মিস্টার মার্টিনেজ।
মিথ্যে বলেছে। শেষ কার সাথে কথা হয়েছে, জানা নেই আমার। তবে আমার সাথে যে না, এটুকু নিশ্চিত করতে পারি। বিড়বিড় করল টিনা। চেহারায় তীব্র অসন্তোষ। সম্ভবত গালি দিল।
ভুরু কুঁচকে গেল জনের। ভাজ পড়ল কপালে। এক মুহূর্ত ভাবল কিছু। বিশেষ কেউ কি আসত ওর কাছে?
জানি না। খেয়াল করিনি।
যেদিন শেষ দেখেছ, অস্বাভাবিক কোনও কিছু লক্ষ করেছ ওর মাঝে?
না।
ভালো করে ভেবে দেখো।
ভেবেই বলছি। ত্যক্ত বোধ করছে টিনা।
এমন কোনও কথা, যেটা পুলিসকে বলোনি…
বনবিড়ালির থুতু ছিটানোর ভঙ্গি করল মেয়েটা। সব কথাই বলেছি আমি পুলিসকে। আমার সাথে বেরোতে চেয়েছিল ও। এই সময় একটা কল আসে। থেকে যায় লিটা। তারপর কী হয়েছে, বলতে পারব না।
এ পর্যন্ত জানে জনও। জেনেছে যে, ওই কাস্টমারকে সেদিনই প্রথম দেখেছে অ্যাটেণ্ড্যান্ট। আমেরিকান নয় লোকটা, বলেছে রাফায়েল মার্টিনেজ, ইংলিশ বলে যদিও। তবে কোন্ দেশি, বলতে পারেনি লোকটা। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ হবে বয়স। চুলের রং সাদা। গোঁফ আছে। চোখে চশমা।
তোমরা কি ক্লায়েন্টের সাথেও যাও? জিজ্ঞেস করল জন। এসকোর্ট সার্ভিসের কথা বলছি।
সবাই না। কেউ কেউ যায়। ক্লাবের কোনও সম্পর্ক নেই এর সাথে।
মিস রেও কি যেত?
যেত।
ওই দিন গিয়েছিল কারও সাথে?
কেমন করে বলব? আমি তো চলে গিয়েছিলাম।
ও, হ্যাঁ, সরি।
কসমেটিকসের শিশি-বোতল-ডিব্বার সমাহার টেবিলের উপরে। এক প্যাকেট সিগারেটও রয়েছে। রেড অ্যাণ্ড হোয়াইট।
সিগারেটের প্যাকেটটা তুলে নিল টিনা। ঠোঁটে লাগিয়ে ধরাল একটা। কাঁপছে হাতটা। ধোয়া ছাড়ল এক মুখ। ধনুক-ভ্রু কুঁচকে তাকাল ধোয়ার ভিতর দিয়ে। ধরতে পারবে তোমরা খুনিকে?
আশা তো করি। কী মনে হয় তোমার, কে মারতে পারে ওকে?
যে-কেউ।
ভুরু দুটো কুঞ্চিত হলো জনের। কেন, কী কারণে?
মেয়েদের খুন করতে আবার কারণ লাগে নাকি? বিতৃষ্ণায় মুখ বাঁকাল টিনা। লাগে তো খালি এক্সকিউজ!
গম্ভীর জন। কিছু বলতে গিয়েও বলল না। ওর আসলে। কিছু বলার নেই।
ছয়
স্ট্রিপ ক্লাবটা থেকে বেরিয়ে এল জন। রিস্টওঅচ দেখল। রাডোর কাটা বলছে: সাড়ে সাতটা।
একটা ফোন করা দরকার। মোবাইলটা বের করে দেখল, ব্যাটারি ডাউন।
পারফেক্ট! বেরিয়ে এল মুখ দিয়ে। টেলিফোন আছে কাছেপিঠে?
আছে। শ খানেক গজ দূরে। জনহীন এক গ্যাসস্টেশনে।
স্টেশনটার দিকে হাঁটা ধরল ও। বড় বড় পা ফেলছে। সাফারি জ্যাকেটের কোণ উড়ছে বাতাসে।
ভিজে রাজপথ। লাইটপোস্টের আলোতে দীর্ঘ ছায়া পড়েছে ওর। সঙ্গে সঙ্গে আসছে। টে।
একটা গাড়ি চলে গেল। শেভ্রোলে ক্যাভালিয়ার।
ফোনবুথে ঢুকল জন। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে কয়েন ফেলল স্লটে। ডায়াল করল তারপর।
একবার রিং হতেই রিসিভার তুলল সিয়াটল পাবলিক সেফটি বিল্ডিং-এর অপারেটর।
বিলি বব থর্নটনের এক্সটেনশনে লাইন দেয়ার অনুরোধ করল জন মেয়েটাকে।
খুট করে শব্দ হলো একটা।
হ্যালো!
বব, আমি… জন।
কী অবস্থা, বল। ক্লাবে গিয়েছিলি?
এই মাত্র বেরোলাম ওখান থেকে। …শোন, একটা কাজ করতে হবে।
কী কাজ?
ক্লাবের অ্যাটেণ্ড্যান্টকে অ্যারেস্ট কর।
জনের গলার স্বরে শীতল রাগ টের পেল বব। কেন? কী করেছে?–
ব্যাটা কিছু লুকাচ্ছে! কাঠিন্যের ছাপ পড়ল জনের চেহারায়। এমনিতে বলবে না, চাপ দিতে হবে। আপাতত সাসপেক্ট হিসাবে ধরে নিয়ে আয়। জেরা কর। ভয়-টয় দেখা। দেখ, কী রি-অ্যাকশন হয়।
তুই থাকবি?
না। বাইরের লোক আমি। আমার এর মধ্যে ইন্টারফেয়ার করা ঠিক হবে না। রাখলাম। কী হলো,
জানাস।
ওকে, বস।
সাত
সেরাতেই ফোন এল। সাপার সেরে উঠেছে, এমন সময় বেজে উঠল জনের সেলফোনটা।
স্ক্রিন টাচ করে কানে ঠেকাল ও নকিয়া সেটটা। হ্যাঁ, বব!
গরম খবর আছে!
ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই বলে ফেল।
তোর কথাই ঠিক, ওস্তাদ। মার্টিনেজই কালপ্রিট বলে। মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে? স্বীকার যায়নি?
না, রে। শোন, কী হয়েছে। ইন্টেরোগেশনের মুখে স্বীকার গিয়েছে ব্যাটা, প্রাইভেট বুথগুলোতে গোপন ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিল ও। গত কাল সকালে টিভিতে খুনের খবরটা দেখা মাত্র ক্লাবে চলে যায় হারামজাদা। পুলিস হানা দেয়ার আগেই ক্যামেরাগুলো সরিয়ে ফেলে। ওগুলো ওর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সাবাস। সন্তুষ্ট হলো জন। পারভার্ট হালায়। নাইটক্লাবে কাজ করে তো! …দাঁড়া! দাঁড়া! পর্নো ফিল্মের প্রডিউসার কি নিজে দেখার জন্য রেকর্ড করত, নাকি অন্য কোনও মতলব?
ঠিকই ধরেছিস। ব্যবসা। বিপুল পরিমাণ সিডিও জব্দ, করা হয়েছে লোকটার বাসা থেকে।…অনেক দিন ধরে এসব অপকর্ম করে আসছে সে। সাইড-বিজনেস ক্লাবের কেউই টের পায়নি।
ভিডিয়ো-ক্লিপগুলো চেক করা হয়েছে?
হচ্ছে। এলিটার একটা ফুটেজ পাওয়া গেছে। আরও থাকতে পারে। …কালকে আসবি তুই?
অফ কোর্স।
আরও দুয়েকটা কথা হলো টুকটাক।
সিঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে আধোয়া প্লেট ধুচ্ছিল মনিকা, জনের কথা শেষ হতেই ট্যাপ বন্ধ করল। ঘুরে তাকিয়ে জানতে চাইল, কী ব্যাপার, জন? নতুন কোনও কেস?
আমার না, ববের। হেল্প করছি ওকে।
খুনের কথা শুনলাম… কে খুন হয়েছে?
এলিটা নামে একটা মেয়ে। ড্যান্সার।
ব্যালেরিনা?
না-না… ওই নাচ না। এগজোটিক।
ও, আচ্ছা। কাজে মনোযোগী হলো আবার মনিকা।
আসব নাকি, বেগম সাহেবা? একটু সাহায্য করি?