অথচ লোকটা আমাদের ওখানেই চাকরি করত। আগেও ওকে দেখেছে জন, লাশ দেখার সময়। কথাও বলেছে। কিন্তু তখন আমরা বুঝতেই পারিনি যে, একেই খুঁজছি আমরা।
সেটার কারণ আছে, দোস্ত। মার্টিনেজের বর্ণনা খেয়াল কর- সাদা চুল, মোচ, চশমা। এজন্যই ইমিডিয়েটলি ক্যাচ করতে পারেনি ব্রেইন।
তার মানে, নকল ওগুলো?
হুম, ছদ্মবেশ।
কবিতার ব্যাপারটা বল, মনে করিয়ে দিল বব।
কীসের কবিতা? বুঝতে পারল না জন।
আকাশপানে তীর মারিলাম…
ওহ। হাসল জন একচোট। মারিয়া আর মনিকা মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।
হ্যাঁ। এটাও একটা ব্যাপার বটে। খোলসা করতে শুরু করল জন,, আমরা যখন ভিডিয়োটা পরীক্ষা করি, মনে হয়েছিল, কবিতা পড়ছে লোকটা। আসলে, ওটা ছিল গান।
বুঝলাম না, বলল মনিকা। এ
গান গাওয়াটা ওর মুদ্রাদোষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একা হলেই গান গেয়ে ওঠে সে। ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটেছে। মর্গে। ফলে ধরাও পড়েছে সহজে।
খুনের মোটিভ কী? ববকে জিজ্ঞেস করল মনিকা।
জানো না তুমি? বলেনি ও?
না! সুরটা নালিশের। টিভিতে যা শুনেছি, ওটুকুই।
কেন বলিসনি?
অসুস্থ ও, সাফাই গাইল জন। আরও যদি অসুস্থ হয়ে যায়!
হয়েছে! মুখ ঝামটা দিল মনিকা। বলল এবার। নইলে কিন্তু কথা বন্ধ!
এর ওরেব্বাপ, রে! আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে দুই হাত তুলল। জন। পা আমিই বলি… একটু থামল বব। কোত্থেকে শুরু করব… হা… মেডিকেল জার্নাল থেকে শুরু হয়েছে। ব্যাপারটা। হেরমান হেস- মানে, আমাদের প্যাথলজিস্ট মহাশয় একটা আর্টিকেল পড়েছিল দিন কয়েক আগে। আর্টিকেল না বলে বিজ্ঞাপন বলাই ভালো। এক বড়লোক বুড়ির জরুরি অপারেশন দরকার। কিন্তু রক্তের অভাবে। কাজটা শুরু করতে পারছিল না সার্জনরা।
কেন, ডোনার পাওয়া যাচ্ছিল না?
না।
কী গ্রুপ রক্তের? এবি নেগেটিভ, না বি নেগেটিভ?
বলছি। বুড়ি থাকে লাস ভেগাসে। রক্ত জোগাড় করে দেয়ার বিনিময়ে অসম্ভব একটা অঙ্ক প্রস্তাব করেছে। ডোনার তো পাবেই, সন্ধানদাতাও পাবে একই পরিমাণ টাকা। …ব্যাপারটা ওখানেই ভুলে গেল হেস। আর তার পরই ঘটল ঘটনা।
এলিটার প্রবেশ রঙ্গমঞ্চে, নাটক করল জন।
হেসের সাথে কী সম্পর্ক মেয়েটার?
কোনও সম্পর্ক
নই। তার সম্পর্ক সুজানার সাথে।
এ আবার কে?
নার্স। কাজ করে এক ক্লিনিকে। হেসের প্রেমিকা।
তথ্যগুলো সাজানোর চেষ্টা করল মনিকা। পারল না। আরও বেশি এলোমেলো হয়ে গেল।
সাহায্য করতে মুখ খুলল বব, ওই ক্লিনিকে গিয়েছিল এলিটা। রক্ত পরীক্ষা করাতে।
কেন?
এইচআইভি টেস্ট। এইডস আছে কি না, জানার জন্য।
অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে আসছে এখন। তা হলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই… রক্ত পরীক্ষা করাল এলিটা… ওর আর বুড়ির রক্তের গ্রুপ সেইম… সুজানার কাছ থেকে জানতে পারল এটা হেস।
একটা ফাঁক আছে এখানে, বলল, মারিয়া। সুজানা কেন বলতে যাবে ডাক্তারকে? যদি না সে বুড়ির ব্যাপারটা জেনে থাকে… )
সুজানা কিছুই জানত না, বলল জন।
পুরোটা শোনো আগে। বুঝতে পারবে তা হলে, বলল বব।
শুনে তো চমকে গেল হেস, বলতে লাগল জন। লোভে পেয়ে বসল তাকে। বান্ধবীর মাধ্যমে ক্লিনিকের এন্ট্রি-লিস্ট থেকে ঠিকানা জোগাড় করে ফেলল এলিটার। দু দিন বাসা থেকে ক্লাব পর্যন্ত ফলো করল মেয়েটাকে। তৃতীয় দিন প্রাইভেটে নাচ দেখল মেয়েটার। ভাড়াও করল। একা মানুষ। বাসায় নিয়ে এসে উইস্কির সাথে জিএইচবি মিশিয়ে অজ্ঞান। করে ফেলল।
মারল কেন? প্রশ্ন মনিকার।
মারার ইচ্ছা ছিল না প্রথমে। মুহূর্তের খেয়াল ওটা। মেয়েটাকে অচেতন করার পর রক্ত নেয়ার কাজ শুরু করল। হেস। এই সময় তার মনে হলো- কতটুকু লাগবে, তা তো জানি না। কাজেই, যতটা পারি, নিয়ে নিই। নেয়ার পর দেখা গেল, এমনিতেও বাঁচবে না এই মেয়ে। মারা যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই। তখন মাথা কাটার প্ল্যান করে সে। হেসের হিসাবটা ছিল, কেউ যেন বুঝতে না পারে, রক্তশূন্যতার কারণে মৃত্যু হয়েছে এলিটার। মাথা কেটে বোঝাতে চাইছিল, কোনও সাইকোপ্যাথের কাজ এটা। ডিগ্রি পাওয়া ডোম সে। মানুষ কাটাছেঁড়ায় অভ্যস্ত। মাথাটা কেটে ঢুকিয়ে রাখল ফ্রিজে।
বুদ্ধি দেখো লোকটার, বলে উঠল বব। আমরা ভেবেছি, মাথা কাটার কারণে ব্লিডিং হয়েছে বলে রক্ত নেই শরীরে। আসল ঘটনা যে এত কিছু, কে জানত!
কিন্তু পাপ তো বাপকেও ছাড়ে না। রক্তের প্যাকেটগুলো ফ্রিজে রেখেছিল সে। ফ্রিজটা খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ। ধরা পড়ল যেদিন, সেরাতেই। বাসায় এসে দেখে হেস, ফ্রিজ নষ্ট। গুতোগুতি করে কাজ হলো না। অত রাতে মেকানিক পাবে। কোথায়? উপায় না দেখে মর্গে ফিরে এল রক্ত রাখার জন্য।
নিয়তির খেলাটা দেখ, জন। নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছিল এইচআইভি টেস্টে। তার পরও মরতে হলো মেয়েটাকে। পজিটিভ হলে তো এমনিতেই মরত।
রক্তের দোষ!
ঠিকই বলেছিস! রক্তের দোষ।
বললে না তো, বলল মারিয়া। সুজানা কেন মেয়েটার কথা বলল ডাক্তারকে!
এই যাহ, ভুলে গিয়েছিলাম! বলার ভঙ্গিতেই বুঝল সবাই, ভুলে যায়নি, ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছে তখন। বলেছে, কারণ, মেয়েটার রক্তের গ্রুপ খুবই- আই রিপিট, খুবই রেয়ার। বিষয়টা দাগ কেটে গিয়েছিল নার্সের মনে। সেজন্য, শেয়ার করে ডাক্তারের সাথে।
কী গ্রুপ?
এটুবি।
পাশবিক
ব্ল্যাকওঅটর রিজ। লস্ট ক্রিক, কলোরাডো।