কামন, ম্যান! মনে মনে গালি দিল একটা পোর্টল্যাণ্ড অফিসার। কী দেখছেন অত? আয়নার ভিতরে কী? খুনি ওয়াণ্ডারল্যাণ্ডে পালিয়ে গেছে, ভাবছেন নাকি?
বিরক্ত হলেও কিছু বলল না জন। মনে পড়ল, জেফরির উপদেশ। সমঝে চোলো।
একটা অসন্তোষের বিষবাষ্প ঘনিয়ে উঠতে যাচ্ছিল, সেটা আর হলো না। খুদে বার্তা এসেছে। দু জনেরই সেলফোনে। একই সঙ্গে।
চেক করে দেখা গেল, দুজনেই একই মেসেজ পেয়েছে।
সাত
ইউ.এস. পোস্ট অফিস। পোর্টল্যাণ্ড, অরেগন।
কাগজ আর আঠার মিষ্টি একটা মিলিত গন্ধ গোটা দালান। জুড়ে।
ডাক বিভাগের ভয়ার্ত কয়েক জন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলছে ইনভেস্টিগেশন অফিসাররা। নোট নিচ্ছে।
মাত্র পৌঁছেছে অ্যারেনবার্গ আর জন। জানে, কোথায় যেতে হবে। জানানো হয়েছে। সে উদ্দেশেই চলেছে।
আরেকটা খুন। এবারেরটা এখানে।
গাদা করে রাখা বাক্স সবখানে। অসংখ্য ফাইলিং ক্যাবিনেট। জায়গায় জায়গায় ক্যানভাসের বস্তা। হাঁটার জায়গা খুব কম।
চলতে চলতে জনের নজর আটকে গেল একখানা নির্দেশিকার উপর। ডেড লেটারস অফিস। পাশের দেয়ালে সাঁটা। তীরচিহ্ন নির্দেশ করছে। সামনে। সেদিকেই এগোচ্ছে। ওরা।
সামান্য আগে হাটছিল অ্যারেনবার্গ। থেমে পিছনে চাইল। দেখল, দাঁড়িয়ে গেছে জন ডিউক।
অ্যারেনবার্গ চাইতেই পা চালাল ফের জন। এগিয়ে গেল ওকে অতিক্রম করে।
অ্যারেনবার্গও দেখল নির্দেশিকাটা।
অসংখ্য মৃত চিঠির বোঝা বুকে নিয়ে থম মেরে আছে। ডেড লেটারস এরিয়া। কত বছর ধরে চিঠি জমা হচ্ছে। এখানে, কে জানে! মড়া-পচা গন্ধ যে নেই, বাঁচোয়া! আছে। রক্তের গন্ধ! টাটকা!
মুখে মাস্ক আর হাতে রাবারের দস্তানা পরে কাজ শুরু করে দিয়েছে টেকনিশিয়ানরা। ধুলো পরীক্ষা করে দেখছে। ছাপ-টাপ যদি পাওয়া যায়।
হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে গোটা এলাকা।
এলিভেটরের ভিতরে হয়েছে খুনটা। এটাও নারী। যথারীতি খণ্ডবিখণ্ড। নির্দেশ করছে: অভিন্ন খুনি করেছে খুনগুলো।
কালো প্লাসটিকে ঢাকা দেয়া লাশের শরীরটা। একখানা রক্তাক্ত উরু শুধু অনাবৃত। মাথাতেও প্লাসটিক-চাপা দেয়া হয়নি। কারণ, আগাগোড়া ডাক্ট টেপে মোড়া ওটা। আধুনিক মমি যেন।
নহর বইছে রক্তের। কালচে হয়ে আসছে রংটা। তারই মাঝে একটু পরে-পরে বসানো হয়েছে মার্কার। প্রাপ্ত
এভিডেন্সের সংখ্যা নির্দেশ করছে ওগুলো।
অদৃশ্য কোনও দেয়ালে বাধা পেয়ে দাঁড়িয়ে গেছে যেন অ্যারেনবার্গ। মমি করা মাথাটার দিকে চেয়ে রয়েছে। খুনের নৃশংসতায় বিহ্বল। বেশিক্ষণ দেখতে পারল না দৃশ্যটা। তাড়াতাড়ি সরে গেল আরেক দিকে।
এক জোড়া গ্লাভ টেনে নিল জন। সাবধানে পা ফেলে এগোল। বিচ্ছিন্ন মাথাটার পাশে বসল উবু হয়ে।
রক্ত। রক্ত। রক্ত। চামড়া। মাংস। হাড়। ভুরভুর করছে। বাজে গন্ধ। কোত্থেকে যেন হাজির হয়েছে এসে কয়েকটা নীল। মাছি। মহাভোজ আজ তাদের।
কিছু একটা মনোযোগ কাড়ল জনের। কুচকে গেল ভুরু।
টেপ! চাইল সে কাছের টেকনিশিয়ানের কাছে। নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল। হাতের বুরুশ আর ফ্ল্যাশলাইটটা নামিয়ে রাখল কিটে। তারপর একটা রোল তুলে নিয়ে লম্বা এক ফালি টেপ খুলে ছিঁড়ে আনল লোকটা ওটার গা থেকে। হাত বাড়িয়ে রয়েছে জন, হস্তান্তর করল ওকে স্ট্রিপটা।
স্কচটেপটার এক মাথা ডাক্ট টেপের গায়ে সেঁটে দিল জন। অন্য প্রান্তটা ধরা রইল আঙুলে। অ্যাসিটেট চাইল সে এবারে।
কখানা শিট এগিয়ে দিল টেকনিশিয়ান।
নিল জন একটা। এবার ডাক্ট টেপে লাগানো অংশটা খুলে স্থাপন করল স্বচ্ছ প্লাসটিক-শিটে।
না চাইতেই ম্যাগনিফাইং গ্লাস এগিয়ে দিল টেকনিশিয়ান। বিশেষ ধরনের আতশি কাঁচ এটা। আলো জ্বালবার ব্যবস্থা রয়েছে।
চোখে কাঁচ লাগিয়ে টেপটা দেখল জন।
আরেকটা মেসেজ!
স্মরণ করল প্রথমটার কথা। লেন্স নামিয়ে বিড়বিড় করল, হেয়ার টুডে… গন টুমরো! হেয়ার টুডে… গন টুমরো!
আট
HAIR TODAY. GONE TOMORROW.
পোলারয়েড ইমেজ নেয়া হয়েছে বাক্য দুটোর। এক হাজার গুণ বড় করে। বড় একটা হার্ডবোর্ডে সাঁটা। বোর্ড পিন দিয়ে।
অ্যারেনবার্গের অফিস।
বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা আমাদের জন্য, সখেদ মন্তব্য তার। কত্ত বড় সাহস! খুন করে আবার মেসেজ রেখে যায়! গাধা পেয়েছে নাকি আমাদেরকে!
অ্যারেনবার্গের উত্তেজনাটা উপভোগ করছে জন । বসে রয়েছে সে। জ্যাকেট খুলে চড়িয়ে দিয়েছে চেয়ারের পিঠে।
অপর জন দাঁড়িয়ে। একটু পর-পর পায়চারি করছে।
আরও কিছু শুনবার আশায় চুপ করে রইল জন।
হেয়ার টুডে। আমরা ওর চুল পেয়েছি। বয়স্ক লোকটা। তা-ই বলছে চুলের রং। কিন্তু গন টুমরো মানে কী?
দুই লাশের অনেকগুলো করে ছবিও লাগানো হয়েছে বোর্ডে। সেগুলোতে চোখ বোলাতে লাগল অ্যারেনবার্গ। মনে হয়, বুঝতে পেরেছি। চুলটা বোধ হয় আসল না। মানে, ওর না। অন্য কারও। নিজেকে যেরকম চালাক ভাবে লোকটা, ডিএনএ টেস্টের সুযোগ দেয়ার কথা না তার।
গুড শট, অফিসার, উৎসাহ দিল জন।
পুলিসের লোক হতে পারে? এক্স?
ঠাস করে খুলে গেল দরজাটা, কোনও উত্তর দেয়ার আগেই। আব্বু! আব্বু! বলতে বলতে দৌড়ে ঢুকল কামরায় রেনেসামি। দুই হাত বাড়িয়ে রেখেছে সামনের দিকে। আশা করছে, কোলে তুলে নেবে ওকে ওর আব্বু।
কিন্তু তার বদলে শুনতে হলো ধমক।