অযথা দুশ্চিন্তা করতে মানা কোরো তোমরা মেয়েটাকে। আমার ধারণা, ভালোই আছে ম্যাডি… তারুণ্যের পাগলামিতে পেয়েছে হয়তো।
বলব, স্যর। অফিসারের নেমট্যাগটা পড়ল আয়ান। স্যাণ্ডলার। অনুমতিপত্রটার কপি যদি দেখানো যেত ওকে, তা হলে হয়তো শান্ত হতো মেয়েটা…
.
পাঁচ মিনিট পর ফর্মের ফোটোকপি নিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল ওরা। ডেইজিকে দেখানো-টেখানো বাজে কথা, নিজেদের দেখাটাই ছিল উদ্দেশ্য।
সোজা অকুস্থলে রওনা হই না কেন? প্রস্তাব করল আয়মান।
তা তাড়া কীসের এত?
না… ব্ল্যাকওঅটরের কো-অরডিনেটস তো জানি। দেরি না করে রওনা হয়ে গেলে ভালো না? নাকি ভাবছিস, ডেইজির সাথে কথা বলে নিলে লিড পাওয়া যাবে কিছু?
ঠিক তা-ই ভাবছি আমি।
চার
গার্ডনার হাউসের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ওরা। বেল বাজাল
আয়মান। ২ মিনিট খানেক পর খুলে গেল দরজা। জি?
আপনি নিশ্চয়ই ডেইজি… মানে, মিস গার্ডনার? মেয়েটাকে মাথা নাড়তে দেখে যোগ করল, আমার নাম আন্দালিব উন্ন। আর ও হচ্ছে আন্দালিব গুড়। পার্ক সার্ভিস থেকে আসছি আমরা। রেঞ্জার স্যাণ্ডলার পাঠিয়েছে। আপনার ভাইয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন ছিল কিছু।
ইতস্তত করছে ডেইজি। দ্বিধা ঝেড়ে বলল, আইডি দেখান আপনাদের।
দেখাল ওরা। তদন্তে লাগতে পারে ভেবে আগেভাগেই বানিয়ে এনেছে কার্ডগুলো। ডিজাইনের আইডিয়া পেয়েছে ইন্টারনেট থেকে। ওরা যে আসছে, সে-ব্যাপারে ডেইজিকে কিছু না জানানোর অনুরোধ করেছিল বন্ধুটিকে। ওদের আসল পরিচয় যত কম লোক জানে, ততই ভালো।
আসুন। সন্তুষ্ট ডেইজি পুরো মেলে ধরল দরজা।
ধন্যবাদ।
কাজ করছিল, সোজা কিচেনে নিয়ে এল মেয়েটা নকল রেঞ্জারদের। সেখানে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছে আরেক জন। রনি।
তো, মিস্টার গার্ডনার যদি দু-চারদিন না ফেরেন, কী করে বুঝতে পারেন আপনারা, কিছু একটা ভজকট হয়েছে? শুরু করল আয়মান।
চুলা থেকে নামিয়ে কিচেন-টেবিলের উপরে একটা বাউল রাখল ডেইজি। সব সময় যোগাযোগ রাখে ও। মেইল করে… ছবি পাঠায়… আর ছোট ছোট ভিডিয়ো-মেসেজ। গত তিন দিন ধরে খবর পাচ্ছি না কোনও। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল মেয়েটার কপালে।
এমনও তো হতে পারে… যেখানে আছেন, ফোনের নেটওঅর্ক নেই সেখানে, বাতলাল আয়ান।
উঁহু… স্যাটেলাইট ফোন আছে ওর কাছে, সম্ভাবনাটা নাকচ করে দিল ডেইজি।
আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না, দু দিনের জন্য সমস্ত নেটওঅর্কের বাইরে থাকার ইচ্ছে জাগল ওঁর? প্রশ্ন। আয়মানের।
না, কক্ষনো করবে না এটা, বোনের হয়ে জবাব দিল রনি।
এত শিয়য়ার হচ্ছেন কীভাবে?
আমি বলছি, বলল ডেইজি। ছোট বেলায় বাপ-মাকে হারিয়েছি আমরা। তারপর থেকে একটা অলিখিত চুক্তি হয়েছে আমাদের কক্ষনো টেনশনে রাখব না অন্যদের।
হুম। …ওঁর পাঠানো ছবিগুলো কি দেখতে পারি?
অবশ্যই।
ল্যাপটপ-ফোল্ডারে রাখা ছবিগুলো ওপেন করে দেখাতে লাগল রনি। এরপর ক্লিক করল একটা ভিডিয়ো-ফাইলে। চলতে আরম্ভ করল সর্বশেষ পাঠানো ভিডিয়ো-বার্তা।
হাই, ডেইজি। হাই, রনি। কী অবস্থা? এক হপ্তা পুরল আজ আমাদের ক্যাম্পিং-এর। ব্ল্যাকওঅটর রিজের কাছাকাছি রাত কাটাচ্ছি এখনও। …ভালোই আছি আমরা। নিরাপদে আছি। কাজেই, একদম চিন্তা করবে না, কেমন? কালকে আবার কথা হবে। টেক কেয়ার। বাই। ( ছবি আর ভিডিয়োগুলো ফরওঅর্ড করে দিন তো আমাকে! চাইল আয়মান। নাকি আপত্তি আছে?
না-না, আপত্তি কীসের? বলল ডেইজি।
ওরা যখন বেরিয়ে আসছে, জানাল মেয়েটা: শুরুতে গা করছিলেন না আপনারা, নিজেই সেজন্য ভাড়া করেছি একজনকে। কাল সকালে আসার কথা। আর তো দেরি করা যায় না।
বুঝতে পারছি আপনাদের অবস্থাটা, সহানুভূতি প্রকাশ করল আয়মান।
পাঁচ
সন্ধ্যা।
একটা রেস্তোরাঁয় কিছু পেটে দিতে এসেছে ইকরামুল্লাহ ভাইয়েরা। দখল করেছে অপেক্ষাকৃত নির্জন এক টেবিল।
পেপসি হাতে, সুন্দরী এক ওয়েইট্রেস ওদের পাশ কাটাতেই স্থানীয় একটা জার্নাল খুলল আয়ান। যা বুঝলাম… লোকজনের তেমন যাতায়াত নেই রিজটায়। যারা যায়, বেশির ভাগই স্থানীয় ক্যাম্পার। এপ্রিল মাসে দু জন হাইকার নিখোঁজ হয়েছে ওখানে।
তদন্ত হয়নি?
হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত।
দুঃখজনক। আচ্ছা, এরকম ঘটনা কি আরও আছে?
হ্যাঁ, উনিশ শ বিরাশি সালে জার্নালের ভাজ থেকে পেপার কাটিং-এর একখানা ফোটোকপি বের করল আয়ান।
তুই যখন এদিক-ওদিক খোঁজখবর করছিলি, লাইব্রেরি থেকে জোগাড় করেছি এটা। আটজন মানুষ হারিয়ে গিয়েছিল ওই বছর। গ্রিজলি অ্যাটাক- এমনটাই ভাষ্য কর্তৃপক্ষের। ভাইকে দেখতে দিল ও কাগজটা।
লস্ট ক্রিক গেজেট-এর লেখাটায় চোখ বোলাল আয়মান। ১ এ ছাড়া উনষাট আর ছত্রিশ সালেও আছে এরকম ঘটনা, তথ্য দিল আয়ান। প্রতি তেইশ বছর পর-পর একটা করে অঘন। ঠিক যেন ক্যালেণ্ডার ধরে!
ভাবনায় ডুবে গেছে আয়মান। খুলল ও টেবিলে রাখা ল্যাপটপটা। চালিয়ে দিল ম্যাডির রেকর্ড করা বার্তা। ভিডিয়ো শেষ হতে বলল, দেখেছিস?
কী?
বুঝিসনি? আচ্ছা, স্লো মোশনে চালাচ্ছি এবার।
দেখল আয়ান মনোযোগ তীক্ষ্ণ করে। চমকে উঠল ও। আরে-আরে! একটা ছায়া সরে গেল না পিছনে?
পেরেছিস এবার। হ্যাঁ। সেকেণ্ডেরও কম সময়ে রেকর্ড হয়েছে। বুঝতে পারছিস, জিনিসটা কী?
চালা তো আরেক বার!
একবার না, বার কয়েক দেখেও বোঝা গেল না, ঠিক কী জিনিস ওটা। তবে মানুষ যে না, এ ব্যাপারে একমত হলো দু জনে। গ্রিজলি বলেও মনে হলো না। প্রশ্ন হচ্ছে: ম্যাডির যদি কিছু হয়েই থাকে, সেজন্য কি ওটাই দায়ী?