ছাতাটার জন্য চিৎকার করে কাঁদবে বুঝি মেয়েটা। চেয়ে রয়েছে দোমড়ানো কাপড়ের দিকে। লিটার দিকে এমন ভাবে তাকাল, যেন সব দোষ ওর।
হাসি দিয়ে সহমর্মিতা জানাল ওকে লিটা। পা রাখল ভিতরে।
অপরিসর করিডোর। আলো কম। ভিড় উপচে পড়ছে। জোয়ান। বুড়ো। মাঝবয়সী। মেয়েও আছে। স্টাফ। কাস্টমার।
প্রাইভেট কর্নারে ঢুকছে কেউ কেউ বেরোচ্ছে। ধোয়া, সেন্ট আর মদের দুর্গন্ধে পরিবেশ গুমট।
গান বাজছে বিকট শব্দে। অশ্লীল কথা। চটুল সুর। ড্রামের বিড়িম-ধিড়িমটাই কানে লাগে বেশি। গা গরম করতে আসা খরিদ্দাররা চোখ দিয়ে ধর্ষণ করছে ওকে।
কারও দিকে তাকাল না লিটা, একে-ওকে পাশ কাটিয়ে চলে এল ড্রেসিং রুমে।
টিনা ছাড়া কেউ নেই রুমে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রা, অ্যাডজাস্ট করছে মেয়েটা।
আয়নাটা ঘিরে বালব বসানো। ফ্রেমের উপরে। জ্বলছে সব কটা। উজ্জ্বল সাদা আলো ।
আরশির ভিতর দিয়ে লিটাকে দেখল মেয়েটা।
এসেছ! বলে উঠল। আমি তো ভাবলাম, আসবে না।
এলাম। বাসায় বসে থেকে বের হতে ইচ্ছা করল না।
ভালো করেছ।
চলে গেল টিনা দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে।
নাইলনের বর্ষাতি খুলে হ্যাঁঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখল লিটা। লেবু-রঙের সোয়েটারটাও। স্কার্টটা খুলে। এদিক-ওদিক তাকাল টাওয়েলের খোঁজে। হাত-মুখ মুছে মাথায় চেপে ধরল।– তোয়ালে। বেশি ভেজেনি।
দুধসাদা তোয়ালেটা আগের জায়গায় ছুঁড়ে দিয়ে হেয়ার ড্রাইয়ারের দিকে হাত বাড়াল ও। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তুলে নিয়ে চালু করল সেটা। ঘাড় একদিকে হেলিয়ে উষ্ণ বাতাসের পরশ লাগাল চুলে।
জলদি করার তাগিদ অনুভব করে ও। ফিরল বলে টিনা। সে এলে ওর শুরু। মা ওঅরড্রোব খুলল লিটা। বেছে বেছে এক সেট কালো সিল্কের অন্তর্বাস বের করল। নিজেরগুলো খুলে পরে নিল ওগুলো। তারপর মেক-আপ সারতে লাগল চটপট।
এরই মধ্যে চলে এল টিনা। উদোম বুক। জায়গামতো লসের বক্ষবন্ধনী। স্বত্ব ত্যাগ করে বিলিয়ে দিয়েছে দর্শনার্থীদের মাঝে। লজ্জাস্থান ঢাকার চেষ্টা কিংবা তৎপরতাও নেই ওর মধ্যে। দুই হাতে অনেকগুলো ডলার।
এসবে অভ্যস্ত ওরা। নগ্নতাই স্বাভাবিক এখানে। প্রস্তুত লিটা।
প্রথম প্রথম খারাপ লাগত। পয়সার জন্য কত কী যে করতে হয় মানুষকে! তা-ও ভালো, নিচেরটা খুলতে হয় না এখানে। নিয়ম নেই।
লোক কম আজকে।
ডজন দুই লোলুপ দৃষ্টির সামনে বাজনার তালে দেহ। প্রদর্শন করে ফিরে এল লিটা গ্রিন রুমে।
যাওয়ার উদ্যোগ করছে টিনা। কাপড় পরা শেষ। প্লেবয় এর লোগোঅলা গেঞ্জি আর জেগিংস।
দাঁড়াবে একটু? অনুরোধ করল লিটা। একসাথে বেরোব।
চটজলদি কাপড় পালটায় ও। সোয়েটারে মাথা গলিয়েছে, রাফায়েল এসে হাজির।
স্প্যানিয়ার্ড। ক্লাবের অ্যাটেণ্ড্যান্ট। থুতনিতে এক মুঠো দাড়ি।
কী, রাফ? লিটার জিজ্ঞাসা।
পরনে ঢোলা প্যান্ট। দুই হাত পকেটে ভরে রেখেছে রাফায়েল মার্টিনেজ। বলল, প্রাইভেট কল। তিন নাম্বার বুথ।
মানা করে দাও। আজকে পারব না।
কাঁধ ঝাঁকাল স্প্যানিশ। পিছন দিকে ঠেলে দিল মোটা ফ্রেমের চশমাটা। তোমার ভালো তুমিই বোঝে। তবে দুই শ দেবে। দশ মিনিটের জন্য।
যুবকের টি-শার্টে চোখ লিটার। কালো ব্যাকগ্রাউণ্ডে বড় বড় হরফে লেখা: ডোন ট টাচ মি, আই ম আ ভেজিটেরিয়ান।
ডাহা মিথ্যা। মাংসে বিন্দুমাত্র অরুচি নেই মার্টিনেজের।
দুই
গাড়ি চালাচ্ছে জন ডিউক। লাল একটা চেরোকি। নাম্বারপ্লেটটা ম্যারিল্যাণ্ডের। 42458OM.
ওর এক হাত স্টিয়ারিং-এ। গাঢ় রঙের শার্টের হাতা গোটানো।
একটা এরিয়্যাল দুলছে জিপের মাথায়। ছাতে তেরপল দিয়ে ঢাকা মালসামান। কষে বাঁধা রশি দিয়ে।
স্পিড বেশি নয় গাড়ির।
জায়গা চিনবার জন্য একটু পর-পর বাইরে তাকাতে হচ্ছে ওকে জানালা দিয়ে। হোল্ডিং প্লেটের নাম্বার দেখতে হচ্ছে চোখ সরু করে।
একই ধাঁচে বানানো রাস্তার দু পাশের বাড়িঘরগুলো। তেমন কোনও চিহ্ন নেই আলাদা, করার। তবে এই ব্লকেই বাড়িটা, জানে ও।
একটার পর একটা ল্যাম্পপোস্ট পেরোচ্ছে গাড়ি। পিছনে পড়ছে আইভি লতায় ছাওয়া ফটক… পাথরের সীমানা-পাঁচিল… মেইলবক্স… পাতাবাহারের বেড়া।
হুশ করে উলটো দিকে চলে গেল একটা সাইকেল। আরোহী এক কিশোরী।
এই তো! ১৯১০।
পাশের জানালা দিয়ে ঘরবাড়িগুলো পর্যবেক্ষণ করছিল মনিকা লোরেন। চাইল হাবির দিকে।
মুখে হাসি জনের। ঝকমক করছে চোখ দুটো। ওর ইতালিয়ান বউ কী রকম খুশি হবে, কল্পনা করে চওড়া হলো হাসিটা।
কম ধকল যায়নি ওর জন্য এই সারপ্রাইজটা রেডি করতে। রিয়েল এস্টেটের লোকটাকে বার-বার করে বলে দিয়েছে, সতেরোই এপ্রিলের আগেই যেন তৈরি থাকে বাড়িটা।
শেষ মোড়টা ঘুরে ছিমছাম, নিরিবিলি একটা রাস্তায় প্রবেশ করল চেরোকি।
দোতলা একটা বাড়ির উপরে চোখ পড়ল মনিকার। ছবির মতো সুন্দর বাড়িটা। লাল সিরামিক ইট আর হলুদ রঙে মানিয়েছে দারুণ। চিমনি আছে। দরজা-জানালাগুলো ধবধবে সাদা।
এক চিলতে লন সামনে। এক পাশে একটা পাইন গাছ। দাঁড়িয়ে। নিঃসঙ্গ।
তোমার উপহার, বলল জন।
মনিকার কালো চোখের মণিতে অবিশ্বাস।
খোয়া বিছানো ড্রাইভওয়েতে উঠল গাড়ি। থামল কিছুটা এগিয়ে।
আগেই পৌঁছে গেছে মালপত্রে ঠাসা দুটো ভ্যান। জিপটা দেখে মাল নামাতে তৎপর হলো লেবারাররা।
সিটবেল্ট খুলল মনিকা। নামল গাড়ি থেকে।