ওই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ফিরতেই মহিলা তাকে বলল তার সঙ্গে কামরায় এসে দেখতে সব কিছু ঠিক আছে কিনা।
‘গোটা বিকালটা রান্নাঘরের আগুনের কাছে রেখেছি তোমার বিছানাটা।’ বলল মহিলা।
মেডিকেল কলেজের ছাত্রটি তার সঙ্গে ভেতরে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করল মহিলা, ‘এবার ঠিক আছে তো?’
‘হ্যাঁ, এখন এটা একেবারেই শুকনো। তবে এটা নিশ্চিত গত রাতে ওটা ভেজাই ছিল।’
বেশ রাত করে পড়ালেখা শেষ করে বিছানায় গেল ছেলেটি। কিন্তু যখনই শরীরটা এলিয়ে দিল আবিষ্কার করল ওটা ভেজা। কিন্তু সকালে যখন মহিলাকে দেখাতে নিয়ে যাওয়ার আগে স্পর্শ করে দেখল, অবাক হয়ে আবিষ্কার করল, ওটা একেবারেই শুকনো।
বেশ চমকিত মেডিকেল ছাত্র এবার বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিল। মহিলা তখন তাকে অপর একটা কামরা দিতে চাইল। ছেলেটা এতে কী লাভ হবে বারবার জানতে চাইলে মহিলা অনিচ্ছাসত্ত্বেও জানাল, এই কামরায় আগে যারাই থেকেছে দারি করেছে ওই বিছানাটা ভুতুড়ে।
‘আমি এতদিন একে তাদের কল্পনা ভেবেছিলাম,’ বলল মহিলা; ‘তবে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আসলেই কোন সমস্যা আছে। ওই কামরাটার ওপরেই একটা রুম খালি হয়েছে। চাইলে আজই ওটায় উঠে যেতে পার।’ তবে এই ঘটনার পর ছাত্রটির আর ওই বাড়িতে থাকার কোন আগ্রহ ছিল না। সন্ধ্যায়ই সে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদায় নেয়।
এই মেডিকেল ছাত্রের কথা বলতে গিয়ে উইমপোল স্ট্রিটের কথা মনে পড়ে গেল। ওখানে একটা বাড়িতে প্রায় সময়ই চিকিৎসকরা বাস করেন। ওই বাড়িটারও ভুতুড়ে বলে বদনাম আছে। তবে ওখানকার রহস্যময় অতিথি সাধারণত দেখা দেয় না, বরং শব্দ করে নানা ধরনের। একটা কামরা থেকে চাবুকের শপাং শপাং বাড়ির শব্দ শোনা যেত প্রায়ই। মনে হত যেন কোন মানুষকে কেউ চাবুক দিয়ে ইচ্ছামত পেটাচ্ছে। আবার এক ল্যাণ্ডিঙে বাস করা লোকেরা প্রায়ই প্রচণ্ড হাতাহাতির শব্দ শুনতে পেতেন। শেষ হত কোন একটা কিছু ধপ করে পড়ার শব্দের মাধ্যমে। ধারণা করা হয় ওই বাড়িতে বাস করা কোন ভৃত্য অমানুষিক নির্যাতনের কারণে মারা যায়। তার অতৃপ্ত আত্মাই এই শব্দগুলো ফিরিয়ে আনছে।
যুদ্ধের সময় একেবারেই অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা হয় আমার। উইগমোর স্ট্রিটে এক ভূতের খোঁজে গিয়ে এটা হয়। একটা ফ্ল্যাটে নীল একটা আলো দেখা যায়, এক কামরা থেকে আরেক কামরা চষে বেড়ায় ওটা। আবার প্রতি রাতে একই সময়ে, যখনই আলোটা দেখা যায় একটা ছায়ামূর্তি হাজির হয়। একটা সিঁড়ির নিচে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ওটা।
তো এক রাতে আরও কয়েকজন বন্ধুসহ ঠিক করলাম ওই বাড়িটায় ভূতের খোঁজে যাব। রিজেন্ট স্ট্রিটে একটা ক্লাব থেকে কেবল বেরিয়েছি তখনই রাস্তার লাল বাতিগুলো নিভে গেল। তার পর পরই গুলির শব্দের মত দুটো আওয়াজ।
সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে পড়ল। কিন্তু আমি ওই বাড়িটায় হাজির হওয়ার জন্য লাফ দিয়ে একটা বাসে উঠে পড়লাম। অক্সফোর্ড সার্কাসে আমাকে ছাড়ল বাসটা। উইগমোর স্ট্রিটে যখন এলাম তখন দেখলাম রাস্তায় আমিই একমাত্র পথচারী। তারপরই রীতিমত বিশৃঙ্খল আর ভয়ানক একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো। রাস্তা ও ফুটপাতের ওপর গোলার টুকরো পড়তে লাগল। বেশ বিচলিত হয়ে পড়লাম। মাথায় কেবল নরম ফেল্ট টুপি আমার। চারপাশে ঘন অন্ধকার, কেবল একটা ল্যাম্প পোস্ট থেকে লাল একটা আলো আসছে। এসময় কটা নীল আলো চোখে পড়ল। ওই আলোয় ফুটে উঠল অশুভ কটা শব্দ, ‘তাড়াতাড়ি নিরাপদ কোথাও গা ঢাকা দাও।’
সত্যি ভয় পেলাম। এক ছুটে ভুতুড়ে বাড়িটাতে গিয়ে উঠলাম। বাড়ির মালিক মহিলা আর তার সঙ্গী ছাড়া আর কেউ নেই। আমার যে বন্ধুদের জন্য ঝুঁকি নিলাম তারা একজনও আসেনি। রাতভর সেখানে থেকেও কোন ধরনের অস্বাভাবিক আলামত পেলাম না। ‘সম্ভবত গোলাগুলির শব্দ ওটাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছ। অন্যান্য সাবধানী নাগরিকদের মত গা ঢাকা দিয়েছে সে-ও।’ ঠাট্টা করে বললেন ভদ্রমহিলা।
হারলে স্ট্রিটের দুটো বাড়ির কথা জানি সেগুলো ভুতুড়ে। এই এলাকায় একসময় চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণার প্রয়োজনে অনেক কুকুরকেই যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে বলে শুনেছি। একটা বাড়িতে যেমন একটা স্প্যানিয়েল কুকুরের অশরীরীকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। ওটার প্রচণ্ড যন্ত্রণায় চিৎকার করার শব্দ শুনলে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে যাবে আপনার। এদিকে অপর একটা বাড়িতে, অর্ধ শতাব্দী আগে যেখানে ভয়ানক একটা অপরাধ সংঘটিত হয়, সেখানে অশরীরী হাজির হয় একটা পিপের বেশে, থপ থপ শব্দ করতে করতে কিচেনের সিঁড়ি বেয়ে ওটা নেমে যায় পাতালঘরের দিকে।
ডোভার স্ট্রিটের কাছে একটা দোকানের ওপরে একটা ফ্ল্যাট নিয়েও নানা ধরনের কিচ্ছা প্রচলিত। বেশ কয়েক বছর আগে এক ব্যারিস্টার বন্ধুসহ সেখানে হাজির হলাম। তবে ফ্ল্যাটটায় রাত কাটানোর অনুমতি পেলাম না। খুব নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে পারলাম, এক নারী রাতে কেউ শুয়ে থাকলেই ওই বিছানায় গিয়ে বসে। ওই সময় শুয়ে থাকা ব্যক্তিটি গলায় প্রচণ্ড চাপ অনুভব করতে থাকে। কখনও কখনও মূর্ছাও যায়। এর নির্ভরযোগ্য কোন ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও একটা তত্ত্ব বেশ ডালপালা মেলেছে। একসময় ফ্ল্যাটটায় অর্ধ-উন্মাদ এক নারী বাস করত। সে নিজের বোনকে এবং তারপর নিজেকেই গলা টিপে মেরে ফেলে। অবশ্য আমার গবেষণায় বহু আগেই বেরিয়ে এসেছে, যেসব বাড়িতে এ ধরনের উন্মাদরা বাস করেছে এবং এভাবে গলা টিপে কাউকে মেরেছে, সে বাড়িগুলোতে এ ধরনের গলা চেপে ধরার অভিজ্ঞতা হয় লোকেদের মাঝে মাঝেই।