না, সাফ মানা করে দিল জনের বউ। আমার বাসনগুলো ভাঙার দরকার নেই।
আট
সকাল থেকেই বন্ধুর অফিসে, রয়েছে জন। গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে ভিডিয়োগুলো দেখছে।
আটাশটা ভিড়িয়ে মোট। তিনটায় লিটা আছে। এর মধ্যে একটা আবার শেষ দিনের।
অনেক বার দেখা হলো সেটা। সব দেখে-টেখে শেষ করতে সারা দিন লেগে গেল।
চলনসই পিকচার-কোয়ালিটি। তবে অডিয়ো খুব খারাপ। হেডফোন লাগিয়েও বোঝা যায় না ভালো। নিচু লয়ে, গান ছাড়া কথা অবশ্য বিশেষ নেই।
ছোট খুপরি ক্লায়েন্টের মাথার উপরে ক্যামেরা, পিছনের দেয়ালে। চেহারা দেখার উপায় নেই। নাচনেওয়ালীর দিকে ফোকাসটা।
কয়েক শ বার ফ্রিজ করা হলো ছবি। রি-ওয়াইণ্ডের পর রি-ওয়াইণ্ড করা হলো। দেখা হলো জুম করে। সঙ্গে চলল চা। কাপের পর কাপ।
প্লে বাটন চাপতে চাপতে আঙুল ব্যথা হয়ে গেল জনের। লাল হয়ে গেল বুড়ো আঙুলের মাথা। টাটাচ্ছে চোখ দুটো।
এলিটা রে অভিনীত শেষ ছবিটা শেষ বারের মতো দেখে মনিটরটা অফ করে দিল জন। সকালের কৌতূহল এখন পরিণত হয়েছে বিরক্তিতে।
জার্মান ভাষায় কথা বলছে অদেখা লোকটা। জন আসার আগেই বিশেষজ্ঞ-মত দিয়েছে ল্যাঙ্গুয়েজ-এক্সপার্ট। তবে কয়েকটা ওঅর্ডের মানে বোঝা ছাড়া বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। এতটাই বাজে সাউণ্ড!
জার্মান ভাষা একটা ক্ল। তবে এই সূত্র দিয়ে লোকটার তালাশ করা খড়ের গাদায় আলপিন খোঁজার শামিল। প্রচুর জার্মান রয়েছে সিয়াটলে।
ডেস্কের সামনের কিনারে নিতম্ব ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বব। হতাশ গলায় উদগীরণ করল, ছাতার ভিডিয়ো।
হাহ, বন্ধুকে সমর্থন করল জন। যা-ও বা কয়টা শব্দ বুঝলাম, সেগুলোর পরম্পরা বোঝা গেল না। দুম করে কিল বসাল সামনে রাখা টেলিফোন ডিরেক্টরির উপরে। মেজাজটাই খারাপ করে দিল!
শালা বোধ হয় কবিতা আওড়াচ্ছে।
কবিতা?
ওই আর কী! উত্তর-আধুনিক টাইপের কিছু কবি আছে। … কী যে লেখে, কিছু বোঝা যায় না? আকাশপানে তীর মারিলাম, লাগল কলা গাছে… হাঁটু দিয়ে রক্ত ঝরে… চোখ গেল রে, বাবা! সেরকমই কিছু একটা হবে।
আলোচনায় ছেদ টানল ম্যাডোনা। লা ইসলা বনিটা বাজছে নকিয়া লুমিয়া ৭৩০ মডেলে।
ডিসপ্লের দিকে তাকাল জন। আনোউন নাম্বার।
হ্যালো।
মিস্টার ডিউক? তামারা ব্রাইস বলছি! তোমাদের প্রতিবেশী! ত্রস্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলল মহিলা। খারাপ খবর আছে একটা!
অজানা আশঙ্কায় লাফাতে লাগল জনের হৃৎপিণ্ড। কী হয়েছে, মিস ব্রাইস?.
অ্যাকসিডেন্ট করেছে তোমার বউ!
শক্ত হয়ে গেল জনের শরীরটা। অজান্তেই ঢোক গিলল একটা। ওহ, গড! কীভাবে?
পড়ে গেছে। স্লিপ খেয়েছে পোর্চের সিঁড়িতে। গত রাতের বৃষ্টিতে পিছল হয়ে ছিল বারান্দা। ভাগ্যিস, দেখেছিলাম আমি!
গুরুতর কিছু হয়নি তো? বলতে বলতে চেয়ার ছাড়ল জন।
বলতে পারছি না। মাথায় আঘাত পেয়েছে মেয়েটা। ব্লিডিং হচ্ছিল। নিজে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। শেষে অ্যামবুলেন্স ডাকতে হলো।
কোন হসপিটাল? শুকনো গলায় জিজ্ঞেস করল জন।
শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে গিয়েছিল ববের। হাসপাতালের কথা শুনে কথোপকথনের গুরুত্বটা বুঝে নিল। বন্ধু কান থেকে ফোন সরাতেই সিধে হলো ও।
পা পিছলে পড়ে গেছে মনিকা!
হায়-হায়, বলিস কী!
হসপিটালে গেলাম আমি!
চল, আমিও আসছি।
গাড়ি আনেনি আজ জন। গ্যারাজে এল বব বন্ধুকে নিয়ে। সাঁ করে বেরোল ওর টয়োটা প্রিমিয়ো। এত জোরে ড্রাইভিং করা নিষেধ। আইনের লোক হয়েও পরোয়া করল না অফিসার।
নয়
নার্সিং হোমটা ছোট। দ্বিতল কাঠের বাড়ি। জীবাণুনাশক ও অন্যান্য ওষুধের কড়া ঘ্রাণ বাতাসে।
লবির এক পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। সিঁড়ির পাশে ইনফর্মেশন-সেন্টার। রিসেপশনিস্ট বসা রুপালি রং করা কাঠের ডেস্কে।
দ্রুত পদক্ষেপে তার দিকে এগিয়ে গেল জন।
ঢিলেঢালা আকাশি রঙের ইউনিফর্ম মেয়েটার গায়ে। বুকের কাছে লেখা নাম। ক্যাটরিনা।
– কোঁকড়া চুলে এক্সটেনশন লাগিয়েছে ফ্রন্ট ডেস্ক স্টাফ। বাদামি চুলের জট থেকে বেরিয়ে আছে টকটকে লাল একটা গোছা। ডিম্বাকৃতির মুখে হালকা প্রসাধন। টেলিফোনে কথা বলছিল, ফোন রেখে তাকাল প্রশ্নবোধক চোখে।
এক্সকিউজ মি! উল্কণ্ঠিত গলায় বলল জন। আমার স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে এখানে কিছুক্ষণ আগে! মনিকা নাম?
মাথায় আঘাত পেয়েছে:… পাশ থেকে বলল বব।
সামনে রাখা ক্লিপবোর্ডটা তুলে নিল তরুণী। ক্যাপবিহীন একটা কলমের পিছন দিকটা বোর্ডে আটকানো লিস্টে ঠেকিয়ে নামিয়ে আনছে নিচে। মাঝামাঝি এসে থেমে গেল।
মনিকা লোরেন? শুধাল যান্ত্রিক কণ্ঠে।
ইয়েস! বলা মাত্রই চোখাচোখি হলো মিস ব্রাইসের সঙ্গে।
কফি ভেণ্ডিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল মহিলা। এগিয়ে আসছিল জনকে দেখে। সিঁড়িতে পা রেখে বলল, এসো আমার সাথে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে আরম্ভ করল ব্রাইস। দুই বন্ধু অনুগমন করল তাকে।
কেমন আছে ও? জিজ্ঞেস না করে পারল না জন।
ভালোই আছে এখন। বিষণ্ণ দেখাল ভদ্রমহিলার হাসিটা। চকচকে পালিশ করা পিতলের রেইলে হাত।
ঘুমাচ্ছে। সিডেটিভ দিয়েছে নার্স)—-
দ্বিতীয় তলায় পৌঁছে ডাইনে-বাঁয়ে সমান প্যাসেজ। বিশ ফুট আন্দাজ গিয়ে ঠেকেছে দেয়ালে।
বাঁ দিকে চলল মহিলা। একটা কেবিনের পরদা সরিয়ে ঢুকল ভিতরে।
জলপট্টি দিচ্ছিল নার্স পেশেন্টের কপালে। পানি ভর্তি গামলাতে রুমালটা ফেলে গায়ের উপর টেনে দিল কম্বলটা। বেরিয়ে গেল গামলা, নিয়ে। যাওয়ার আগে ঠোঁটে আঙুল রেখে জোরে আওয়াজ করতে বারণ করল ওদের।