সব শেষে: এদের কাউকে যদি চিনে থাকেন আপনি, তা হলে দয়া করে ফোন করুন এই নাম্বারে: ১-৫০৩-৫৫৫ ০৫০৫।
বেজে উঠল ফোন। রিসিভার কানে তুলল অ্যারেনবার্গ। ইয়াহ? কথাগুলো শুনল ওপাশের। হু-হ্যাঁ করল কয়েক বার। তারপর প্যাড টেনে নিয়ে কিছু একটা লিখে রেখে দিল ফোনটা। তার আগে ধন্যবাদ দিতে ভুলল না কলারকে।
জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে আছে জন।
ওর উদ্দেশে চওড়া হাসল অ্যারেনবার্গ। একদম হাতেনাতে ফল পাওয়া গেছে!
পনেরো
এই লোক, বিজ্ঞপ্তিটাতে আঙুলের টোকা দিয়ে বলল সেলস লেডি।
– নিচের সারির প্রথমটা। পোলকা ডট।
রে অভ লাইফ নাম দোকানটার। বিক্রয়কর্মী একজন মুলাটো। মুলাটো হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গের দো-আশলা।
কাঁচের প্যানেল করা সারি সারি তাক মেয়েটার পিছনে। হরেক ডিজাইন আর ব্র্যাণ্ডের চশমা শোভা পাচ্ছে। রয়েছে সানগ্লাসও। বাঁধাই করা বেশ কয়েকটা মাঝারি আকারের ছবি ঝুলছে দেয়ালে। সবই চশমা পরা মডেলদের।
নিশ্চিত আপনি? জিজ্ঞেস করল অ্যারেনবার্গ।
অবশ্যই! জোর দিয়ে বলল সেলস-লেডি জেনিথ।
চাইলেও ভোলা সম্ভব না। হি ইজ অ্যান অ্যাসহোল।
কোন্ দিক থেকে? প্রশ্ন জনের।
অ্যাটিচুড। চিল্লাচিল্লি করছিল, মনে আছে।
কী জন্য?
সিরিয়াল মেইনটেইন করতে চাইছিল না অন্যদের মতো। তার নাকি তাড়া আছে।
এ লোকটা কি রিসেন্টলি লেন্স বদলাতে এসেছে? বা দিকের লেন্স?
হ্যাঁ। দু বার দেখেছি আমি তাকে। একবার চশমা নেয়ার সময়। আরেক বার লেন্স পালটানোর সময়। লোকটা আজব।
কী রকম?
আমার খেয়াল ছিল না, কী রকম ফ্রেম ইউজ করে সে। সেজন্য রিসিট চাইলাম তার কাছে। আনতে ভুলে গিয়েছিল লোকটা। তখন ডেলিভারি ট্রেগুলো নামাই আমি। এক-এক করে দেখতে থাকি চশমাগুলো, যদি মনে পড়ে। কিংবা দেখে যদি বলতে পারে লোকটা। রিসিট ছাড়া দিতাম না অবশ্য। …তো, অনেক চশমা। সবগুলোতেই নাম্বার দেয়া। ওই একই নাম্বার রয়েছে যার-যার রসিদে। একটা-একটা করে দেখছি, এরই ফাঁকে চোখ পড়ল গিয়ে লোকটার মুখের চেহারায়। এসি-রুমের মধ্যেও ঘেমে উঠছিল সে। বুঝলাম না কারণটা। অস্বাভাবিক লাগছিল চোখের দৃষ্টিটা। জিজ্ঞেস করলাম: ঠিক আছেন তো আপনি?
জবাব দিল না। তার বদলে বলল: অ নাম্বারস! আমার একটা নাম আছে!
তারপর? উত্তেজিত হয়ে উঠেছে জন।
আর খোঁজাখুঁজির মধ্যে গেলাম না আমি। বললাম, রিসিট নিয়ে আসুন। তারপর দেখা যাবে।
এসেছিল?
বলতে পারব না। আমি আর দেখিনি তাকে।
আসেনি।
অবাক হলো মেয়েটা। আপনি জানেন কী করে?
অ্যারেনবার্গের দিকে চাইল জন।
বুঝে ফেলল পোর্টল্যাণ্ড পুলিস। সে-ই দিল জবাবটা। অ্যাটিচুড।
দোকানের ঠাণ্ডা থেকে বাইরের উজ্জ্বল রোদে বেরিয়ে এল ওরা। পেভমেন্টে চির-হরিৎ বৃক্ষের ইকড়ি-মিকড়ি।
আমি যা ভাবছি, আপনিও কি তা-ই ভাবছেন, জেডাই? জনকে জিজ্ঞেস করল অ্যারেনবার্গ।
সম্ভবত।
বলুন। মিলিয়ে নিই ভাবনাগুলো।
এর পরের টার্গেট সম্ভবত মেয়েটা সেলস-গার্ল!
ষোলো
সেরাতে মস্ত চাঁদ উঠল আকাশে।
ডিউটি শেষে একে একে বাড়ির পথ ধরেছে রে অভ লাইফ-এর কর্মীরা। রয়ে গেছে শুধু জেনিথ। সে-ও বেরোবে। তবে একটু পরে।
দোকানের বাইরে ওত পেতে রয়েছে ওরা। গাড়ির মধ্যে। জন। অ্যারেনবার্গ। হুইটলি। এবং আরও অন্তত বিশ জন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।
হয়তো খুনিও!
আগের প্রতিটা অ্যাটাকই যেহেতু অফিস আওয়ারের পরে, কাজেই, এটাই আমাদের সুযোগ, আশাবাদ জনের কণ্ঠে।
সচরাচর সোয়া নয়টার দিকে দোকান ছাড়েন মিস উইনফ্রে, বলল ডিটেক্টিভ হুইটলি। পনেরো মিনিট আছে এখনও।
এক, দুই করে মিনিটগুলো কাটতে লাগল উকণ্ঠায়। যতই গড়াচ্ছে সময়, নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে ওদের।
এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ফ্রন্ট ডোরের OPEN সাইনটা উলটে CLOSED করে দিল দিল জেনিথ উইনফ্রে। ছোট্ট করে তার নিচে লেখা- সকাল ন টায় খুলবে।
বাতি-টাতি নিভিয়ে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এল সে। তালা লাগাল দরজায়। চলল কার পার্কিং-এর দিকে। চাবি হাতে পৌঁছে গেল গাড়ির কাছে।
ভান করুন, যেন কিছু ফেলে এসেছেন, রেডিয়োতে বলল জন। দোকানে ঢুকুন আবার। বেরোন।
কানের ফুটোয় গোঁজা ক্ষুদ্র শর্ট রেঞ্জ রিসিভারে কথাগুলো শুনল জেনিথ। তবে ওর আচরণে প্রকাশ পেল না কিছুই। শিখিয়ে-পড়িয়ে নেয়া হয়েছে আগে। তার পরও একটু যে নার্ভাস লাগছে না, তা নয়। [ কাঁধের ব্যাগের ভিতরটা হাতড়াতে লাগল ও। অভিনয়। বিরক্ত চেহারা করে দোকানের দিকে চলল আবার।
এসময় কমলা একটা মাইক্রোবাস বেরোতে চাইছে। পিছনের পার্কিং লটটা থেকে। এতক্ষণ অন্ধকারে ঘাপটি মেরে ছিল ওটা আর ওটার চালক। হেডলাইট না জেলেই এগোচ্ছে এখন এক্সিটের দিকে। গতি মন্থর।
বাধা পেল।
পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে গাঢ় নীল রঙের এক টরাস। সিট থেকে নামল এক মাত্র আরোহীটি।
লি অ্যারেনবার্গ। একটা হাত তুলে এগোচ্ছে কমলা গাড়িটার দিকে।
বিড়বিড় করে জঘন্য একটা গালি দিল মাইক্রোর চশমা পরা ড্রাইভার।
সাহায্য করবেন একটু? গলা চড়িয়ে বলল অ্যারেনবার্গ। চলে এসেছে মাইক্রোবাসটার পাশে।
ভাবলেশহীন চেহারায় দেখছে ওকে চশমা।
হাওয়া বেরিয়ে গেছে আমার… থুড়ি- বোকাটে হাসল অফিসার। …টায়ারের। নড়তে পারছি না আর। জ্যাক হবে আপনার কাছে?
মাইক্রো-চালক নির্বিকার।