ক্যারোলিন বার্কলের ছবির সামনে হাঁটু গেড়ে বসল লং কোট পরা লোকটা।
অ্যাকশন! তীক্ষ্ণ স্বরে নির্দেশ দিল জন। দিয়েই বসে থাকেনি, ঝোড়ো হাওয়ার মতো দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে বাইরে।
ওদিকে ওর কথা মাটিতে পড়ার আগেই ওত পেতে থাকা শ্বাপদের মতো জায়গায় জায়গায় জ্বলে উঠল গাড়ির চোখগুলো। ছদ্মবেশী পুলিস কার ওগুলো। ঘুমন্ত অবস্থা থেকে সজাগ হয়েছে। কালো পিচের উপর টায়ারের ঘষা খাওয়ার বিশ্রী, কর্কশ শব্দ উঠল। সব ক টা সাইরেন মহা বিপৎসঙ্কেত ঘোষণা করছে একযোগে।
জুতো পরা পায়ের আওয়াজ অনেকগুলো। ব্যস্ত। দৌড়চ্ছে। জন আর অ্যারেনবার্গও রয়েছে এদের মধ্যে।
সবার আগে লোকটার কাছে পৌঁছল অ্যারেনবার্গ। ততক্ষণে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্দেহভাজন। পালাবার আগেই পাকড়াও করে ফেলল ওকে অ্যারেনবার্গ। এই মাত্র ওখানে পৌঁছনো পুলিসের এক গাড়ির ইঞ্জিন-হুঁডের উপরে দড়াম করে আছড়ে ফেলল সাসপেক্টকে। কোনও রকম প্রতিরোধেরই সুযোগ পেল না লোকটা। চেষ্টা করল মাথা তুলতে। বেমক্কা এক ঘুষি খেয়ে হুডের সঙ্গে বাড়ি খেল। মাথাটা।
প্রথমটার চাইতেও জোরদার আরেকটা ঘুষি হাঁকাতে যাচ্ছিল অ্যারেনবার্গ, জন ওকে না আটকালে ঘটে যেত রক্তারক্তি। দুটো কঠিন হাত ওর কাধ ধরে ঘুরিয়ে দিল নিজের দিকে। ঝাঁকানি দিল জোরে।
জোরাজুরি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল অ্যারেনবার্গ। ফুঁসছে। হাঁপাচ্ছে।
এবার এক কদম আগে বেড়ে মার খাওয়া যুবকের বাহু পাকড়াল জন। অনেকগুলো উদ্যত পিস্তল কাভার করছে। লোকটাকে। জনের হাতটা নেমে এল যুবকের কবজিতে। একটা ব্রেসলেট ওখানে। ফ্যাশন করার জন্য পরা হয়নি। হসপিটাল আইডি ওটা। প্লাসটিকের বালাটা ধরে গরম চোখে চাইল জন অ্যারেনবার্গের দিকে।
এখানকার পেশেন্ট তুমি? যুবকের দিকে ফিরে জানতে চাইল জুন।
মাথা নাড়ছে ছেলেটা। ঘোলাটে ভাবটা দূর করতে চাইছে চোখ থেকে।
হ্-হ্যাঁ! বলল অস্ফুটে। আমার কোনও দোষ নেই, স্যর! বিশ্বাস করেন, স্যর, যদি জানতাম, এখানে আসা নিষিদ্ধ, বেরই হতাম না কেবিন থেকে!
কিন্তু কোন রাজ্য উদ্ধার করতে এসেছ এখানে? রাগত স্বরে বলল জন।
মেয়েটা আমার নার্স ছিল, স্যর। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলাম ওকে। কিন্তু অনুমতি দিল না আমার ডাক্তার। সেজন্য… চুপি চুপি…
একজন অফিসারের দিকে চাইল জন। ওকে ওর কেবিনে নিয়ে যান, প্লিজ।
হাতের পিস্তলটা খাপে ভরল অফিসার। আসুন।
এবার আবার অ্যারেনবার্গের দিকে ঘুরল জন। লোকটার বাহু খামচে ধরে সরিয়ে নিয়ে এল দূরে। রাগে থমথম করছে। মুখটা।
আমি ভেবেছিলাম, ওই লোকই আমাদের কালপ্রিট! আত্মরক্ষার চেষ্টা করল অ্যারেনবার্গ। আমরা সবাই-ই তা-ই ভেবেছিলাম।
ভাবাভাবি পরে! কথা নেই, বার্তা নেই, ঘুষোঘুষির মানে কী, অ্যাঁ?
কাম ন, জন! লোকটা সত্যি সত্যি কালপ্রিট হলে তো এ কথা বলতেন না! একটা হারামজাদা আপনার বউকে এক শ টুকরো করলে সবার আগে আপনিই ওকে কুপোকাত করতেন এক ঘুষিতে!
কে আপনার বউকে এক শ টুকরো করল! খোঁচাটা ফিরিয়ে দিল জন।
আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল অ্যারেনবার্গ।
ওর উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলল জন। তাকাল স্মারকের স্তূপটার দিকে।
অভিযানটা মাঠেই মারা গেল তা হলে! ফলল না সম্ভাবনাটা। এলই না খুনি!
চোদ্দ
টাক মাথা। শুধু কানের উপরে আর মাথার পিছন দিকে টিকে গেছে ক গাছি চুল। লালচে। বাইফোকাল চশমা চোখে গাল দুটো পানি ভরা বেলুনের মতো। যেন-তেন ভাবে পরা কালো জ্যাকেটের গলার কাছ আর হাতার নিচ থেকে উঁকি দিচ্ছে সাদা শার্টের অংশ। মুঠি দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা হেঁট করে আছে লোকটা।
সুদর্শন, কিন্তু বিষণ্ণ চেহারার এক যুবক। বাদামি চুল। পরে আছে সুট-টাই।
পরের জন। খয়েরি চুল। একই রঙের জ্যাকেট। চেইন খোলা। নিচে পোলকা ডটের শার্ট। বেদনায় কুঁচকে রয়েছে কপাল।
সাদা শার্টের উপরে ধূসর ওভারকোট চাপিয়েছে তার। পরের জন। লাল টাই। পরিপাটি করে আঁচড়ানো কালো চুল। লম্বা জুলফি। শেয়ালের মতো চোখা কানের আগা। পাথুরে মুখে তেমনই অভিব্যক্তি।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখছে জন অ্যারেনবার্গের অফিসে বসে। শোক-সমাবেশের ভিডিয়ো। শোকাত পুরুষদের চেহারাগুলো খুঁটিয়ে দেখছে। আশা, কোনও-না-কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়বে চোখে। এক মুখ থেকে আরেক মুখে চলে যাচ্ছে ফাস্ট ফরওঅর্ড করে। পজ চেপে ধরে রাখছে এক-একটা মুখ। দেখা শেষে চলে যাচ্ছে আরেকটায়।
কোথায় জানি গিয়েছিল অ্যারেনবার্গ। ফিরে এল হাতে এক পাতা কাগজ নিয়ে।
সন্দেহভাজন কয়েক জনের লিস্ট করে ফেললাম। প্রিন্টারে ছাপা কাগজটা দেখাল ও জনকে। হাসপাতালের কেউ না এরা। হাসপাতালের সাথে সম্পর্ক নেই কোনও।
ভালো একটা কাজ করেছেন।
তালিকাটা ফ্যাক্স করে দেয়া হচ্ছে পোর্টল্যাণ্ডের সমস্ত চোখের ডাক্তার আর আইগ্লাস ল্যাবে।
হাতে নিল জন কাগজটা।
সাদা-কালো প্রিন্ট-আউট। সবার উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা: পোর্টল্যাণ্ড পুলিস বুলেটিন। তার নিচে: আপনি কি চেনেন এদের?
পরের দু লাইনে রয়েছে: এদেরকে শনাক্ত করতে আপনার সহায়তা কামনা করছে পোর্টল্যাণ্ড পুলিস ডিপার্টমেন্ট।
এরপর রয়েছে ছবিগুলো । পাঁচটা। দুই সারিতে। স্রেফ ছবিই। নাম নেই। নাম জানবার সুযোগ নেই যেহেতু।
ছবির নিচে লেখা: ছবিগুলো নেয়া হয়েছে সেইন্ট জোসেফস হটপিটালের এক অনুষ্ঠান থেকে ৫ জুলাই, ২০১৫ তারিখে সন্ধ্যা ৭:০০ থেকে ৮:৩০-এর মধ্যে।