আমি কিন্তু আরেকটা জিনিস পেয়েছি, জ্বলজ্বল করছে। আয়ানের মুখের চেহারা।
কী?
ইনফর্মেশন। তথাকথিত ওই গ্রিজলির কবল থেকে ফিফটি-নাইনে বেঁচে ফিরেছিল এক ভাগ্যবান। এক কিশোর ছেলে।
বেঁচে আছে এখনও?
সেটাই জানতে হবে আমাদের।
ছয়
দেখো, ছেলেরা… জানি না, কেন আমাকে জিজ্ঞেস করছ। এসব। আমার যা বলার, অসংখ্য বার বলেছি তা নানান। জায়গায়। খুঁজলেই পেয়ে যাবে রেকর্ড। মিস্টার কিলমারের ঠোঁটে ঝুলছে সিগারেট। চোপসানো মুখে এক গাল দাড়ি। পেকে গেছে সব।
ব্যাপারটা হচ্ছে- আমরা বিশ্বাস করছি না, গ্রিজলি ছিল। সেটা, দৃঢ় গলায় বলল আয়ান।
রুক্ষ চোখে তাকিয়ে আছে বুড়ো। সিগারেটে টান দিল। কষে।
কেন? কীসের সন্দেহ? জিজ্ঞেস করল খরখরে গলায়।
কারণ, হামলাগুলো হয়েছে একটা প্যাটার্ন ধরে। কে কবে শুনেছে, তেইশ বছর পর-পর অ্যাটাক করে গ্রিজলি!
অদ্ভুত দ্যুতি ফুটে উঠল বৃদ্ধ লোকটির চোখে। ধরে ফেলেছ? কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, না, গ্রিজলি ছিল না ওটা!
তা হলে কি মিথ্যে বলেছেন সবার কাছে? কেন বললেন?
কী হতো সত্যিটা বললে? কেউই তো বিশ্বাস করত না!
আমরা করব।
কী দেখেছিলেন আপনি, মিস্টার কিলমার? জবাব চাইল আয়মান।
চুপচাপ সিগারেট টানতে লাগল বৃদ্ধ। কিছুই না, বলল শেষমেশ। এত দ্রুত নড়তে পারে ওটা, কিছুই বোঝার উপায় নেই। তবে আওয়াজ শুনেছি… গর্জন। মানুষ কিংবা আমার জানা কোনও জানোয়ারে করতে পারে না ওরকম।
ঘটনাটা বলুন, প্লিজ।
রাতের বেলা হানা দিয়েছিল আমাদের কেবিনে। ওটা যখন এল, ফায়ারপ্লেসের সামনে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলাম আমি। না, জানালা কিংবা দরজা ভেঙে ঢোকেনি, খুলে ঢুকেছে। ভালুকে করতে পারে এরকম? মা-বাবার চিৎকার শোনার আগপর্যন্ত টেরও পাইনি কিছু।
ওটা মেরে ফেলেছিল ওঁদেরকে? জিজ্ঞেস করল আয়ান।
মিস্টার কিলমারের চোখ জোড়া ছলছল করছে। মাথা দোলালেন। …আর আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গলে। কেন মারেনি, সেদিন থেকে জিজ্ঞেস করে চলেছি নিজেকে।
উদ্ধার পেলেন কীভাবে?
জ্ঞান হারিয়েছিলাম। চেতনা ফিরতেই জঙ্গলে আবিষ্কার করি নিজেকে। অনেক কষ্টে ফিরে আসি সেখান থেকে।
কলারের কাছে হাত চলে গেল বৃদ্ধের। লম্বা তিনটে আঁচড় দেখাল কাপড় সরিয়ে।
কিছু কি বোঝা যায়?
ঠিক বুঝতে পারছি না, স্বীকার করল আয়ান।
আয়মানও মাথা নাড়ল।
ভয়ঙ্কর কিছু একটা বাস করে ওই জঙ্গলে, নিজের ধারণা জানিয়ে দিল কিলমার। কোনও ধরনের পিশাচ-টিশাচ ওটা।
.
পরে, মোটেলের বিছানায় শুয়ে যখন নানা রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে দুই ভাই, বলল আয়ান, ভূতপ্রেত হলে তো দরজা খোলার দরকার পড়ে না। চাইলেই ঢুকতে পারে দেয়াল ভেদ করে।
এটা বোধ হয় অন্য কিছু… কর্পোরিয়েল।
কর্পোরিয়েল?
দেহধারী ভূত আর কী।
থাবার আঁচড়, দ্রুত গতি- এসব দেখে আমার কিন্তু একটা কথাই মনে হয়।
কী সেটা?
মায়ানেকড়ে!
সাত
পরদিন।
আমি কিন্তু এখনও মনে করছি না যে, আসাটা উচিত হচ্ছে ওর। রনিকে–
দেখুন, মিস্টার কনরয়–
জানি, কী বলবে। টাকা দিয়েছ আমাকে। কিন্তু তোমাদের নিরাপত্তার দিকটা–
দৃশ্যপটে একটা গাড়ি ঢুকে পড়ায় এবারও শেষ করতে পারল না কনরয়।
আয়ান-আয়মান নেমে এল গাড়ি থেকে।
ভালোই হলো, বেরিয়ে পড়েননি, এক গাল হেসে বলল আয়মান। রওনা হচ্ছিলেন বুঝি? চলুন তা হলে, যাওয়া যাক।
আপনারাও যাচ্ছেন নাকি? অবাক হয়েছে ডেইজি, খুশিও।
কে এই ছেলেগুলো? জানতে চাইল রয়।
পার্ক সার্ভিস, নিজেদের পরিচয় দিল আয়মান।
তার মানে, রেঞ্জার?
দ্যাটস রাইট।
এই পোশাকে হাইক করবেন? বিস্মিত দেখাল ডেইজিকে।
নিজের দিকে তাকাল আয়মান। বাইকার বুট আর জিনস ওর পরনে। অন্য দিকে খাকি শর্টস পরেছে মেয়েটা।
ইয়ে… আমতা আমতা করল আয়মান। শর্টসে আনইজি লাগে আমার!
.
জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে দলটা। সবার আগে রয়েছে রয়। তারপর আয়ান, ডেইজি, রনি আর সব শেষে আয়মান।
শিকারের কী রকম অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার? হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল আয়ান।
প্রচুর, পিছনে তাকিয়ে জবাব দিল কনরয় গম্ভীর মুখে। অল্প বয়সী দুটো ছোকরা দলে জুটে যাওয়ায় যার-পর-নাই বিরক্ত ও।
অ। তা, কী ধরনের জানোয়ার শিকার করেছেন এ পর্যন্ত?
হরিণ। কখনও কখনও ভালুকও। ।
লোকটাকে অতিক্রম করে এগিয়ে গেল আয়ান। পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, পিছন থেকে হামলার শিকার হয়েছেন কখনও?
জবাব না দিয়ে খপ করে ছেলেটার কাধ আঁকড়ে ধরল, রয়। চোয়ালে ভর করল কাঠিন্য।
কী হয়েছে? থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল আয়ান। আটকালেন কেন?
মাটি থেকে একটা ডাল তুলে নিল কনরয়। খোঁচা মারল শুকনো পাতার বিছানায়। সঙ্গে সঙ্গে খট করে বন্ধ হয়ে গেল পাতার নিচে ঘাপটি মেরে থাকা ভালুক-ফাঁদের হাঁ। আরেকটু হলেই পা দিতে যাচ্ছিল ওতে আয়ান।
রেঞ্জার, না? মুখ বাঁকিয়ে হাসি দিল শিকারি। ডালটা ছুঁড়ে ফেলে আগে বাড়ল।
.
ব্ল্যাকওঅটর রিজের কাছাকাছি পৌঁছে ঘোষণা করল কনরয়, আশপাশটা রেকি করে আসতে যাচ্ছে ও। ওরা যেন কোথাও না যায়।
একা যাওয়া উচিত হচ্ছে না আপনার, কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে বলল আয়ান।
দ্যাট স সুইট অভ ইউ। এই প্রথম স্বাভাবিক হাসি দেখা, গেল লোকটার মুখে। নিজেদের খেয়াল রেখো তোমরা।
আমি ঠিকই থাকব।
.
রনি! ডেইজি! এদিকে! শোনা গেল কনরয়ের উত্তেজিত কণ্ঠ।