আরে, না! মিটিং প্রায় শেষ। টানল বব বন্ধুর হাত ধরে। আয়।
রুমের বাতি জ্বেলে দিল লেফটেন্যান্ট।
গোলগাল চেহারার হাসিখুশি এক লোক বলে উঠল, হেই, জনি বয়!
পাতলা কেশ কমে এসেছে। বেরিয়ে পড়েছে বিরাট কপাল। ঝোঁপের মতো এক জোড়া ভুরু ওখানে। ডাবল চিন। আগে তরমুজ ছিল, এখন মিষ্টি কুমড়ো। তার পরও ডানকান জনসনকে না চেনার কোনও কারণ নেই।
খবর কী, বিগ শো? কুশল জানতে চাইল জন। হাসছে।
যেমন দেখছ। আদরের নামে ডাকায় যার-পর-নাই খুশি বিশালদেহী। তা, তুমি এখানে কী করছ, জনি? তোমার তো দক্ষিণ সাগরের কোনও দ্বীপে থাকার কথা! শুনেছি, বিলাসী জীবন যাপন করছ তুমি ওখানে। ধনী হয়ে গেছ নারকেল আর কলা বেচে।
কার কাছে শুনলে?
যার কাছেই শুনি- সত্যি নাকি কথাটা? ভুরু নাচাল ধুমসো অফিসার।
একদমই না। যে বলেছে, সে আস্ত একটা মিথ্যুক।
তা-ই হবে। আমি তো আসমান থেকে পড়েছিলাম শুনে। তোমার মতন ডাকসাইটে এজেন্টের মাথায় কী খেয়াল চাপল আবার! হা-হা-হা!
এমনিতেই ভারি গলা জনসনের। গমগম করে ওঠে। আর হাসলে মনে হয়, কামান দেগেছে কেউ।
তার কথায় বাকিদের কাছে অতিথির পরিচয় খোলসা করল বব। বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বলল, এ হচ্ছে জন, জন ডিউক। (মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে নড় করল জন)
এফবিআইতে আছে। হমিসাইড স্কোয়াডে।– ইটের মতো লাল চুলঅলা এক তরুণ নড়েচড়ে বসল।
আপনাকে চিনি আমি। আই মিন, নাম শুনেছি। বছর খানেক আগে মিডিয়াতে নাম এসেছিল না আপনার? এক সিরিয়াল কিলারকে ধরেছিলেন… ওই যে, ভিকটিমদের খেয়ে ফেলত যে-লোকটা! কী যেন নাম! ম্যানডারিন?
মারাণ্ডি। সিদ্ধার্থ মারাণ্ডি।
এক শ ওঅটের লাইটের মতো দপ করে জ্বলে উঠল লাল চুলের চোখ জোড়া। ইয়েস! মারাণ্ডি হাসল এক গাল। বিদঘুঁটে নাম। মনে থাকে না। ইনডিয়ান লোকটা, রাইট?
হ্যাঁ, এনআরআই (নন-রেসিডেন্ট ইনডিয়ান)।
অমানুষ আর কাকে বলে! পাশে বসা কলিগের দিকে তাকাল লাল ইট। টাকমাথা লোকটার গায়ে সরকারি পারকা। মধ্যবয়সী। গলায় বোলো টাই। চিন্তা করতে পারেন? মানুষ হয়ে মানুষ খাচ্ছে! খায় কীভাবে? শেষ, বাক্যটা জনকে উদ্দেশ্য করে।
পিঁয়াজ আর আলু দিয়ে রান্না করত, নির্বিকার চেহারায় বলল জন। তরুণ অফিসারের গাল কুঁচকে উঠতে দেখে যোগ করল, কেন, আফ্রিকার নরমাংসভোজীদের কথা শোনেননি?
শুনব না কেন? কিন্তু ওরা তো অসভ্য-বর্বর-জংলি ভূত। সভ্য সমাজে–
চিরকাল এই সব রহস্য আছে নীরব রুদ্ধ ওঠাধর। জন্মান্তের নবপ্রাতে সে হয়তো আপনাতে পেয়েছে উত্তর।
কী বললেন, বুঝলাম না! বোকা দেখাচ্ছে লালচুলোর চেহারা। কোন ভাষা এটা?
বাংলা, জবাব দিল জন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন?
না, শুনিনি। হু জ দ্যাট গাই?
স্মিত হাসল জন। আমারই ভুল। ডু ইউ নোউ ট্যাগোর
ইয়া। আই হ্যাভ হার্ড অভ হিম।
ট্যাগোরের কবিতা এটা।
আই সি। মানে কী এটার?
এক কথায় বললে: দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যাণ্ড আর্থ। খুনিদের মনস্তত্ত্ব তো আপনার-আমার সাথে মিলবে না। আপনাকে আমি আরেক জন সাইকোপ্যাথের কথা বলতে পারি। মিনেসোটায় থাকত লোকটা। নাম মরিস রেমণ্ড। সে কোনও বাসার দরজা খোলা পেলে সেই বাসায় নিমন্ত্রিত মনে করত নিজেকে। তারপর বাসায় ঢুকে যাকে পেত, তাকেই কোপাত কুড়াল দিয়ে।
ছোকরা অফিসারের মুখ-চোখ কুঁচকে উঠল। ধরা পড়েনি?
পড়েছে। অনেক চেষ্টার পর। তিনটা মাস আমাদের ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিল লোকটা।
ওকে, গাইজ, অধৈর্য ভাব ফুটে উঠল ববের গলায়। ব্রিফিং আজকের মতো এখানেই শেষ।
চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা পুলিস। যার যার জিনিসপত্র তুলে নিল টেবিল থেকে। জি [ বলতে ফাইল, প্যাড, কলম আর কফিকাপ। চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে করমর্দন করল জনের।
পাঁচ মিনিট পর।
ভালোই চালাচ্ছিস তা হলে! একটা চেয়ার দখল করে চারদিকে চোখ বোলাচ্ছে জন। বলতে গেলে, কিছুই বদলায়নি। ডেস্ক। ফোনসেট। ফাইলিং ক্যাবিনেট। দেয়াল জুড়ে ম্যাপ। বাঁধানো ফোটোগ্রাফ। তাকে রাখা ট্রফি। আপন মনে গুনগুন করছে এয়ারকুলার। পরিবর্তনের মধ্যে- পিসিটা নতুন মডেলের।
খারাপ না। চলছে-আর-কী ধরনের একটা ভঙ্গি করল বব। দু জনে বসেছে মুখোমুখি। মাঝখানে টেবিল। তোর খবর কী, বল। কী করছিস সিয়াটলে?
চলে এলাম।
চলে এলাম মানে?
পার্মানেন্টলি। বাড়ি কিনেছি।
গ্রেট! কোথায়?
এজেকিয়েল ড্রাইভে। উনিশ শ দশ- এজেকিয়েল ড্রাইভ।
সিলভার-কালারের একটা ফ্লাস্কের ঢাকনা খুলল বব। দুটো প্লাস্টিকের কাপে সবুজ রঙের তরল ঢালল। দোস্তের দিকে এগিয়ে দিল একটা কাপ।
কী এটা?
গ্রিন টি।
চা! জাপানিদের মতন চায়ের অভ্যাস করলি কবে থেকে?
গোমড়া মুখে বলল বব, বিড়ি ছাড়ার পর থেকে।
আরিশ-শালা, কস কী! বিড়ি ছেড়েছিস! তুই! জনের চোখ কপালে উঠেছে। রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা কেটলির মতন ধোয়া ছাড়ত যে!
উথলে ওঠা দীর্ঘশ্বাস চাপল বব। নো ওয়ে, ম্যান। বউ মারে।
বিমর্ষ, কাতর বন্ধুর কথায় দন্ত বিকশিত হলো জনের। তা হলে তো থ্যাঙ্কস দিতে হয় ওকে। খেয়ালই করিনি যে, এতক্ষণে একটাও চুরুট ফুকিসনি তুই।
চায়ের কাপে চমক দিল ও। ভালো জিনিস, মন্তব্য করল। তো, কেমন আছে মারিয়া?
যেরকম দেখেছিলি। দুদিন পর-পর এক-একটা বিষয় নিয়ে মেতে ওঠে। এবারে ধরেছে ভেষজ। দুই মাস হলো, ও-ই নিয়েই আছে। এক-একটা এক্সপেরিমেন্ট করে, আর গিনি পিগ বানায় আমাকে।