বাঁ দিকের লেন্স… যা মনে হচ্ছে, মন্তব্য তার।
কালপ্রিটের, সন্দেহ করছেন?
সন্দেহ নয়, আমি নিশ্চিত।
কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না লি। একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, চশমার দোকানে খোঁজ নেয়া যায়। এত, ভারি পাওয়ারের চশমা… কে ব্যবহার করে, খুঁজে বের করা সহজই হওয়ার কথা।
বারো
সুভেনিয়ার জমানোর বাতিক রয়েছে লোকটার। শিকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে স্মারক। তবে চাইলেই তো আর দেবে না কেউ। অতএব, মৃত্যুর পর…
ক্যারোলিন বার্কলের বুক থেকে খুলে নিয়েছে প্লাসটিকের নেমট্যাগ।
পোস্টাল সার্ভিসের মেয়েটার কাছ থেকে নিয়েছে প্যান্টি চিড়িয়াখানার সেই গার্ডের কাছ থেকে পেয়েছে হুইসল।
ফ্রণ্ট পেজে ছেপেছে খবরটা। প্রধান শিরোনাম করেছে। এবার হাসপাতালে: নৃশংস ভাবে খুন হলো নার্স।
টেবিলের দেরাজ থেকে কচি বের করল খুনি। কেটে রাখবে খবরটা। আরেকটা হবি ওর। নিজের কর্মকাণ্ডগুলোর পেপার-কাটিং জমায়। [ কাজ শেষ করে স্ক্র্যাপ-বইটা তুলে আনল ড্রয়ার থেকে। কালো চামড়ার মলাট। নিচের দিকে রূপার জলে খোদাই করা: স্মৃতি।
প্রথম পৃষ্ঠার হেডিং: হতভাগ্য তরুণীকে ১১ টুকরো করল পাষণ্ড খুনি! ইউনিফর্ম পরনে ছবি আছে মেয়েটার। পাশেই ক্যাপশন সহ ক্রাইম সিনের ছবি। কিছু-কিছু অংশ ঘোলা করে দেয়া হয়েছে পত্রিকার এথিকস অনুসারে।
ডাক বিভাগের কর্মী খুন, এলিভেটরে খণ্ডিত লাশ! দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়। সচিত্র এটাও।
নতুন একটা পাতা খুলল খুনি। তুলি চুবাল আঠার ডিব্বাটায়। নতুন ক্লিপিং-এর উলটো পিঠে চালাল ব্রাশটা। কাগজটা আবার সোজা করে বসিয়ে দিল স্ক্র্যাপবুকের কালো বুকে। আলতো হাতে ডলে ডলে সমান করতে লাগল কিনারাগুলো। সচিত্র প্রতিবেদনটার উপরে আগেই সেঁটেছে খবরের কাগজটার নাম। পোর্টল্যান্ড হেরাল্ড।
এবার পড়বে।
পড়তে পড়তে থেমে গেল এক জায়গায় এসে। লিখেছে: নিহত নার্সের স্মরণে আজ সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন করা হবে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
মুচকি হেসে ভাবল: আরেকটু সাহসী হওয়া যাক না! …হবে?
তেরো
সেই সাঝ থেকে ঠায় অপেক্ষায়, এখন রাত দেড়টা। ছায়ায় দাঁড়ানো কালো গাড়িটা আলাদা করে কেউ লক্ষ না করলেও বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে, ওটার। কালো কাঁচ-ঢাকা গাড়ির ভিতরে তিন জোড়া সতর্ক চোখ। কেন জানি মনে হচ্ছে জনের, ঘটবে কিছু একটা। ইন্সটিঙ্কট। এত দিন ধরে হমিসাইডে কাজ করার কারণে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব প্রখর ওর।
সেইন্ট জোসেফ স হসপিটাল– ইমার্জেন্সি অ্যাডমিটিং লেখাটার নিচে ডান দিকে তীর চিহ্নঅলা জ্বলজ্বলে নিয়ন সাইন। ওটার পাশেই স্মৃতিতর্পণের ব্যবস্থা। ওই পর্ব শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। শোকার্তরা ফিরে গেছে যার-যার জীবনে।
অদূর থেকে নজর রাখছে ওরা জনরা।
ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে জায়গাটা। ঘাস-ঢাকা গোল একটা অংশ। ইট দিয়ে ঘেরা। ক্যারোলিন বার্কলের বড় একটা বাঁধাই করা ছবির সামনে মোমবাতির ইতস্তত সারি। দু-একটা ছাড়া বাকি সব শেষ হয়ে গেছে গলে গলে। বড় একটা জপমালা ঝুলছে ফোটোফ্রেমের এক কোণ থেকে। ক্যারোলিনের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ম্যাডোনা। প্রার্থনার ভঙ্গিতে দু হাত বুকের কাছে জড়ো করা ছোট সিরামিক মূর্তিটার। সবচেয়ে আগে চোখে পড়ে লাল রঙের ব্যানার। নিহত নার্সের নাম লেখা ওতে। এক ধারে কাঠের অলঙ্কৃত ক্রুশ। বাইবেলও রয়েছে একটা।
ফ্লোরেসেন্ট আলোয় আলোকিত চত্বরটা নির্জন। উলটো পাশের রাস্তার পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে জনদের গাড়িটা। কিছু করার নেই আপাতত। বসে বসে চোখ রাখা শুধু। হাসপাতাল ছাড়া দুটো টেলিফোন বুথ আর দূরে একটা গ্যাস পাম্প দেখতে পাচ্ছে গাড়ি থেকে। জনবিরল পাম্পটা দেখে মনে হচ্ছে, পড়ে আছে নষ্ট হয়ে। ব্যবহার হয় না। তা গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে সময়। অস্থির বোধ, করছে অ্যারেনবার্গ। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে টেনশনে স্টাইরোফোম কফিকাপ ছিঁড়ছে। পিছন থেকে ওর নার্ভাসনেস লক্ষ করছে ডিটেক্টিভ হুইটলি। সামনে জন।
শুধু শুধু বসে আছি কেন? এই নিয়ে এক শ বারের মতো প্রশ্নটা করল অ্যারেনবার্গ।
জবাব দিল না কেউ। তাতে বিরক্তি আরও বাড়ল পোর্টল্যাণ্ড পি. ডি. অফিসারের।
ভোর হওয়া তক থাকতে চান? জিজ্ঞেস করল ডিটেক্টিভ।
অত লাগবে না, বলল জন।
মৃদু নড করল হুইটলি।
হাতের রেডিয়োতে কথা বলল জন। অল ইউনিটস। দিস ইজ চার্লি ওয়ান।– ছায়া থেকে বেরিয়ে এল এক পুলিস অফিসার। হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ডের ছদ্মবেশে রয়েছে। আড়াআড়ি পেরিয়ে গেল চত্বরটা। এক হাত কানের কাছে। নির্দেশ শুনছে কমাণ্ডারের। অন্য হাতে পরা ঘড়ির দিকে তাকাল।
আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাততাড়ি গোটাব আমরা, বলে চলেছে জন। শেষ বারের মতো চেক করে নিন আশপাশটা।
কপি, শোনা গেল রেডিয়োতে।
চলে যাচ্ছে গার্ড। এমন ভঙ্গিতে তাকাচ্ছে চারপাশে, যেন শিফট শেষ হওয়ার আগে দেখে নিচ্ছে, সব কিছু ঠিক আছে কি না। একটু পরে আর দেখা গেল না তাকে। তা ছদ্মবেশী অফিসার গায়েব হতেই যেন প্রকাশ্যে এল একাকী এক লোক। মেমোরিয়ালটার দিকে পা চালিয়ে চলেছে। পিছনে তাকাল একটি বার। গাড়িতে বসা তিনজনেরই মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে; বিশেষ করে, অ্যারেনবার্গ আর জনের।
অল ইউনিটস, তৎপর হলো জন। ফিসফিসিয়ে বলল, স্পটের দিকে এগোচ্ছে সন্দেহভাজন।