কিছু মিন করছি না।
ইন্টারেস্টিং কেস।
কথাটা কে বলেছে, দেখার জন্য ঘুরে দাঁড়াল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড দেখল দুই তরুণকে নিরীখ করল আপাদমস্তক। চেহারায় অদ্ভুত মিল দুজনের।
হু আর ইউ?
পেশাদারি কায়দায় ব্যাজ বের করে দেখাল আয়ান।
ফেডারেল মার্শাল।
ভুরু কুঁচকে গেছে ডেপুটির। ওয়াও। মার্শাল হওয়ার জন্য বয়সটা একটু কমই তোমাদের।
মাপা হাসি হাসল আয়ান। থ্যাঙ্কস ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল গাড়ির চারপাশে।
আয়মানও ভান করছে দেখার। হঠাৎ খেয়াল হলো, ওরও কিছু বলা দরকার। মাতব্বরির ঢঙে জিজ্ঞেস করল, কোনও থিয়োরি?
কিডন্যাপিং মে বি। শ্রাগ করল ব্র্যাণ্ড।
ক্যান আই হেল্প ইউ, বয়েজ? জলদগম্ভীর কণ্ঠ শোনা গেল একটা।
তাকাল তিনজনে।
যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। শেরিফ। কোমরের বেল্টে আটকানো হোলস্টারে ঝুলছে পিস্তল। গালে একটা গোটা।
দু জন এফবিআই এজেন্ট শেরিফের সঙ্গে। আসল এজেন্ট। একজন লম্বা, একজন একটু খাটো। একজনের কালো চুল, আরেক জনের সাদা। চিকনা। মোটকা। আজব। জুড়ি। একই রকম পোশাক-পরিচ্ছদ পরনে। ফর্মাল। তিনজনের চোখেই কালো সানগ্লাস। মুখের চেহারায় পেশাদারিত্ব।
গলা খাঁকারি দিল আয়ান। নো, স্যর। থ্যাঙ্কস, বলল তাড়াতাড়ি। কাজ শেষ আমাদের। পা চালাল নিজেদের গাড়ির দিকে।
ওকে অনুসরণ করল আয়মান। চিন্তিত চেহারায় দুই ভাইয়ের চলে যাওয়া দেখতে লাগল শেরিফ ইস্টউড।
লোকটার চোখের আড়াল হতেই আয়ানের মাথার পিছনে চাটি মারল আয়মান।
আঁউ! শুধু শুধু মারছিস কেন?
আরেকটু হলেই তো গেছিলাম চোদ্দ শিকের ওপারে!
তাতে কী! নো রিস্ক, নো গেইন।
চার
কিছুক্ষণ পর টাউনের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল ওদেরকে। উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি নয়, খুঁজছে লাইব্রেরি কিংবা সাইবার ক্যাফে।
মুভি থিয়েটারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল আয়ান। সাউথ-ওয়েস্ট মিউজিয়মের উলটো পাশে সিনেমাহলটা।
কী হলো? শুধাল আয়মান।
চার্লির বান্ধবীর নামটা মনে আছে?
মিণ্ডি?
ব্যাড শট। সিণ্ডি।
সিণ্ডি-মিণ্ডি- যেটাই হোক, হু কেয়ারস?
ওই দেখ।
ভাইয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল আয়মান। একটা দৃশ্যই দেখতে পেল দেখার মতো। দেয়ালে পোস্টার সাঁটাচ্ছে। এক তরুণী।
ওই মেয়েটাই, বাজি ধরে বলতে পারি, নিঃসন্দেহ আয়ান।
শিয়োর হচ্ছিস কী করে?
কানা! পোস্টার দেখ। কী লেখা?
একটা শব্দই পড়া যাচ্ছে দূর থেকে। মিসিং।
ওদের না ঝগড়া হয়েছে?
সো হোয়াট? ঝগড়াঝাঁটি ছাড়া প্রেম হয় নাকি?
হুম।…কথা বলতে চাস?
আবার জিগায়!
এগিয়ে গেল ওরা।
সাদাকালো পোস্টার। বোঝাই যায়, কমপিউটারে বানিয়ে প্রিন্ট নেয়া হয়েছে। এক তরুণের ক্লোজ-আপ ছবি। উপরে লেখা: নিখোঁজ, নিচে লেখা: চার্লি অ্যালান। ঠিকই ধরেছে। আয়ান।
এক পলক চাইল মেয়েটা ওদের দিকে। আরও অনেকগুলো পোস্টার ওর হাতে। চলে যেতে নিচ্ছিল, ডেকে থামাল আয়ান।
ইয়াহ? কটা রঙের চোখ প্রসারিত করে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। ওষ্ঠের চেয়ে অধর পুরুষ্টু ওর। লিপস্টিক ছাড়াই লোভনীয়। তিল আছে উপরের ঠোঁটের উপরে। বাম ভুরুতে পিয়ার্সিং করিয়েছে। গায়ে ছেলেদের শার্ট আর লেগিংস।
তোমার কথা অনেক শুনেছি চার্লির কাছে, চাপা মারতে আরম্ভ করল আয়ান।
তোমরা চেনো ওকে?
বা, রে! চিনব না? কত বাস্কেটবল খেলেছি একসঙ্গে!
প্রমাদ গুনল আয়মান।
আমার নাম আয়ান। আর ও হচ্ছে—
আয়মান।
চার্লি কখনও বলেনি তোমাদের কথা। হাঁটা ধরল সিণ্ডি।
পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল আয়ান, অবাক হচ্ছি না। অনেক দিন দেখাসাক্ষাৎ নেই তো!
পা চলল কয়েক কদম।
ওকে সারপ্রাইজ দিতেই আসলে এখানে আসা আজকে, আবার বলল আয়ান। কিন্তু নিজেরাই বেকুব হয়ে গেলাম। ব্রিজের উপরে গাড়ি দেখেছি ওর। সেই থেকে মাথা ঘামা সমস্যাটা নিয়ে… খোঁজখবর করছি।
কোনও ক্লু পেলে? আশান্বিত হতে চাইল মেয়েটা।
নট ইয়েট। কিন্তু তুমি বোধ হয় সাহায্য করতে পারো কিছু। ক টা প্রশ্ন করলে মাইণ্ড করবে?
করো।
চলো, কোথাও গিয়ে বসি।
একটা ফাস্ট ফুডশপে ঢুকল ওরা। বসল নিরিবিলি একটা টেবিল বেছে নিয়ে।
সরাসরি রোদ আসে বলে পরদা টেনে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছায়া। অন্ধকার, তার পরও উজ্জ্বল হয়ে আছে ভিতরটা। আলো ছাড়াই।
ওরা বসতে-না-বসতেই অর্ডার নিতে হাজির হলো। ওয়েইট্রেস। ছোট এক হ্যাণ্ডবুক আর পেনসিল ওর হাতে।
ব্ল্যাক কফি নিল সিণ্ডি। আয়মান আর আয়ান নিল কোক।
ছোট এক চুমুক দিল সিণ্ডি কফিতে। আমিই বলি প্রথমে। কাল রাতে ফোনে ঝগড়া হয়েছিল আমাদের। বোকার মতন সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা। কে জানে, এই কারণেই কি না…
তার মানে বলতে চাও, রাগ করে কোথাও চলে গেছে। চার্লি?
হতে পারে না? পালটা প্রশ্ন করল সিণ্ডি।
পারে। আচ্ছা, ওর কোনও কথায় কি খটকা লেগেছে। তোমার কাছে?
তেমন কিছু তো মনে হয়নি, মাথা নেড়ে বলল সিণ্ডি। বলছিল, একটা জরুরি মিটিং আছে ওর আজকে।
কীসের মিটিং?
অফিশিয়াল।
তা হলে নিজে থেকে উধাও হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তোমার লকেটটা সুন্দর, অপ্রাসঙ্গিক একটা মন্তব্য করল আয়মান।
লকেটটা স্পর্শ করল সিণ্ডি। গোল একটা বৃত্তের মধ্যে পঞ্চভুজ। থ্যাঙ্কস। চার্লি দিয়েছে।
মানে জানো এটার?
লকেটটা? উম… যদূর জানি, ভূতপ্রেত-সংক্রান্ত কিছু। শয়তানের চিহ্ন।