বিছানার কাছে এল জন। অপলকে তাকিয়ে থাকল।
মনিকার ফ্যাকাসে মুখটা যেন মোম দিয়ে তৈরি। ঠোঁট জোড়া সাদাটে। খুব আস্তে ওঠানামা করছে বুক।
নিচু স্বরে বলল মহিলা, জ্বর এসেছে।
একটু পরে বেরিয়ে এল তিনজনে।
কী বলে যে ধন্যবাদ দেব আপনাকে! কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ল জনের গলা থেকে।
কী যে বলো! এ আর এমন কী!
তা হলে… মিস ব্রাইস, এবার বাড়ি চলে যান আপনি। বন্ধুর দিকে চাইল জন। বব, একটা ক্যাব ডেকে দিবি ওনাকে?
দরকার নেই। নিজেই যেতে পারব আমি।
আসুন, মিস ব্রাইস, বলল বব।
দশ
চোখ মেলল জন।
রেডিয়াম লাগানো দেয়ালঘড়ি সোয়া এগারোটা বাজার সঙ্কেত দিচ্ছে।
ভাঙল কেন ঘুমটা?
শব্দ। আলোছায়ার নড়চড়। বসে থাকতে থাকতে চোখ লেগে এসেছিল, ডিউটি-নার্স রুমে ঢাকায় টুটে গেছে নিদ্রা।
চোখ মিটমিট করল ও। বন্ধ করল। খুলল। একবার। দু বার। চোখ থেকে পুরোপুরি কেটে গেল ঘুমের রেশ।
মনিকার হাতের শিরায় সুচ ঢুকিয়ে রক্ত নিতে লাগল সিস্টার। টেস্ট করবে বোধ হয়। এ আরেক জন। সন্ধ্যার সেই মেয়েটা নয়।
নিরাসক্ত চোখে তার কাজ দেখতে লাগল জন।
হঠাৎ ওর মগজের ভিতরটা ঝাঁকুনি খেল ঝনঝন করে। কাঁপন শুরু হলো বুকের মধ্যে।
কাউচ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল জন। বেরিয়ে এল কেবিন। থেকে।
দেয়াল ঘেঁষে পাতা-এক সারি আসন। তার একটায় বসে ঢুলছিল বব। জেগে গেল কাঁধে হাত পড়তেই। পূর্ণ সজাগ। চোখ মেলেই প্রশ্ন: কী অবস্থা এখন?
ঘুমাচ্ছে এখনও।
চলে গেল মেয়েটা কাজ সেরে।
ববের পাশের চেয়ারটা ছেড়ে বসল জন। শান্ত কণ্ঠে বলল, কয়েকটা প্রশ্ন জ্বালাচ্ছে মাথায়।
কী নিয়ে?
এলিটা মেয়েটার ব্যাপারে।
যেমন?
মেয়েটার ব্লাডগ্রুপ জানা আছে তোর?
না। তবে জেনে দেয়া যাবে।
নিজের ডিডাকশন ব্যাখ্যা করল জন। শেষে বলল, শিয়োর হতে হলে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা দরকার।
উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেল বব। দাঁড়া, জেনে দিচ্ছি! যে লোক ওর পোস্টমর্টেম করেছে, ফোন লাগাচ্ছি তাকে।
কিন্তু একবার ট্রাই করেই কালো হয়ে উঠল ববের মুখ। বন্ধ ফোন!
অফিসে গেলাম আমি, ত্বরিত সিদ্ধান্ত ওর। তুই কি আসবি?
যেতে মন টানছে না জনের। তার পরও উঠল। মনিকার কেবিনের সামনে এল পায়ে পায়ে। দরজার উপরের কাঁচটকা গোল গর্তটা দিয়ে ভিতরে চাইল।
জাদুর খাটে শুয়ে আছে যেন স্লিপিং বিউটি।
এগারো
আণ্ডারগ্রাউণ্ড মর্গ। বেইসমেন্টে।
সার্ভিস-এলিভেটরে করে নিচে নামল ওরা।
ঠাণ্ডা, ফাঁকা প্যাসেজ। তবে জনশূন্য নয়। বুড়োমতো এক লোক নেকড়ার ঝাড় দিয়ে ফ্লোর মুছছে। ফ্ল্যাট ক্যাপ মাথায়। চাইল না ওদের দিকে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ও না। হাতি গেলেও বোধ হয় তাকাত না।
একটা বাঁক ঘুরে কিছুদূর গেলেই লাশকাটা ঘর। ব্লিচিং পাউডার আর ফরমালডিহাইডের গন্ধ ভুরভুর করছে।
আগে আগে চলেছিল বব, হ্যাঁণ্ডেল ধরে ঠেলা মারতে গেল দরজায়।
তার আগেই আটকাল জন ওকে। থামতে ইঙ্গিত করল কাঁধ চেপে ধরে।
প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল বব, ঠোঁটের উপরে তর্জনি ঠেকিয়ে কথা বলতে নিষেধ করল জন।
কান খাড়া করল। শিসের আওয়াজ। আসছে ভিতর থেকে। কানপাতল দরজায়।
ঠোঁটস্থ একটা সুর। বিটলস-এর। লুসি ইন দ্য স্কাই ইন ডায়মণ্ড গলাও শোনা গেল একটা। গান ধরেছে কণ্ঠের মালিক।
অ্যাকসেন্ট!
সহজাত প্রবৃত্তির বশে ববের হাতে উঠে এসেছে পিস্তল। নাইনএমএম টরাস। মডেল ৮০৯। ব্ল্যাক টেনিফার। স্নায়ু। টান-টান। নিঃশ্বাস ভারি।
দরজা ঠেলল জন। সন্তর্পণে। সুইং ডোর। খুলে গেল। নিঃশব্দে।
একা এক লোক মর্গে। দরজার দিকে রওনা হয়েছিল ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট, থতমত খেয়ে গেল ওদের দেখে। { দাঁড়িয়ে গেছে লোকটা। থেমে গেছে গান। চোখের তারায় নগ্ন ভয়।
বারো
তিন দিন পর। রোববার।
রোদেলা দিন। চমৎকার।
ববের বাসার আঙিনায় চলছে বারবিকিউ-পার্টি। কাবাবের সুবাসে ম-ম করছে বাতাস।
ভেড়ার মাংসের শেষ টুকরোটা মুখের ভিতর চালান করে দিয়ে প্লেটের উপর ধাতব শিকটা নামিয়ে রাখল জন। আয়েশ করে চিবোচ্ছে। চাকা-চাকা করে কাটা শসায় এক কামড় দিচ্ছে, আরেক কামড় দিচ্ছে টমেটোতে।
ফার্স্ট ক্লাস হয়েছে মাংসটা! চিবোনোর ফাঁকে বলল ও। এই নিয়ে তৃতীয় বার। পরিষ্কার বুঝতে পারছি একটা জিনিস, কোনও দিনও ভেজান হওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে! বাঁচা অসম্ভব!
ওর বলার ধরনে হেসে উঠল সবাই।
কিন্তু সায়েন্টিস্টরা তো বলে- সম্ভব, খেই ধরল। মারিয়া। এবং ভালো ভাবে।
দূর-দূর! মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নাড়ল জন।
টিসু-পেপার দিয়ে মুখ মুছছে মনিকা। আগের দিন। সকালে বাসায় ফিরেছে নার্সিং হোম থেকে।
কালকে টিভিতে দেখলাম তোমাকে, বলল ববের। উদ্দেশে। কনগ্রাচুলেশন!
ক্রেডিটটা আসলে ওর প্রাপ্য। জনের দিকে তাকাল বব।
কৃতিত্ব আমার একার না, কাঁচের জগ থেকে গ্লাসে পানি। নিতে নিতে বলল জন। লাকটা ভালো ছিল আমাদের।
বুঝলে কীভাবে, ওই লোকই হত্যাকারী? প্রশ্ন মারিয়ার।
উচ্চারণ। গ্লাসে ঠোঁট ছোঁয়াল জন। দুই ঢোকে খালি করে ফেলল অর্ধেকটা। জার্মান লোকটা। মর্গের ভিতরে ও যখন গান গাইছিল, উচ্চারণে ছিল জার্মান টান।
খুন হওয়ার আগের একটা ভিডিয়ো পেয়েছি আমরা এলিটার। ওখানে এক লোকের মুখেও ছিল জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ। ব্যস
দুইয়ে দুইয়ে চার, ববের কথাটা শেষ করে দিল জন।