উঁহু। বরং উলটো। পেন্টাগ্রাম এক ধরনের রক্ষাকবচ। শয়তানের হাত থেকে বাঁচাবে তোমাকে। খুবই পাওয়ারফুল। জিনিস। মানে, এসবে যদি বিশ্বাস করো আর কী।
আয়ান লক্ষ করল, হঠাৎ করে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে সিণ্ডি।
একটা কথা বলব, ভাবছিলাম, দোনোমনো করছে। মেয়েটা।
কী?
এই ঘটনাটার মতো আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল তিন বছর আগে। এখন মনে পড়ল। সেবারও হ্যালোউইনে। এক লোক গায়েব হয়ে গিয়েছিল রাস্তা থেকে। আর পাওয়া যায়নি তাকে। ঘটনাটায় বেশ তোলপাড় হয়েছিল এখানে। লোকে বলাবলি করত, আগেও নাকি ঘটেছে এমন ঘটনা।
মুখ চাওয়াচাওয়ি করল আয়ান-আয়মান।
সেনটেনিয়াল হাইওয়েতে? জিজ্ঞেস করল আয়ান।
ঠিক মনে নেই। আমরা এই এলাকায় আছি পাঁচ বছর। তার আগের ঘটনা সম্বন্ধে জানতাম না কিছুই। কয়েক জনের মুখে শুনেছি, কোন্ এক মেয়ে নাকি বছর পাঁচেক আগে খুন হয় ওই রাস্তায়। লোকের ধারণা, মেয়েটার প্রেত এখনও ঘুরে বেড়ায় ওখানে, আর যে-ই ওকে লিফট দেয়, সে-ই গায়েব হয়ে যায়।
টিপিক্যাল হরর গল্প, বিড়বিড় করল আয়মান।
পাঁচ
সাইবার ক্যাফে।
স্থানীয় পত্রিকা দেখছে দুই ভাই। জেরিকো হেরাল্ড।
অনলাইন সংস্করণ। এক বছর করে পিছিয়ে পিছিয়ে দেখছে পহেলা নভেম্বরের সংখ্যাগুলো। ৩১ অক্টোবরে যদি কিছু ঘটে থাকে, সেটার খবর পাওয়া যাবে পরের দিনের কাগজে।
সমৃদ্ধ আর্কাইভ। এমন কী যখন শুধু মুদ্রিত কপি বেরোত, তখনকার ইস্যুগুলোও রাখা হয়েছে স্ক্যান করে।
এক সময় পেয়ে গেল কাক্ষিত আর্টিকেলটা। শুভ্রবসনার আত্মহত্যা। ছবিও রয়েছে কিছু।
দৃষ্টি বিনিময় করল ভ্রাতৃদ্বয়। দুজনেই একই কথা ভাবছে। তা হলে মার্ডার নয়, সুইসাইড! অপঘাতের মৃত্যু আলোচিত হলে যা হয়- এখানেও তা-ই হয়েছে- তিল থেকে তাল। ভুল আছে সিণ্ডির জানায়।
শব্দ করে পড়তে আরম্ভ করল আয়মান:
সেনটেনিয়াল হাইওয়ে থেকে ৩৩ মাইল দূরে এক মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাশা ডিলন (২৫) নাম্নী এক নারী। কাউন্টি শেরিফ স ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলভানিয়া ব্রিজ থেকে পতনের ফলে সলিল-সমাধি হয়ে মহিলার মৃত্যু হয়। পুলিস আত্মহত্যা বলে রায় দিয়েছে এটিকে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
৪৬৩৭ ব্র্যাকেনরিজ রোড নিবাসী মিস ডিলন ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী ও অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন। ডেপুটি রন ট্রাভেলটা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে মহিলার স্বামী বেন ডিলন ৯১১-এ ফোন করে স্ত্রীর নিখোঁজ সংবাদ জানান। পরে মহিলার মৃত দেহ আবিষ্কৃত হলে অসুস্থতার কারণটি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, মাস তিনেক আগে দুর্ঘটনাবশত বাথটাবের পানিতে ডুবে তাঁদের দেড় বছর বয়সী এক মাত্র পুত্রসন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে মহিলা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। শিশুটির মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করতেন তিনি।
মৃত্যুর সময় সাশার পরনে ছিল সাদা গাউন। ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে লাশ।
আমার দেখা সবচেয়ে শান্তশিষ্ট, মিষ্টি মেয়েটি ছিল সাশা, বলেছেন ডিলনদের প্রতিবেশী, ডায়ানা কুপার, সে ছিল একজন আদর্শ মা।
আর পড়ার প্রয়োজন বোধ করল না আয়মান। আরেক বার দেখল মেয়েটার ছবি, মিস্টার ডিলনের ছবি, ব্রিজের ছবি।
ব্রিজটা পরিচিত লাগছে না? বলে তাকাল ভাইয়ের দিকে।
ছয়
মিহি কুয়াশার চাদরে মোড়া রাতটা। বিষণ্ণ গম্ভীর, ঘোলাটে চেহারা দিয়েছে সিলভানিয়া ব্রিজের বাতির আলোকে। বইছে। উথাল-পাথাল জোলো হাওয়া।
সূত্রের আশায় ব্রিজের এমাথা-ওমাথা চষে বেড়াচ্ছে দুই সহোদর। এখান থেকেই অন্তর্হিত হয়েছে চার্লি।
খোঁজাই সার। পাওয়া গেল না কিছু। অবশ্য পুলিস আর পেশাদার গোয়েন্দাদের হাত পড়েছে যেখানে, সেখানে নিজেদের জন্য তেমন কিছু আশাও করেনি।
খোঁজাখুঁজি বাদ দিয়ে ব্রিজের কিনারে দাঁড়িয়ে নিচে ঝুঁকল এবার। সমতল রেলিং-এর উপরে কনুই রেখে দাঁড়িয়েছে কুঁজো হয়ে।
প্রবল স্রোত নদীতে। জলের অবিরাম কোলাহল।
এবার? বলল আয়মান কিছুটা গলা চড়িয়ে।
একটুক্ষণ নীরবতা। ভাবছি।
এসব বাদ দিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে হয় না?
পারলে তো ভালোই হতো, রে। কিন্তু কৌতূহল একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। …চল, ফিরি। আর কিছু করার নেই আজ রাতে।
যাওয়ার জন্য ঘুরল, এবং ভয়ানক চমকে উঠল দুজনে।
ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক নারীমূর্তি! বিপরীত দিকের রেলিং-এর উপরে! গায়ে সফেদ বসন!
সাশা! সাশা ছাড়া কেউ না!
পিছন ফিরে রয়েছে মেয়েটা। ঘাড়ের উপর দিয়ে তাকাল ওদের দিকে। চন্দ্রাহত মানুষের বিজাতীয় হাসি মুখে।
সড়সড় করে ঘাড়ের চুল দাঁড়িয়ে গেল দু জনের। সামনে তাকিয়ে ছেড়ে দিল মেয়েটা নিজেকে। খসে পড়ল ১ রেলিং থেকে।
দুদ্দাড় দৌড়ে গেল দুই ভাই। নিচে তাকিয়ে দেখতে পেল কিছুই। খলবল করছে ঘোলা পানি।
চিৎকার দিল আয়মান, দেখা যায় কিছু?
কিচ্ছু না!
আচমকা উজ্জ্বল এক আলো জ্বলে উঠল দপ করে। সঙ্গে একটা আওয়াজ। ঝটিতি আলো আর শব্দের উৎসের দিকে ঘুরে গেল দুই জোড়া চোখ।
সাঁকোর গোড়ায় রেখেছে ওরা গাড়িটা। সেখান থেকেই আসছে আলো। জলছে হেডলাইট। আর গোঁ-গোঁ আওয়াজটা। ইঞ্জিনের।