ফের দাঁত কেলাল জন।
ভ্যাটকাইস না! ফান্দে পড়িস নাই তো! পড়লে কানতি। এক রাত্তিরে মকানে ফিরে দেখি, বিবি দরজা খোলে না। অনেক অনুনয়-বিনয় করলাম… অনেক সাধ্য-সাধনা। খোলা-খোলো দ্বার… রাখিয়ো না আর বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে। মন গলল। কিন্তু বেকসুর খালাস পেলাম না। সশ্রম কারাদণ্ড। যদ্দিন সিগ্রেট না ছাড়ছি, নিজের খাবার নিজে বেড়ে খেতে হবে। ঘুমাতে হলে- ড্রইং রুমে। আর… ওইটা করার চিন্তা মাথাতেও আনা যাবে না। যাকে বলে, একদম রিমাণ্ডে! নিরুপায় একটা মুখভঙ্গি করে চায়ে চুমুক দিল বব। পরক্ষণে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠল, বন্ধু, তোদের আসাটা তো সেলিব্রেট করা দরকার। তাকাল ডেস্কে রাখা ক্যালেণ্ডারের দিকে। এই রোববারে?
ওসব পরে হবে। আগে মেয়েটার ব্যাপারে বল… এলিটা রে। প্রজেক্টরের পরদার দিকে আঙুল নির্দেশ করল জন। এ মুহূর্তে কিছু নেই ওখানে। অফ করে দেয়া হয়েছে প্রজেক্টর।
ব্যাটা ব্লাডহাউণ্ড। গন্ধ পেয়ে হাজির। বল,কী জানতে চাস?
পত্রপত্রিকায় যা গেছে, সেগুলোর বাইরে।
এক মহর্ত চিন্তা করল বব। অফিশিয়াল সিক্রেট যদিও তবে তোকে বলতে আপত্তি নেই। শুট।
কাপটা নামিয়ে রাখল জন। কী অবস্থায় পেয়েছিস ডেডবডি?
চিত হয়ে পড়ে ছিল।
উইপন পাওয়া গেছে?
মাথা নাড়ল বব। না।
ভিসেরা?
হাতে আছে।
এত আগে?
সেই দিন কি আর আছে! দিন বদলাইছে না?
রিপোর্ট কী বলে?
ছুরি-ছোরা জাতীয় ধারাল অস্ত্র ইউজ করা হয়েছে।
রেপ ফলোড বাই মার্ডার?
নো, স্যর।
কাপড়চোপড় ছিল গায়ে?
ছিল। গ্রিন টপস। ব্ল্যাক স্কার্ট। …সেক্স-ম্যানিয়াকের কাজ কি না, ভাবছিস তো? না সম্ভবত। খুনির যৌন বিকৃতির আলামত পাওয়া যায়নি কোনও।
আইডেন্টিটি বের করলি কীভাবে?
অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসাবে রিপোর্ট ফাইল করা হয়। প্রথমে। পরে টিভিতে কাপড় দেখে শনাক্ত করে একজন।
জনের খেয়াল হয়, বাসাবদলের ঝক্কির কারণে গত তিন চার দিন টিভি দেখা হয়নি। কে শনাক্ত করল?
একটা মেয়ে। নাম: চায়না।
অ্যানাদার শো-গার্ল?
মাথা ঝাঁকাল বব।
আর কিছু?
আছে। ইউরিন-টেস্ট। ড্রাগ পাওয়া গেছে পিশাবে। মারা যাওয়ার আগে নিয়েছিল।
কী ড্রাগ?
জিএইচবি।
চেনা চেনা লাগছে নামটা। ফুল ফর্ম কী?
গামা হাইড্রক্সিবিউটিরেট।
ইলিগ্যাল?
ইলিগ্যাল তো বটেই। কড়া ঘুমের ওষুধ। এটার আরেক নাম লিকুইড এক্সট্যাসি। খুব চলে পার্টিতে। বর্ণ-গন্ধ-স্বাদ না থাকায় যে-কোনও পানীয়র সাথে মিশিয়ে দেয়া যায়।
বলতে চাচ্ছিস, কেউ খাইয়ে দিয়েছে মেয়েটাকে? খুনের উদ্দেশ্যে?
খুব সম্ভব।
আর?
সুঁইয়ের দাগ। কবজিতে।
তুড়ি বাজাল জন। এই তো পাওয়া গেছে একটা পয়েন্ট। নিজেই তো মাদক, নিতে পারে মেয়েটা, সিরিঞ্জ ব্যবহার করে।
অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী, খোঁচা মারল বব। এই ড্রাগ শরীরে ইনজেক্ট করে না কেউ। মুখ দিয়ে নেয়।
কত অজানা, রে!
দেখবি তো লাশটা?
যাবে দেখা?
ডেফিনিটলি। ঠিক আছে। যাওয়ার সময় দেখব।
এক হাতের আঙুলের ফাঁকে আরেক হাতের আঙুল আটকে সামনে ঝুঁকল বব। তো, মিস্টার শার্লক হোমস, এ থেকে আপনি কী বুঝলেন?
কিছু না। আরও ইনফর্মেশন দরকার। ভাবছি, হট হাউসে একবার ঢু মারব।
চোখ মটকাল বব। ঘরে সুন্দরী বউ থাকতেও হচ্ছে না? আবার নেকেড ড্যান্স দেখতে হবে!
হাসি ছড়িয়ে পড়ল জনের মুখে। দূর, ব্যাটা! অ্যাড্রেসটা দে!
পাঁচ
সাজঘরের বাইরে অপেক্ষা করছে জন। একজনের সঙ্গে আলাপ করবে।
নাচে গেছে মেয়েটা। ওসব নষ্টামি দেখার ইচ্ছা নেই জনের।
নতুন কোনও চিন্তার খোরাক জোগায়নি এলিটা রের মৃত দেহটা। এখন জিজ্ঞাসাবাদে যদি কিছু বেরিয়ে আসে।
বেশিক্ষণ ওয়েট করতে হলো না। আরিয়ানা গ্রান্দের একটা গানের সুর ভাজতে ভাজতে ফিরে এল টিনা। অচেনা লোককে দেখে থেমে গেল গান। থামল দরজা দিয়ে ঢোকার মুখে। আত্মবিশ্বাসে ভরা একটা মুখ। ইয়েস, প্লিজ?
ব্লণ্ড চুল। শাণিত চাউনি। জনের মনে হলো, আগুনের শিখার সাথে এই দৃষ্টির তুলনা করা যায়। অবশ্য আপাদমস্তকই আগুন মেয়েটা। ফরসা দেহে দুরন্ত যৌবন। কেবল জি-স্ট্রিং পরনে। নাভিটা গভীর।
টিনা অ্যাণ্ডারসন?
পেয়ে গেছ আমাকে।
হাতের পত্রিকাটা তুলে ধরল জন।
লিটার ছবি দেখে আড়ষ্ট হয়ে গেল মেয়েটা। আবার কেন? একবার তো স্টেটমেন্ট দিয়েছি পুলিসকে।
পুলিসের লোক নই আমি।
তা হলে কী? প্রাইভেট আই?
তা-ও না। এফবিআই।
পুরানো একটা কৌতুক মনে পড়ল টিনার। নতুন এক জায়গায় লেকের পানিতে নামতে যাচ্ছে এক লোক। গোসল করবে। এই সময় এক ভদ্রলোক যাচ্ছিল সেদিক দিয়ে। ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল লোকটা, ভাই, সাপখোপ নেই তো লেকে? ভদ্রলোক আশ্বস্ত করল, না, রে, ভাই। যা-ও বা ছিল- কুমিরে খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে সব।
কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে গেল মেয়েটা। জনের নজরে পড়ল, ওর ডান দিকের শোল্ডারব্লেডের নিচে একটা প্রজাপতি। উল্কি।
কাপড় পরার জন্য দু মিনিট সময় দিল সে মেয়েটাকে। তারপর প্রবেশ করল ভিতরে।
পিঙ্ক কালারের একটা রোব গায়ে চড়িয়েছে টিনা। আলগোছে বেঁধেছে কোমরের ফিতে। দুই হাত বুকের উপর ভাজ করে রাখা। কী জানতে চাও, বলো।
মিউজিকের শব্দ ভেসে আসছে হলরুম থেকে। চাপা আওয়াজ।
তোমার সাথেই তো শেষ কথা হয়েছিল ওর, তা-ই না? কনফার্ম হতে চাইল জন।
কে বলেছে এটা?