দপ করে নিভে গেল টর্চটা।
চোখ জোড়া স্বাভাবিক হয়ে এল ক্যারলের। শান্তি! নামাল হাতটা। সোজা হলো ঘাড়।
গার্ডের ইউনিফর্ম পরা এক লোক। মোটাসোটা। চেহারাটা পরিষ্কার না এখনও। আলোকস্বল্পতা। ক্যাপ আছে মাথায়।
গুড নাইট, ম্যাম। সরি। কর্তব্যজ্ঞানের সঙ্গে ভদ্রতাবোধও রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীর। চলে গেল আরেক দিকে।
বড় করে দম নিল ক্যারল। স্যাঁতসেঁতে গন্ধ বাতাসে।
বিরাট সব পিলারের পাশ কাটিয়ে নিজের জেলপির কাছে চলে এল সে এপাশ-ওপাশ চাইতে চাইতে। চাবি ঢোকাল দরজার তালায়। মোচড় দেয়া মাত্রই
হেল্প! হেল্প! পুরুষকণ্ঠ একটা।
গলা বাড়িয়ে চাইল ক্যারল। গাড়ির ওপাশ থেকে এসেছে আবেদনটা। ভালো করে দেখার জন্য সরু করল চোখ দুটো।
মাইক্রোবাস, মনে হচ্ছে। গজ তিরিশেক তফাতে। একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। হুম… গাড়িটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক লোক। হাত জোড়া বন্ধ তার; এক গাদা জিনিসপত্র ধরে রেখেছে বুকের কাছে।
কী হয়েছে? বাতাসে প্রশ্ন ছুঁড়ল ক্যারোলিন।
চশমা! কাঁদো কাঁদো শোনাল গলাটা। চশমাটা পড়ে গেছে আমার! ফোঁপানির মতো একটা আওয়াজ বেরোল। সাহায্য করো, মিস! প্লিজ! কাতর আর্তি। চশমা ছাড়া কিছুই দেখি না আমি!
ওকে-ওকে! আসছি আমি! বিরক্ত স্বরে বলল ক্যারোলিন। মহা জ্বালা!
কমলা বাসটার কাছে এসে দেখতে পেল, ভারি জিনিসগুলো নিয়ে রীতিমতো কসরত করছে লোকটা। চোখ ছাড়া গোটা মুখটাই পড়ে গেছে আড়ালে। লালচে চুল, কোঁকড়া। হাফ শার্ট গায়ে। হাত ভর্তি বড় বড় লালচে রোম। রিস্টওঅচটা গাবদা।
মাইক্রোর দরজাটা খোলা। রেড ক্রসের লোগো সম্বলিত স্টিকার কালো কাঁচে: হিউম্যান ব্লাড সাপ্লাই।
কোথায় পড়েছে? জানতে চাইল নার্স।
জবাব পেল: এখানেই।
হাঁটু মুড়ে বসল ক্যারোলিন। তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করল আশপাশটা। কই, দেখছি না তো! ছাড়ল না হাল। দাঁড়ান… তলাটায় দেখি একবার…
উবু হলো। গাড়ির গায়ে একটা হাত রেখে উঁকি দিল তলায়। আহ… এই যে!
পেয়েছ, মিস?
হ্যাঁ। গাড়ির নিচে হাত ঢুকিয়ে দিল নার্স। বেশ দূরে চলে গেছে চশমাটা। অবশ্য রয়েছে নাগালের মধ্যে। তুলে আনল ওটা।
ফুঁ দিল ক্যারোলিন চশমাটায়। ভাঙে-টাঙেনি, মনে হচ্ছে। সিধে হতে হতে বাড়িয়ে ধরল ওটার মালিকের দিকে। এই নিন।
জিনিসগুলো গাড়ির ভিতর নামিয়ে রেখেছে হাফ শার্ট। ধক করে উঠল ক্যারলের বুকটা। কৃতজ্ঞতা নয়, পাশবিক ক্রোধে মুখটা বিকৃত লোকটার। হাতে একটা হাতুড়ি এখন।
ধাঁই করে মেরে বসল মেয়েটার মাথায়। ঢ্যাপ!
এবার দু টুকরো হলো চশমাটা। সহস্র সূর্য জ্বলে উঠল ক্যারোলিনের মগজে। তারপর… সমস্তই আঁধার।
এগারো
আরও একটা খুন।
এবং যথারীতি খণ্ডবিখণ্ড করা হয়েছে লাশটা।
টুকরোগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। যেখান যেখানটায় পাওয়া গেছে, আউটলাইন করা হয়েছে চক দিয়ে। আটটা জায়গায়- A থেকে H পর্যন্ত মার্কা।
মার্কা আরও আছে। সূত্র খোঁজা অব্যাহত রয়েছে অকুস্থলে। খুনের সঙ্গে যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে, এরকম প্রত্যেকটা আলামতের পাশে ১, ২, ৩, ৪ করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে মার্কা।
ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে লোকটা। জনের চেহারা থমথম করছে গাম্ভীর্যে। বেপরোয়া আর আত্মবিশ্বাসী।
বেপরোয়া, বুঝলাম, দ্বিধাজড়িত গলায় বলল অ্যারেনবার্গ। আত্মবিশ্বাসী?
ঠিক তা-ই। যেখানে অ্যাটাক, সেখানেই মাংসের দোকান খুলে বসেছে এবার।
কই, গার্ড তো বলছে, অস্বাভাবিক কিছুই ধরা পড়েনি ওর চোখে! মারা যাওয়ার আগে মেয়েটার সাথে কথা হয়েছিল। তার। পুলিসী তদন্তেও প্রমাণ মেলেনি যে, এখানেই হয়েছে। খুনটা।
গ্যারাজের মেঝেতে গোড়ালির ভর দিয়ে বসল জন। দেখাদেখি অ্যারেনবার্গও। হাতের ফ্ল্যাশলাইটটা নামিয়ে রাখল জন মাটিতে। আলোয় দৃশ্যমান হলো কয়েক ফোঁটা রক্ত।
এই ফোঁটাগুলোর প্যাটার্ন লক্ষ করুন। দৃষ্টি আকর্ষণ করল জন। ক্রাইম সিন থেকে বাইরের দিকে ছড়িয়েছে। বাইরে থেকে আসেনি ভিতরে।
কীভাবে বুঝলেন?
দেখতেই পাচ্ছেন… ঠিক গোলাকার নয় ড্রপগুলো… লম্বাটে… অনেকটা ধূমকেতুর মতো… লেজটা এক্সিটের দিকে…
দারুণ আবিষ্কার! উত্তেজিত হয়ে উঠল অ্যারেনবার্গ। আরও একটা মানে দাঁড়ায় কিন্তু এটার!
কী?
বোঝেননি আপনি? ,
বলুন, শুনি। দেখি, আমি যা বুঝেছি, আপনিও তা-ই ভাবছেন কি না।
দম নিল অ্যারেনবার্গ। গাড়ি। ভ্রাম্যমাণ কসাইখানা।
ভুল নেই তাতে।
খুব সম্ভব এখানেই ছিল গাড়িটা। গাড়ির মালিক আক্রমণ করে মেয়েটাকে; যদি কোনও সঙ্গীসাথী না থেকে। থাকে লোকটার। বাড়ি-টাড়ি মেরে বেহুঁশ করে নিয়েছিল। সম্ভবত। চিৎকার করতে পারেনি। তারপর তো টেপ দিয়ে বন্ধই করে দিল মুখ। …গাড়িতে তুলল, এবং ফলাল কসাইগিরি। লাশের টুকরোগুলো ফেলে পালানোর সময়। যেভাবেই হোক, গাড়ি থেকে চুঁইয়েছে রক্ত।
দশে দশ।
এসব কাজের জন্য মাইক্রোবাসের বাড়া কিছু নেই।
হুম।
কিন্তু খুঁজব কোথায়? হতাশার সুর অ্যারেনবার্গের কথায়। সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও হতো।
জবাব দিল না জন। অন্য দিকে সরে গেছে মনোযোগ।. সিধে হয়ে আগে বাড়ল দু কদম ঝুঁকল মাটির দিকে। ভাঙা
একটা কাঁচের টুকরো কুড়িয়ে নিল দস্তানা পরা হাতে।
চোখের সামনে ধরল সে কাঁচটা। পুরু ওটা। বেশ পুরু।
অ্যারেনবার্গও এসে দাঁড়িয়েছে জনের পাশে। জনের কাছ থেকে কাঁচটা নিয়ে দেখল সে-ও।