ্য হয় না, মামা! কাতরে ওঠার মতো আওয়াজ করল আরাফাত। মনডা চায়…
হ, মামা। আমার তো অহনই বিচি কান্ধে!
কী কস, রিপইন্না… মাল-টাল মিলব তো ভালো? কী মনে হয় তর?
আশা তো করি, মাম্মা, বলল রিপন। আর চান্স পাইলেই…
খিকখিক করে হেসে উঠল টিপু- তৃতীয় জন। সিনেমা হলের গলি। আধো আলোকিত, আধো অন্ধকার। অর্ধনগ্ন-পোস্টারে ছাওয়া জায়গাটা যেন নরকেরই অংশ একটা। পাপ-পঙ্কিলতায় নীল হয়ে আছে।
রোজকার মতো দুটো মোটরসাইকেলে ঠেস দিয়ে বসে আচ্ছা পিটাচ্ছে তিন বখাটে। আলাপের বিষয়বস্তু ওদের আরেক বন্ধু ড্যানিদের রুফটপে বারবিকিউ পার্টি। আলালের ঘরের দুলাল। আগামী কাল বাসায় থাকছেন না ওর আব্বা আম্মা। সুযোগটা নষ্ট করেনি ড্যানি। পার্টির আয়োজন করছে। মেয়ে-টেয়েও থাকছে নাকি- মচ্ছব হবে।
লাস্ট যেই পার্টি দিল হালায়… উফ! রঙিন হয়ে উঠেছে টিপু মোল্লার চোখ দুটো।
…নাদিয়া মাগিড়া… আরাফাতেরও মনে পড়ে গেছে।
আহ, দোস্ত! সিরাম মাক্ষি ফিগার… সুখস্মৃতি ভাসছে রিপনের চোখের সামনে। পানি এসে গেছে জিভে।
অন্ধ কামোত্তেজনায় কুকুরের মতো শ্বাস ফেলতে লাগল তিনজনে।
সহসা চাপা স্বরে চেঁচিয়ে উঠল রিপন: দোস্ত!
শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে গেল তিন যুবকের। মাংসের লোভে উন্মত্ত হয়ে আছে, আর এখন গলির সামনে দিয়ে চলে গেল আস্ত এক নারী। অদৃশ্য সঙ্কেত চালাচালি হয়ে গেল নিজেদের মধ্যে। অন্ধকার রাত। নির্জন গলি। আর কী চাই!
বুঝতেও পারল না মেয়েটা, কী থেকে কী হয়ে গেল। খপ করে একটা বাঘের থাবা পিছন থেকে চেপে ধরল ওর মুখটা। চিৎকারের সব পথ রুদ্ধ। আরও দুটো হাত ওর পা জোড়া ধরে তুলে ফেলল শূন্যে।
চ্যাংদোলা করে গুলির মধ্যে এনে ফেলল ওরা মেয়েটাকে। হাত আর মুখ চেপে ধরেছে দু জনে, এ অবস্থায় এক টানে সালোয়ারের ফিতে খুলে ফেলল আরাফাত। পরক্ষণেই আঁক করে ছিটকে পড়ল দু হাত দূরে।