হাসল চার্লি মনে মনে।
লিফট চাও?
নড়াচড়া থামিয়ে দিল মেয়েটা। অনেক সময় নিল উত্তর দিতে।
বাড়ি নিয়ে চলো আমাকে।
শিয়োর। প্যাসেঞ্জার-ডোর খুলে দিল স্কটিশ। ওঠো। গাড়িতে উঠল যুবতী। দরজা লাগাল।
ততা, মিস… সিটে মাথা ঠেকিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। মদালসা ভঙ্গি। আচরণটা অস্বাভাবিক ঠেকছে চার্লির কাছে। কোথায় থাকো তুমি?
ওর দিকে তাকাল না অচেনা নারী। ব্র্যাকেনরিজ রোডের শেষ মাথায়।
নড় করল চার্লি। চোখ আটকে গেল ওর তরুণীর বুকে। লো-কাট ড্রেস। অর্ধনগ্ন স্তন জোড়া সুডৌল। ওঠানামা করছে। শ্বাসের সঙ্গে। কফি-রং চুলগুলো এসে পড়েছে বুকের উপরে। উঁচু দুই পাহাড়ের মাঝে অন্ধকার, গভীর খাদ।
ওর দিকে তাকাল মেয়েটা।
চোখে চোখ পড়তে নার্ভাস হাসল স্কটিশ তরুণ। সরিয়ে নিল দৃষ্টি। আড়চোখে তাকাল আবার। রাতের বেলা একা বেরোনো উচিত হয়নি তোমার।
তোমার মতন ভদ্রলোক যখন আছে, তখন আর চিন্তা কী? মদির গলায় বলল যুবতী। পায়ের উপরে পোশাক খামচে ধরা হাত দুটো টানছে ভিতরের দিকে। ধীরে ধীরে হাঁটুর উপরে উঠে এল কাপড়ের ঝল।
যুবতীর অনাবৃত ঊরুতে আঠার মতো সেঁটে গেছে চার্লির চোখ দুটো। লম্বা থাই দুটো বেশ ভরাট আর ভারি।
পা ফাঁক করল যুবতী। আমন্ত্রণ।
চট করে ওর চোখে চোখ রাখল চার্লি। উদগ্র কামনায় জ্বলছে মেয়েটার চোখ দুটো।
চার্লির থুতনির নিচে একটা হাত রাখল মেয়েটা। আজ রাতে গেস্ট হবে আমার? নিমন্ত্রণ করল।– এক মুহূর্তে সব কিছু বিস্মৃত হলো চার্লি। ত্বরিত উপর নিচ করল মাথা। চুলোয় যাক মিটিং!
জলদি চলো তা হলে।
আর কী দেরি করে! ছুটল সিডান। কিছুক্ষণ বাদে থামল এসে এক বাড়ির সামনে।
বাড়িটা পুরানো। কাঠের। একতলা একটা দালান। অন্ধকারে মোড়া। টানা বারান্দা সামনে। রেলিং আছে। টিনের ছাত দেয়া হয়েছে বারান্দাতে। জং ধরে গেছে টিনে।
এখানেই থাকো তুমি? উইণ্ডস্ক্রিন দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে চার্লি। এটাকে তো হানাবাড়ি লাগছে আমার কাছে। ঘুরল ও মেয়েটার উদ্দেশে।
নেই! উধাও হয়ে গেছে মেয়েটা! ব্যাক-সিটে দেখল। থাকার কথা নয়, তবুও। গেল কই!
গাড়ি থেকে নামল চার্লি। ভয় পাচ্ছে। ওর অজান্তে কীভাবে নেমে গেল মেয়েটা? নাকি সত্যি সত্যি প্রেতের কবলে পড়েছে? হ্যালোউইনের নির্মম একটা রসিকতা!
ঝিঁঝির কোরাস ভরে রেখেছে রাত। চারদিকে তাকাল চার্লি। কেউ নেই কোথাও।
বিশাল এক গাছ যখের মতো পাহারা দিচ্ছে যেন বাড়িটাকে। একটা পাতাও নেই গাছে। কালচে ডালপালাগুলোকে মনে হচ্ছে প্রেতের আঙুল।
ভাঙাচোরা পিকেট ফেন্স থাকা-না-থাকা সমান কথা। কবে লাগানো হয়েছিল, কে জানে!
কি বড় বড় কয়েকটা গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে আঙিনার এক ধারে।
গায়ে ডেনিম জ্যাকেট। তার পরও শীত লেগে উঠল চার্লির।
বাড়িটার দিকে এগোল ও কয়েক কদম। হাঁক ছাড়ল, হ্যালোহ! যতটা না কারও সাড়া পাওয়ার প্রত্যাশায়, তার চেয়ে বেশি নিজের ভয় কাটাতে। হাল্লো!
হুটোপুটির শব্দ শোনা গেল বাড়ির ভিতরে। ইঁদুর-টিদুর হবে। ধুলোর গন্ধ ঢুকল নাকে।
বারান্দায় পা রাখল চার্লি। বহু দিনের পুরানো কাঠ মড়মড় করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে পায়ের তলায়। আওয়াজটা পীড়াদায়ক।
মশা-মাছি ঠেকানোর জন্য নেট লাগানো হয়েছিল জানালাগুলোতে। একটার মধ্যে মস্ত এক ফুটো। সেখান দিয়ে উঁকি দিল ভিতরে।
অন্ধকার। সঙ্গে আলো থাকলে… আছে তো!
প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করল চার্লি। বাটন টিপে জ্বালল টর্চ। কমজোরি আলো। সমস্যা নেই তাতে। কোনও রকমে দেখা গেলেই হলো।
কিন্তু দেখা আর হলো না চার্লির। আলো ফেলতেই সাদা কী জানি ভিতর থেকে উড়ে এসে আছড়ে পড়ল জালের উপর। ঝট-পট-ঝট-পট শব্দ হলো। কবুতর বোধ হয়।
কিন্তু চার্লির তা শিয়োর হওয়ার সময় কোথায়? ভীষণ চমকে চিতিয়ে পড়েছে পিছন দিকে। গলা দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে এসেছে চিৎকার।
লাফ দিয়ে বোর্ডওঅক থেকে উঠে দাঁড়াল চার্লি। এক লাফে নামল উঠনে। তারপর পড়িমরি করে গিয়ে উঠল গাড়িতে। সিলভানিয়া ব্রিজে ওঠার আগে ছাড়ল না চেপে রাখা দম।– সহজাত প্রবৃত্তি দেখতে বলছে পিছন ফিরে। কিন্তু সাহস হলো না চার্লির। মনে হচ্ছে; পিছনে চাইলে ভয়ঙ্কর কিছু দেখতে পাবে ভুতুড়ে বাড়ির কোর্ট-ইয়ার্ডে। তার পরও দমিয়ে রাখা গেল না চোখ জোড়াকে।
রিয়ার-ভিউ মিররে তাকাতেই দুটো হার্টবিট নেই হয়ে গেল চার্লির। গলা ফুড়ে বেরিয়ে এল চিৎকার।
সেই মেয়েটা! পিছনে বসে চেয়ে রয়েছে ওর দিকেই!
ঝট করে ঘাড় ঘোরাল চার্লি। হাত কেঁপে গিয়ে ডানে ঘুরে গেল স্টিয়ারিং।
সেতুর রেলিং-এ গিয়ে গোঁত্তা মারল সিডান। শব্দ হলো বিকট। আরও একটা আওয়াজ- চার্লির জান্তব চিৎকার। ধাতব আওয়াজটাকে ছাপিয়ে গেল সেটা। অশুভ অক্টোবর রাতের শীতল হাওয়ায় তুলল প্রতিধ্বনি।
দুই
বাঙালি দুই ভাই। আয়ান, আয়মান। উনিশ শ নব্বইয়ের দশকে গ্রিন কার্ড নামক সোনার হরিণের দেখা পান ওদের বাবা আমান ইকরামুল্লাহ। সপরিবার থিতু হন আমেরিকায়। আয়ান-আয়মান তখনও বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখেনি।
এরপর ক্যানসাসের উপর দিয়ে অনেক মেঘই এল, গেল। সেদিনের দুই পিচ্চি এখন তেইশ বছরের দুই টগবগে, সুদর্শন তরুণ।
যমজ ওরা। মেডিকেল সায়েন্সের পরিভাষায়- মিরর ইমেজ টুইনস। একজন আরেক জনের আয়না-প্রতিবিম্ব ঠিক উলটো দেখতে। স্বভাব-চরিত্রেও মিল নেই তেমন। একটা বিষয় ছাড়া। দুই ভাই-ই অ্যাডভেঞ্চার-পাগল। বেপরোয়া। রহস্যের গন্ধ পেলে চনমন করে ওঠে ওদের মন। উদঘাটনের চেষ্টা চালায়।