হাউ দ্য হেল…
আপনি যদি সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে কথা বলতে চান, তা হলে ১ চাপুন।
চাপল অ্যারেনবার্গ।
অন্য একটা মেসেজ শোনা গেল।
আমাদের প্রতিনিধিরা এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছেন। আপনি চাইলে লাইনে থাকতে পারেন। সিরিয়াল অনুযায়ী আপনার কলটি রিসিভ করা হবে। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে, আগামী তিরিশ মিনিটের আগে সেটি সম্ভব হচ্ছে না…
দুঃখের খ্যাতা পুড়ি! নিরর্থক বলা। তার পরও নিজেকে রুখতে ব্যর্থ হলো অ্যারেনবার্গ। টং হয়ে আছে রেগে। ওর কথার মাঝখানে যে নক হয়েছে দরজায়, বেমালুম এড়িয়ে গেছে কান।
অগত্যা নব ঘুরিয়ে দরজা ফাঁক করল জন। দেখল, আছাড় দিয়ে রিসিভার রাখছে অ্যারেনবার্গ। দৃশ্যটা পীড়াদায়ক। ওকে দেখে খেঁকিয়ে উঠল কুকুরের মতো, কী?
পিত্তি জ্বলে গেল জনের। কিন্তু চেহারায় কোনও এক্সপ্রেশন নেই। ভিতরে ঢুকে লাগিয়ে দিল, দরজাটা। এজেন্ট ডিউক।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল অ্যারেনবার্গ। শব্দ করে ছাড়ল সুইল চেয়ার। অতটা ব্যস্ত হওয়ার দরকার ছিল না। তবু। এ থেকেই বুঝল জন, সত্যিই স্নায়বিক দুর্বলতায় ভুগছে। লোকটা। মানসিক ভারসাম্য নেই।
মেলাবার জন্য তুলছিল জন ডান হাতটা, খপ করে দু হাতে চেপে ধরল সেটা অ্যারেনবার্গ। সরি, অফিসার! বলল কাচুমাচু ভঙ্গিতে। রাগ পানি হয়ে গেছে তার। উপরের টেলিফোন পেয়েছে আগেই। জন ডিউক যে আসছে, জানানো হয়েছে তাকে।
না-না, ঠিক আছে! বিব্রত হয়ে বলল জন। ভদ্র ভাবে ছাড়িয়ে নিল হাতটা।
ওয়েলকাম টু পোর্টল্যাণ্ড! নাটকীয় ভঙ্গিতে স্বাগত জানাল অ্যারেনবার্গ।
অতি-অভিনয় মনে হলো- জনের কাছে। ভদ্রতা করে বলল তবু, ধন্যবাদ।
কী সৌভাগ্য আমার! হমিসাইড ডিপার্টমেন্টে আপনি তো একজন ইয়ে… কী বলে… জীবন্ত কিংবদন্তি! আপনার সাথে কাজ করতে পারব বসুন না! কফি?
তোষামোদি জিনিসটা একেবারেই পছন্দ করে না জন। নিজে ও তেল দেয় না কাউকে, কেউ দিলে বিরক্ত হয় রীতিমতো।তিক্ততায় ছেয়ে যাচ্ছিল মনটা, আপ্যায়নের প্রসঙ্গ উঠতে আপাতত মুলতবি ঘটল সেটার।
থ্যাঙ্কস, জানাল সম্মতি।
ওয়েটারের ভূমিকা পালন করতে চলল লোকটা। কামরাতেই রয়েছে রেডিমেড কফির বন্দোবস্ত।
দু কাপ কফি ঢেলে প্রস্তাব করল অ্যারেনবার্গ, আমাকে কিন্তু লি বলে ডাকবেন। ওসব মিস্টার-ফিস্টার শুনতে অস্বস্তি লাগে আমার।
জনের ঠোঁটে দেখা দিল সৌজন্যের হাসি। ঠিক আছে, লি।
থ্যাঙ্ক ইউ, অফিসার।
নো অফিসার। জন। অর ইউ ক্যান কল মি জে. ডি.।
আই প্রেফার- জেডাই। হাসছে অ্যারেনবার্গের পান্না সবুজ চোখ।
মে দ্য ফোর্স বি উইদ ইউ, স্টার ওঅরস মুভির জেডাইদের অনুকরণে বলে উঠল জন।
হঠাৎ করেই ফুরিয়ে গেল কথা। ডিসপোজেবল কফি কাপে চুমুক দিচ্ছে ওরা নীরবে। বন্ধুত্বপূর্ণ নজরে পরস্পরকে দেখছে। এ কদমছাট চুল। হুটহাট মাথা গরম হয়ে যায় বলেই হয়তো চুল ছোট রাখে অ্যারেনবার্গ। কালো চুলগুলো বেশির ভাগই সাদা হয়ে এসেছে। অকালে। বয়সে জনের চেয়ে ছোটই হবে সে। চুলের সাইজে দাড়ি-গোঁফ রেখেছে। সেগুলোও সাদাকালো। প্রশস্ত কপাল। বড় বড় কান। মোটা ভুরু। ধূসর। ফুটবলের মতো গোল মাথা। শুধু কপালটা, মনে হয়, পাথর কুঁদে বানানো। ঠেলে বেরিয়ে আছে। উপরিভাগ। চকচক করছে। রাগী মানুষের সিগনেচার প্রশস্ত ওই ললাট। পাতলা ঠোঁটের দুই কোণ বেঁকে থাকে সব সময়।
জামা-কাপড়ের ব্যাপারে উদাসীন লোকটা। পরনের শার্টটা অতি ব্যবহারে মলিন। ভালো করে দেখলে ফিরোজার উপর প্রায়-অদৃশ্য সাদা স্ট্রাইপগুলো চোখে পড়ে। আস্তিন দুই ভাঁজ করে গোটানো। ভাঁজ খেয়ে গেছে কলারের প্রান্ত। স্টিল-ব্যাণ্ড ঘড়ি আঁটা সুঠাম কবজিতে।
জনের কীর্তিকলাপ সম্বন্ধে জানা থাকলেও চেহারায় চিনত অ্যারেনবার্গ। তবে কল্পনায় যে ছবিটা এঁকেছিল, তার সঙ্গে মিলে গেছে প্রায়।
আহামরি কোনও চেহারা নয় জন ডিউকের। মিশ্র রক্ত রয়েছে বোধ হয় শরীরে, ভাবল। মুখটা লম্বাটে। ক্লিন শেভড। চিবুকে খাঁজ আছে। চোখের দৃষ্টিটা ভাসা ভাসা। কবিদের মতো। সাধারণ বেশবাস। তার পরও কী যেন। রয়েছে, লোকটার টোটাল অ্যাপিয়ারেন্সে। একবার তাকালে সহজ নয় চোখ সরানো।
কী নাম আপনার মেয়ের?
অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল অ্যারেনবার্গ, দেখল, টেবিলে রাখা ফোটোগ্রাফটার দিকে তাকিয়ে আছে এজেন্ট ডিউক।
পরক্ষণে তাকাল চোখ তুলে।
কন্যার ছবির দিকে এক ঝলক চাইল বাপ। রেনেসমি।
দারুণ নাম তো! অর্থ কী?
অর্থ… আসলে আমিই বানিয়েছি নামটা… ডিকশনারিতে পাবেন না… অর্থটা আমারই দেয়া…
আই অ্যাপ্রিশিয়েট দ্যাট।
মানেটা হলো- রিবর্ন।
ইট স টু গুড। রিয়েলি।
থ্যাঙ্কস আ মিলিয়ন! খুশি উপচে পড়ছে গর্বিত পিতার চোখমুখ থেকে।
মেনশন নট। বাপ-বেটি পোজ দিয়েছে- ভাবছে জন মা নেই কেন? সেপারেটেড? হবে হয়তো।
কাল রাতেই জেনেছি এভিডেন্সগুলো সম্পর্কে। ফ্যাক্স করে দিয়েছে ইনফোগুলো, চট করে কাজের কথায় চলে এল। এজেন্ট অ্যারেনবার্গ। কেসটা নিয়ে কিছু হোমওঅর্ক করেছি আমি। সবগুলো আলামত মিলিয়ে খসড়া ডিসিশন তৈরি করেছি একটা। দেখবেন?
আগ্রহের সঙ্গে।
ডেস্কের উপরেই ছিল কাগজপত্রগুলো। হলদে রঙের এক প্লাসটিক ফোল্ডার তুলে নিয়ে জনের দিকে বাড়িয়ে ধরল। অ্যারেনবার্গ।