ঝটপট সৌজন্য সারল মোলিনা। এদিকে, প্লিজ।
চকিতে চারপাশে দষ্টি বুলিয়ে আনল জন। দেয়াল আর। মেঝেতে বর্গাকৃতি টাইলস। একরঙা। ওশন-বু। দুজন টেকনিশিয়ান টেপ মেজার দিয়ে মাপজোক করছে। আরেক জন প্রাসটিকের ছোট এভিডেন্স-ব্যাগে ভরছে কিছু।
ডিটেক্টিভের কাছ থেকে নিয়ে রাবার-গ্লাভস পরল জন।
খণ্ডিত লাশ। বেসিনের কাছে পড়ে রয়েছে। কোমর। থেকে উপরের অংশ একদিকে, নিচেরটা আরেক দিকে। গোড়া থেকে বিচ্ছিন্ন দুই হাত। মাথাটাও। মুখে শক্ত করে গ্রে। ডাক্ট টেপ সাঁটা।
দেখে-টেখে আবার সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে দিল জন। চাদরে ছোপ ছোপ রক্ত
নৃশংস ব্যাপার। অভ্যস্ত, তার পরও গা গোলাচ্ছে।
সিধে হলো দুজনে।
ধূসর-সুটের বোতাম আটকাল মোলিনা। সিকিউরিটির লোক, জানাল ভিকটিমের পরিচয়।
লাশের একটা হাত আর কবজির কিছুটা বেরিয়ে আছে। রক্তমাখা চাদরের নিচ দিয়ে। সেদিকে চেয়ে রয়েছে জন।
বড় বড় নখ আঙুলে। নখে ম্যাজেন্টা নেইলপলিশ।
তিন
সিয়াটল, ওঅশিংটন।
যদিও সাতসকাল, কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ রোদ উঠে গেছে।
পর-পর দু কাপ কফি খেয়েও রাত্রি জাগরণের ক্লান্তিটা গেল না জনের। আয়না দেখেনি, তবু শত ভাগ নিশ্চিত, চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে।
কফিশপটা নতুন। নামটা ক্রিয়েটিভ। আহ। মালিক এক বাঙালি ভদ্রলোক। খাস চাটগাইয়া। অল্পদিনেই পসার জমিয়ে। নিয়েছেন। যতক্ষণ ওপেন লেখা সাইনবোর্ড ঝোলে দরজায়, পুরোটা সময়ই ভিড় লেগে থাকে তার দোকানে। সব বয়সী নারী-পুরুষ আসে গলা ভেজাতে। আড্ডা পেটায়।
শুরুতে নামের টানে আসত। ভিনদেশি মালিকের সুরুচির পরিচয় পেয়ে মজতে সময় লাগেনি। এখন অনেকেই নিয়মিত খদ্দের।
অন্যান্য ক্যাফেটেরিয়ার সঙ্গে এটার পার্থক্য হচ্ছে, শুধু কফিই পাওয়া যায় এখানে। আর কিছু না। তার পরও বাঙালির জয়-জয়কার। হবে না-ই বা কেন! কী নেই এখানে? সারা পৃথিবীতে যত রকম বেভারেজ রয়েছে কফির, প্রায় সবগুলোই মিলবে এই পানশালায়। সেই কারণে একচ্ছত্র আধিপত্য বাংলাদেশি এই কফিবারের।
দোকানের ভিতরটাতে শোভাবর্ধন করছে গোটা পাঁচেক সুদৃশ্য বনসাই আর কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা ল্যাণ্ডস্কেপ। বিশাল ক্যানভাসে বিধৃত হয়েছে আবহমান বাংলা। লাল আর সবুজেরই আধিক্য।
সময় আর আবহাওয়া বুঝে বাজানো হয় গান বা মিউজিক। মৃদু ভলিউমে। যেমন- এখন বাজছে রাগ বিভাস। সকালের রাগ। কাঁচঘেরা আলোকোজ্জ্বল অভ্যন্তরে অপূর্ব আবেশ ছড়াচ্ছেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। ঢিমেতালে ঘোরা চার ব্লেডের ফ্যানগুলো যেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে।
নতুন ন্যাপকিন বিছিয়ে তার উপরে ধূমায়িত কাপ রাখল গোরা ওয়েইট্রেস। এটা তিন নম্বর কফি।
রীতিমতো সুন্দরী মেয়েটা। ব্রুনেট। নীল নয়না। ভারি চোখের পাপড়ি। বাম কানে এক জোড়া দুল। লতি ফেঁড়ায়নি, কানের পাশে। হালকা হলুদ কাপড়ের পোশাকে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে ওকে। সকালটার মতোই সজীব। ঠোঁটে হালকা শেডের লিপস্টিক।
জনের ডান পাশের কাঠের টুল দখল করল একজন। ফরমাইকা লাগানো কাউন্টারে কনুই রাখল।
রিফ্লেক্স-অ্যাকশনের বশে মাথা ঘুরিয়ে চাইল জন।
জেফরি রাশ। এজেন্ট সে-ও। দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসেছে বলে ওকে ঢুকতে দেখেনি জন।
কফি খাও! অফার করল জন।
প্লিজ।
ওয়েইট্রেসের উদ্দেশে মাথা নাড়ল জন।
কোন ফ্লেভার? জিজ্ঞেস করল মেয়েটা।
ব্রেজিলিয়ান, পছন্দ রাশের।
ঘুরে চলে গেল নীলাঞ্জনা।
তারপর? খবর জানতে চাইল জন।
নেগেটিভ। কারও সাথেই মেলেনি খুনের আলামতগুলো। ডেটাবেইসে নেই কালপ্রিট।
এখন তা হলে…
অপেক্ষা।
কিন্তু খুনি কি অপেক্ষা করবে? আরও খুন করে যদি?
সেটারই অপেক্ষা। হোমস ক্রাইটেরিয়া অ্যাপ্লাই করা ছাড়া আর তো কোনও রাস্তা দেখছি না।
মানতে পারলাম না। অসন্তোষে মাথা নাড়ল জন। তদন্তের এই পদ্ধতিটা একদম পছন্দ নয় ওর। তিরিশ দিনের মধ্যে একই রকম আরও দুটো খুন হয় যদি, আলামত মিলিয়ে তখন হন্তারককে ধরার চেষ্টা করা হয়।
হোমস ক্রাইটেরিয়ার বাজে দিক এটাই- দু জনকে অন্তত মরতে হবে। ওর কাছে অমানবিক মনে হয় এটা।
তা হলে তুমিই বলো, কীভাবে এগোব আমরা।
জবাব এল না জনের মাথায়।
ভালো কথা। এই কেসে তুমি একজন পার্ডনার পাচ্ছ। লি অ্যারেনবার্গ নাম তার। পোর্টল্যাণ্ড পি. ডি.-তে আছে। স্যান ডিয়েগোর খুনটার কথা মনে আছে তোমার? হাইওয়ে এইট কিলার?
আছে।
ব্যাটাকে ধরার পিছনে অবদান রয়েছে এই মানুষটার।
আই সি।
বিহেভিয়োরাল সায়েন্সে অগাধ জ্ঞান লোকটার। একটাই সমস্যা- তার নিজের মেজাজ-মর্জির ঠিকঠিকানা নেই। কাষ্ঠ হাসল রাশ। সমঝে চোলো, উপদেশ দিল।
চার
লি অ্যারেনবার্গের অফিস।
উজ্জ্বল আলো সইতে পারে না সে। শেড দেয়া কয়েকটা বাতি জ্বলছে কামরায়।
অন্য সব অফিসরুমের সঙ্গে আরেকটা পার্থক্য চোখে পড়ে সহজেই- দেয়ালে লাগানো বিশাল এক আয়না। যে-ই। ঘরে ঢুকবে, ওটার উপরেই চোখ পড়বে সবার আগে। তারপর অবধারিত ভাবেই বাঁধাই করা সার্টিফিকেট দুটোর দিকে। আয়নার পাশে ঝুলছে ওগুলো।
সাত। নয়। চার। শেষ ডিজিটটা চেপে অপেক্ষা করল অ্যারেনবার্গ। কানে ফোন-রিসিভার।
ওপাশে এক সুকণ্ঠী।
দুঃখিত। এই নাম্বারটি বর্তমানে খালি আছে। অনুগ্রহ করে টেলিফোন অফিসে যোগাযোগ করুন…
রেকর্ডেড মেসেজ।