ফোল্ডার খুলে তাতে মনোনিবেশ করল জন। মিনিট বিশেক লাগল দেখে শেষ করতে। একটা শব্দও করল না এই সময়টাতে।
বিশ মিনিট পর চেয়ারে হেলান দেয়া থেকে সোজা হলো অ্যারেনবার্গ। কেমন বুঝছেন? আপনি কি একমত আমার সঙ্গে? মেয়েদের প্রতি বিতৃষ্ণা… ঠিক আছে না? সেই তাড়না থেকেই খুন।
বিতৃষ্ণার কারণ?
এটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। ধরা যাক, স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে লোকটার…
উঁহু। সম্ভবত বিয়েই করেনি লোকটা। খুব সম্ভব সেক্সও করেনি কোনও দিন।
অবাক হলো লি অ্যারেনবার্গ। বলতে চান, যৌন-বিষয়ে অনীহা রয়েছে খুনির? …অ, বুঝেছি। লোকটা ওকে রেপ করেনি… কোনও রকম ক্ষতি করেনি যৌনাঙ্গের… এই তো আপনার পয়েন্ট?
হুম, বলল জন মাথা নেড়ে।
আমার কী মনে হয়, জানেন? শিকারি ও শিকারের পূর্ব পরিচয় ছিল।
কীভাবে?
ডাক্ট টেপ। কীভাবে পেঁচিয়েছে, খেয়াল করেননি? শুধু চোখ আর মুখ। মুখ না হয় বেঁধেছে চিৎকার করবে বলে। কিন্তু চোখ? চোখ কেন বাঁধল! চিনে ফেলার ভয়ে? না। যাকে সে মেরেই ফেলছে, যা-ই দেখুক না কেন সে, বলবে কার কাছে? চোখে টেপ পেঁচানোর একটাই ব্যাখ্যা: মেয়েটার চোখের দৃষ্টি সহ্য করতে পারেনি খুনি। কোনও ভালো মানুষকে মন্দ হিসেবে আবিষ্কার করলে যেরকম বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায় লোকে, সেই চোখে চোখ রাখাটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। সম্ভবত অনুশোচনায় ভুগতে শুরু করেছিল খুনি… অপরিচিত লোকের বিবেকের দংশনে ভোগাটা একটু অস্বাভাবিক। কী বলেন?
যা বললেন। মনে মনে তারিফ করল জন অফিসারের।
লোকটা যদি ভিকটিমের সমাধিতে গিয়ে উপস্থিত হয়, একটুও অবাক হব না।
গিয়ে…?
ক্ষমা চাইবে মেয়েটাকে মারার জন্য। বলবে, কাজটা করে কেমন কষ্ট পাচ্ছে সে।
সম্ভব?
সম্ভাবনা আছে।
মেসেজটার ব্যাপারে কী বলবেন?
মেসেজ! কয়েকটা ভাজ পড়ল কপালে।
কিলার যে মেসেজ রেখে গেছে…
ও… মানে, বলতে চাইছেন, খুনি তার নৃশংসতা দিয়ে বোঝাতে চাইছে কিছু? লাশটা টুকরো-টুকরো করে বার্তা দিতে চাইছে কোনও?
না। প্লেইন অ্যাণ্ড সিম্পল- লিখিত বার্তা।
কোথায়?
যেখানে খুনটা হয়েছে।
কই, এমন কিছুর তো উল্লেখ পাইনি!
তার মানে, অন্যদেরও চোখ এড়িয়ে গেছে।
শিয়োর তো আপনি?
ইয়েস, আই অ্যাম।
পাঁচ
দিন।
খোলা জানালাপথে উজ্জ্বল সূর্যালোক ঢুকছে প্রায়ান্ধকার ঘরে।
আলোটা সবজে। লতাপাতার ফাঁক-ফোকর দিয়ে আসছে। মৃদু বাতাসে দুলছে দু দিকে টেনে দেয়া পরদাগুলো।
জানালার বিপরীতে বসে কাজ করছে লোকটা। সেই লোকটা। পিঠ খাড়া করে বসে ছোট চেয়ারটাতে। সাদা হাফ শার্টে পোলকা ডট।
বেশ কয়েকটা যন্ত্রপাতি তার সামনে। কলমের মতো অনেকটা। ধাতব জিনিসের গায়ে খোদাই আর মিনা করা হয় ওগুলো দিয়ে। একখানা ব্রাশ আর কাঠ কাটার একটা ছুরিও রয়েছে ডেস্কের উপরে।
চশমাটা নামানো।
একটা টাইপরাইটারও পড়ে আছে ধুলোয় মাখামাখি হয়ে।
মাইক্রোস্কোপ থেকে চোখ তুলল লোকটা। রাবারের দস্তানা পরা হাত তুলে নিল কলাই (Engrave) করার যন্ত্র। চোখা মাথাটা ভেজাল পাশে রাখা কালির দোয়াতে। তুলে এনে বাড়তি কালিটুকু ঝেড়ে ফেলল বোতলের মুখে কলমের টোকা দিয়ে। এবার আবার চোখ রাখল মাইক্রোস্কোপের আইপিসে।
হাত চলছে। বিশেষ কলমটা দিয়ে কী লিখছে সে, সে-ই জানে। আর জানে কেবল খোদা।
ছয়
দ্বিতীয় বারের মতো আসা। লি অ্যারেনবার্গের অবশ্য প্রথম বার। ( যথারীতি উঠল ভৌতিক আপত্তি। ভাবল জন: আমরা কি এতই খারাপ? নাকি বাইরের লোক বলে এই অপমান?
স্রেফ অগ্রাহ্য করল ও কুকুরগুলোকে।
শেরিফের রিপোর্ট খুঁটিয়ে পড়ল অ্যারেনবার্গ। বেশির ভাগ তথ্যই জানা। তবু ক্রস-চেক করে নেয়া। হতভাগিনীর ছবিগুলোও দেখল।
ইত্যবসরে ব্লাডহাউণ্ডের ভূমিকা পালন করল জন। একটা ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে গরুখোঁজা করল ওঅশরুম। চোখ এড়িয়ে গেছে, এমন কিছুর আশায়।
ডেবরা জিলেট। ব্রিটিশ। বয়স বাইশ। পার্কিং এনফোর্সমেন্ট অফিসার। সদ্য মুভ করেছে নর্দার্ন ক্যালিফোরনিয়া থেকে। আকর্ষণীয়া। কিন্তু কোনও বয়ফ্রেণ্ড নেই। দারুণ ফ্রেণ্ডলি বলছে সবাই, গড়গড় করে বলে গেল অ্যারেনবার্গ। অনেকটা আপন মনে। অরেগনের শেষ মাথায় পাওয়া গেছে ওর কাপড়চোপড়গুলো। সুয়ারেজ লাইনে। ব্রা, প্যান্টি, ইউনিফর্ম… সব কিছুই রয়েছে। দলা পাকিয়ে রাখা হয়েছিল। কাপড় ঘেঁড়ার ধরন দেখে নিঃসন্দেহ, মেয়েটাকে টুকরো করার পর ছাড়ানো হয়েছে ওগুলো।
ব্যস্ততার মাঝেই কয়েকবার চকিত দষ্টি হানল জন বক্তার মুখের দিকে। অ্যারেনবার্গ যখন থামল, তখন ও পরীক্ষা করছে মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্টের ট্রেটা।
একজন পার্কিং অফিসারের সাথে কীভাবে আলাপ হতে পারে কারও? আবার শুরু করল অ্যারেনবার্গ। সিম্পল। টিকেট খেয়েছিল খুনি। — কোনও মন্তব্য করল না জন। সঙ্গীর কথায় কান রয়েছে। নিজের কাজও করছে একই সঙ্গে। এ মুহূর্তে দেখছে সিঙ্কের উপরে লাগানো আয়ন
আমরা দেখতে পারি, ডেবরা জিলেট গত এক হপ্তায় কাকে-কাকে পার্কিং টিকেট ধরিয়ে দিয়েছে, বাতলাল। অ্যারেনবার্গ। হয়তো কোনও লিড পেয়ে যাব।
এবারও নিশ্চুপ রইল জন। অ্যারেনবার্গের মনে হলো, তার কথায় মনোযোগ নেই। এজেণ্ট ডিউকের। ধৈর্যহারা হলো সে। শুনছেন আপনি। আমার কথা?
তাকাল জন। ফের মন দিল কাজে।