১৯৬৯-এর মে মাসের শেষ সপ্তাহে শেষবারের মত দেখা দিল, ভূতটা। কিচেনের মেঝেতে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সময় একে পরিষ্কার দেখলেন বাড়ির লোকেরা। প্রতিবেশীরা বাড়ির সব জায়গায় রসুনের কোয়া ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিল প্রিচার্ডদের। তারা তাই করলেন। এরপর থেকে আর দেখা দেয়নি ভূতটা।
এই অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো নিয়ে অনেক তদন্ত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন গ্রামটার যেখানটায় এখন প্রিচার্ডদের বাড়ি ১০৯০-১৫৩৯ সাল পর্যন্ত এখানে একটা গির্জা ছিল। ওই গির্জার এক পাদ্রীকে রাজা অষ্টম হেনরির নির্দেশে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। আট বছরের এক বালিকাকে ধর্ষণ করার অপরাধে এই শাস্তি হয় পাদ্রীর। পাদ্রীকে ফাঁসিতে ঝুলানোও হয় এখন যেখানটতে প্রিচার্ডদের বাড়ি এর সীমানার মধ্যে।
তবে পনটারফ্রাক্ট গ্রামের এই ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তি নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তারা কোনোভাবেই হিসাব মিলাতে পারেননি, এত দিন বাদে ১৯৬৬ সালে কেন পাদ্রীর আত্মা হঠাৎ সরর হয়ে উঠল। আর একটা প্রশ্নেরও উত্তর মিলল না। সেটা হলো, ওটা পবিত্র পানিতে ভয় পেল না একটুও, অথচ রসুনের কোয়া ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটা ছেড়ে দিল। কী এর কারণে কে জানে?
অশুভ রাস্তা
কোনো কোনো রাস্তা আছে যেখানে ভৌতিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা অতি সাধারণ ব্যাপার। আবার কিছু রাস্তা আছে যেগুলো সে অর্থে কুখ্যাতি অর্জন না করলেও এখানে অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে মানুষকে। এমন কিছু রাস্তার গল্প নিয়ে ‘অশুভ রাস্তা’।
১. ভয়ঙ্কর দুই হাত
ভয়ঙ্কর দুই হাত
২৮ বছর বয়স্কা ফ্লোরেন্স ওয়ারওইক রাস্তার পাশে গাড়িটা দাঁড় করালেন। মনোযোগ দিয়ে এলাকার মানচিত্রটা দেখতে লাগলেন। আঁধার নেমে এসেছে। গাড়ির ভিতরের আলোতে একাগ্রচিত্তে মানচিত্রটার দিকে তাকিয়ে আছেন ভদ্রমহিলা। পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোর হেডলাইট মাঝেমাঝে উজ্জ্বল আলো উপহার দিচ্ছে। হঠাৎই আবিষ্কার করলেন গাড়ির ভিতরটা ঠাণ্ডা বাতাসে ভরে গেছে। সময়টা মে,১৯৭৬। বছরের এ সময় আবহাওয়া হঠাৎ এমন শীতল হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে পেলেন না ফ্লোরেন্স। এসময়ই মনে হলো কে যেন একদৃষ্টিতে তাকে দেখছে। গাড়ির সামনের কাচ ভেদ করে বাইরে তাকালেন। বিশাল আকারের দুটো হাত চোখে পড়ল তার। মনে হলো উইণ্ডস্ক্রীনে চাপ দিচ্ছে। হাতের আঙুলগুলো কাঁচের ওপর যেন তবলা বাজাচ্ছে। তিনি ওগুলোকে দেখতেই আঙুলগুলোকে ব্যবহার করে হাতগুলো চলাফেরা করতে লাগল কাঁচের ওপর।
ফ্লোরেন্সের শরীর বেয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল। আতংকে চোখ বড় বড় করে হাত-দুটোর ভীতিকর কাজ-করবার দেখছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য হয়ে গেল হাত জোড়া।
তবে এই রাস্তায় এমন ঘটনাকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। ফ্লোরেন্সেরই প্রথম এই অভিজ্ঞতা হয়নি। পোস্টব্রিজ থেকে ডর্টমুরের দিকে চলে যাওয়া রাস্তার এই জায়গাটিতে যে-ই গাড়ি দাঁড় করিয়েছেন তাকেই পৈশাচিক এই হাত জোড়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ লোজনকে সতর্ক করে জায়গায় জায়গায় বোর্ড টাঙিয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে কারো যদি পেট্রোলে টান পড়ে বা গাড়ি মেরামতির প্রয়োজন হয় তবে রাস্তার আরেকটু সামনে এগুলেই তা মিলবে। চালকদের পরামর্শ দেওয়া হয় এই এলাকায় গাড়ি দাঁড় না করানোর আর এদিকটা অতিক্রমের সময়ই প্রয়োজনীয় সব কিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে রাখার জন্য। তারপরও অনেক আগন্তুক আগে থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানা না থাকায় মুখোমুখি হয়ে যান ভীতিকর দুই হাতের। এ ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চলে আসছে আশি বছর হলো, যখন থেকে ভৌতিক সব ঘটনার শুরু তখন থেকে। যত বিপদই হোক গাড়ি চালকরা চান এই এলাকা দ্রুত অতিক্রম করে যেতে।
টরবেতে ফিরে এলেন ফ্লোরেন্স। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এখানে থাকেন তিনি। ত্রিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে আসলেও কীভাবে আবার গাড়িটা চালানো শুরু করেছেন আর কীভাবেই বা, ফিরে এসেছেন নিজেও জানেন না। টরবেতে পরিচিত জনদের এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বললেন। মনে মনে অস্বস্তিতে ভুগছিলেন, বন্ধুরা নিশ্চয়ই এটা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করবে। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে তারা জানাল রাস্তায় মাঝে মাঝেই এমনটা ঘটে। এটাও বলল রাস্তার এই অংশটাতে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। আর অপ্রত্যাশিতভাবে দুই হাতের উপস্থিতিতে আতংকিত হয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন অনেক গাড়ি চালকই।
যতদূর জানা যায় ১৯২০ সাল কিংবা তার আশপাশের সময় থেকে এ ধরনের অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড-কারখানা শুরু হয় এই রাস্তায়। তখন তো এই রাস্তায় বেশি দেখা যেত ঘোড়া। প্রায়ই আতংকিত হয়ে সাওয়ারিদের ছুঁড়ে ফেলে দিত ঘোড়ারা। পোষা গবাদিপশু এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ভয় পেয়ে জোরে দৌড়তে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ত। সাইকেল চালকরা অস্বাভাবিক কিছু দেখে আতংকিত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ত। একবার এক চিকিৎসক তাঁর মটর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশেই সাইড কারে তার বাচ্চা দুটো। হঠাৎ মটর সাইকেলটা উল্টে পড়ল। তবে সৌভাগ্যই বলতে হবে চিকিৎসক আর তার দুই বাচ্চা সে অর্থে কোনো আঘাত পাননি।