গর্বে বুকটা ফুলে উঠল জনের। একবার মাত্র বাংলাদেশে গেলেও বুকের ভিতরে প্রবল মমতা লালন করে ও দেশটার জন্য। একেই বোধ হয় বলে নাড়ির টান।
তামারা ব্রাইসকে ভালো লেগে গেল ওর।
এর আগে কোথায় ছিলে তোমরা? প্রসঙ্গ ঘোরাল প্রৌঢ়া।
ওঅশিংটন ডি.সি.-তে। ভাজ করা দৈনিকটার একটা হেডলাইনের উপরে চোখ আটকে গেল জনের। লাল ফন্টে ছাপা স্ট্রিপার ফাউণ্ড মার্ডারড পর্যন্ত পড়তে পারছে। বাকিটা ভাজের অন্যপাশে।
মে আই? হাত বাড়িয়ে দেখতে চাইল ও পত্রিকাটা। ওহ, শিয়োর।
স্থানীয় কাগজ। সান্ধ্য সংস্করণ। আয়োজন করে পরিবেশন করা হয়েছে সংবাদটা। চার কলাম জুড়ে। সাথে বড় করে ক্লোজ-আপ ছবি। রঙিন। হাস্যোজ্জ্বল।
চট করে চোখ বুলিয়ে নিল ও নিউজটায়।
বিশেষ কোনও তথ্য নেই। খালি নানান সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে প্রতিবেদক। গল্প ফেঁদে বসেছে আন্দাজের উপরে।
বয়স উনিশ মেয়েটার। নির্জন এক অ্যালিতে পাওয়া গেছে লাশ। ধড় আছে, মাথা নেই!
কে, জন? কার সাথে কথা বলছ? পোর্চে দাঁড়িয়ে মনিকা। অ্যাপ্রন পরে নিয়েছে একটা। ইতোমধ্যে ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে গেছে সেটা। কালিঝুলি লেগে আছে। হাতে, মুখে।
হাতছানি দিল ওকে জন। কাছে এলে ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিল তামারা ব্রাইসের সঙ্গে।
সন্ধ্যায় চলে এসো না আমার বাসায়! ডিনারটা ওখানেই করবে, দাওয়াত দিয়ে বসল মহিলা।
দৃষ্টি বিনিময় করল স্বামী-স্ত্রী। চোখে চোখে কথা হলো ওদের।
ধন্যবাদ, মিস ব্রাইস, ক্ষমাপ্রার্থনার সুরে বলল মনিকা। নিশ্চয়ই আসব। তবে আজ নয়, আরেক দিন। বুঝতেই পারছেন, হাজারটা কাজ পড়ে আছে ওদিকে! বহুত গোছগাছ। বাকি।
সেজন্যই তো বলছি… রান্নাবান্নার ঝামেলা কোরো না। চলে এসো।
পেপারটা ফেরত দিল জন।
যাই তা হলে। দেখা হচ্ছে সন্ধ্যায়।
বাসার দিকে চলল তামারা। চোখের আড়াল হতেই মুখ খুলল মনিকা। মহিলা বেশ মিশুক।
হুম, মাথা দুলিয়ে সহমত প্রকাশ করল জন। ললাটে কুঞ্চন। ভাবছে নর্তকীর কথা।
এমন নৃশংস ভাবে হত্যা করল কে মেয়েটাকে?
কেন?
চার
পরের দিন সকাল।
বন্ধুকে চমকে দেবে বলে আগে থেকে জানায়নি কিছু, সোজা ওর কর্মস্থলে এসে হাজিরা দিল জন। কাজে যায়নি। আজ ও। ছুটি নিয়েছে কয়েক দিন।
সিয়াটল জননিরাপত্তা ভবন। আটতলা একটা বিল্ডিং। অফ-হোয়াইট ডিসটেম্পার।
বিলি বব থর্নটন কোথায় বসে, জানা আছে ওর।
এলিভেটরে চেপে উঠে এল ছ তলায়। নির্ধারিত কক্ষের। সামনে এসে দাঁড়াল। কেউ ওকে আটকায়নি। কড়াকড়ি
যা আগেও এখানে এসেছে ও। শেষ এসেছিল বছর দুয়েক আগে। পরিচিত কয়েকটা মুখ চোখে পড়ল। কিন্তু কেউ ওকে খেয়ালই করল না।
মৌচাকের ব্যস্ততা গোটা প্রতিষ্ঠানে। ব্যস্তসমস্ত লোকজন ছুটোছুটি করছে। মশমশ শব্দ হচ্ছে জুতোর।
এদিকে ফোন বাজছে। অনবরত। ডাকে আসা এক গাদা চিঠিপত্র নিয়ে বসেছে কেউ। খটাখট চাবি টিপছে কমপিউটারের।
হাজারও রকমের অভিযোগ নিয়ে আসছে লোকে। কথা বলছে উচ্চস্বরে।
সন্দেহভাজনদের ধরে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে বিশেষ বেঞ্চে।
দরজার আগায় লাগানো ইস্পাতের পাত। খোদাই করে লেখা ওতে লেফটেন্যান্টের নাম। পাল্লার দু পাশের দেয়াল গ্লাস-প্যানেল করা। ভেনিসিয়ান ব্লাইণ্ডস ঝুলছে ওদিকটায়।
পরদার ফাঁক দিয়ে বন্ধুকে দেখতে পেল জন। নিখুঁত ছাটের কালো সুট, কালো টাই পরেছে ওর বন্ধ। কালো প্যান্ট। শার্টটা শুধু ধবধবে সাদা।
মেন ইন ব্ল্যাক মুভিটার কথা মনে এল ওর। শুধু একটা সানগ্লাসের অভাব।
নির্মল হাসি ফুটল জনের ঠোঁটে। বন্ধু ওর আগের মতোই আছে। একই রকম ধোপদুরস্ত। খাটো করে হেঁটেছে সোনালি চুল।
এক তা কাগজ ববের হাতে। আরেক হাতে কী জানি। নড়ছে মুখ। বিপরীত দিকের দেয়ালে নিবদ্ধ চোখ দুটো।
দেয়ালে ঝোলানো শ্বেত পটভূমির উপরে ফুটে আছে একটা ইমেজ। সামনে প্রজেক্টর। সেখান থেকে আলোকরশ্মি গিয়ে পড়ছে পরদায়। ঘরের এক মাত্র আলোর উৎস ওই
যন্ত্রটা। মিটিং চলছে ভিতরে।
হাতের জিনিসটা প্রজেক্টরের দিকে মুখ করে ধরে টিপে দিল বব। বদলে গেল ছবি। রিমোট কন্ট্রোলিং ডিভাইস ওটা।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল সে উপস্থিত অন্যদের দিকে। দৃষ্টি পড়ল কামরার বাইরে দাঁড়ানো লোকটার উপরে। নজর ফিরিয়ে নিতে যাচ্ছিল, কী মনে হতে মুখ ঘোরাল আবার। সুদীর্ঘ একটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে। বাইরের আলোর দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মুখ দেখা যাচ্ছে না লোকটার। কিন্তু ভীষণ পরিচিত ঠেকছে গড়নটা।
কাগজটা টেবিলে ফেলে দরজার দিকে এগোল বব। যেতে যেতে বড় হয়ে উঠল চোখ দুটো। টানল ডোরন ঘুরিয়ে।
দোস্ত! বত্রিশ পাটি দাঁত বেরিয়ে পড়ল জনের।
আবে ইয়ার! তুই কোত্থেকে? গলাটা একটু চড়ে গেল অফিসারের।
অন্তত পনেরো জোড়া চোখ ঘুরে চাইল ওর দিকে।
ববের চোখ-মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত। আস্তে করে ভিড়িয়ে দিল দরজাটা।
ডান হাতটা এগিয়ে দিল জন। হাসি এখনও একান ওকান।
হ্যাণ্ড শেক করার কিছুমাত্র আগ্রহ দেখা গেল না ববের মধ্যে। বদলে জড়িয়ে ধরল বন্ধুকে।
পরস্পরের হৃদয়ের উষ্ণতা অনুভব করল ওরা বহু দিন পর।
একেবারে চমকে দিয়েছিস! বলল বব জনকে ছাড়তে ছাড়তে।
চেয়েছি তো সেটাই। তবে এখন মনে হচ্ছে, ফোন করে আসা উচিত ছিল। তোদের বোধ হয় ডিসটার্ব করলাম। কাঁচের ভিতর দিয়ে ভিতরে তাকাল জন। এদিকে তাকিয়ে আছে লোকগুলো। চোখে প্রশ্ন। বিরক্ত কি না, বোঝা গেল না।