বাড়িটাকে ভূতের কবল থেকে মুক্ত না করেই চলে যেতে বাধ্য হলেন রেভারেণ্ড ডেভি। এই ঘটনার পর আরো বেশি জ্বালাতন শুরু হলো। সম্ভবত পাদ্রী ডেভির ব্যর্থতা একে আরো উৎসাহী করে তুলেছে। এদিন রাতে ডায়না যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, কামরার বাতি নিভে গেল। সেলাইয়ের একটা মেশিন রাখা ছিল হলরুমে। স্ট্যাণ্ডসহ উড়ে এসে ডায়নার বুকের ওপর বসে গেল ওটা। অনেক চেষ্টা করেও নড়ানো গেল না। তবে ডায়না যন্ত্রটার কোনো ওজন অনুভব করছে না বুকে। কিছু সময় পর ওজনটা টের পেল সে, এবার যন্ত্রটাকে সরানো গেল।
অশুভ এসব কাণ্ড-কারখানা চলল টানা অনেকগুলো দিন। কখনো গোটা বাড়িটা অদ্ভুত একটা সুগন্ধে ভরে যায়, কখনো পাওয়া যায় বদ গন্ধ। প্লেট, পিরিচ চড়া শব্দে মাটিতে পড়ে। গোটা বাড়িতে শোনা যায় ড্রামের দ্রিম দ্রিম শব্দ, আশপাশের লোকেরাও আতঙ্কে তটস্থ হয়ে উঠল। বেশ কয়েকবার ডায়নাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হলো তার বিছানা থেকে।
১৯৬৮ সালে আশ্চর্য এই ঘটনার খবর এল সংবাদপত্রে। শুধু ইয়র্কশায়ার নয় ইংল্যাণ্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকেরা গ্রামটিতে ছুটে আসতে লাগল, ভূতটার কাজ-কারবার দেখার জম্য। এমনকী তারা ওটার একটা নামও দিয়ে ফেলল, মি, নোবডি। আর প্রিচার্ডরা একে ডাকেন ফ্রেড নামে।
যতদূর বোঝা যায় বাড়ির সব কিছু উল্টে দেওয়া দারুণ পছন্দ মি. ফ্রেডের। জিনিসপত্র শূন্যে ভাসিয়ে ভারি মজা পায় সে। আর সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ডায়না। তাকে জ্বালাতন করতে পারলেই যেন খুশি হয় সবচেয়ে বেশি। তবে মন্দের ভাল, কখনো আঘাত করেনি ওটা ডায়নাকে।
আরেকবার প্রিচার্ডদের গোটা পরিবার একত্র হয়ে ভূতটার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করল। এর জবাবে ফ্রেড ওপরের তলা থেকে সমানে জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারতে লাগল নীচে। মনে হলো যেন বৃষ্টির মত জিনিস পড়ছে ওপর থেকে।
আরেকটা ঘটনা ঘটল একজন অতিথির সামনে। ডায়নার ফুপু মউডি পিয়ার্স এসেছিলেন তাদের সঙ্গে থাকতে। তবে ভূত বা আত্মা-ফাত্মায় তার বিশ্বাস নেই। সময়টা শীতকাল, আর ঘরের সবাই একটা আগুনের চারপাশ ঘিরে বসে ছিল। হঠাৎ ঘরের বাতিগুলো নিভে গেল। আগুনের আলোতে সবাই দেখল ফ্রিজের দরজা খুলে গিয়ে দুধ ভর্তি একটা জগ শূন্যে ভেসে ভেসে আসছে। তারপর নিজে নিজে জগটা খালি হলো মিসেস মউডি পিয়ার্সেও মাথায়।
এর একটু পরেই মিসেস পিয়ার্সের হাতের দস্তানা জোড়া অদৃশ্য হলো। যখন ঘুমাতে গেলেন, কোনখান থেকে যেন বাতাসে ভাসতে ভাসতে হাঁজির হলো দস্তানাদুটো। স্তোত্র গাইতে শুরু করলেন মিসেস পিয়ারস। দস্তানাজোড়া এভাবে নড়তে শুরু করল, যেন কোনো অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করছে অদৃশ্য কেউ। কয়েকদিন বাদে যেটা ঘটল এমন ঘটনার নজির আর পাবেন কিনা সন্দেহ। এক সন্ধ্যায় প্রিচার্ডদের গোটা পরিবারটাই বারান্দায় বসে গল্পে-সল্পে মশগুল হয়ে আছেন। এমন সময় বন্ধ দরজা দিয়ে একটা ডিম এভাবে বেরিয়ে এল, যেন বা এখানে কোনো দরজার অস্তিত্বই নেই। শূন্যে কিছুক্ষণ ভেসে থাকার পর মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল ডিমটা। তবে ওটা থেকে এমন একটা গন্ধ বের হতে লাগল, মনে হলো জিনিসটা ডিম না সেন্টের বোতল। উঠে গিয়ে ফ্রিজের দরজা খুললেন মিসেস প্রিচার্ড। একটা ডিম খোয়া গেছে। ফ্রিজ থেকে সবগুলো ডিম বের করে একটা ঝুড়িতে রাখলেন তিনি। তারপর ঝুড়িটার ওপর বসে পড়লেন। তবে এতে কোনো কাজ হলো না। একটু পর আরেকটা ডিম উপস্থিত হলো বারান্দায় এবং মাটিতে পড়ে ভাঙল। আরো একটা ডিম নিখোঁজ হলো ঝুড়ি থেকে। একটার পর একটা ডিম শূণ্যে ভেসে এসে মাটিতে আছড়ে পড়তে লাগল। একসময় খালি হতে হতে ঝুড়িতে আর একটা ডিমও রইল না।
কাছের এক চার্চের পাদ্রী ফাদার হাড়সনের কাছ থেকে পবিত্র পানি আনাল প্রিচার্ডরা। তারপর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দেওয়া হলো ওই পানি। ভূতটাকে বাড়ি ছাড়া করার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হলো। কিন্তু এর ফলাফল হিসাবে ছাদ থেকে বৃষ্টির ফোটার মত পানি পড়তে লাগল নীচে। সম্ভবত ভূতটা এটা করে বাড়ির লোকেদের দেখিয়ে দিল পবত্র পানিকে ভয় পায় না সে।
এদিন আরো দুটো ঘটনা ঘটল। ডায়না চুল আঁচড়াচ্ছিল। টেবিল থেকে একটা ড্রয়ার বেরিয়ে এসে কামরার এক কোণের দিকে ছুটে গেল। হলে ঝুলানো ধাতব ক্রসটা উড়ে এসে ডায়নার কোমরে লেগে রইল। মনে হলো যেন ডায়নার কোমরটা একটা চুম্বক, যেটা ক্রসটাকে আকর্ষণ করেছে। ওটাকে ছাড়ানোর জোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো ডায়না। আতংকিত হয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। তবে সে বের হওয়ার আগেই ক্রসটা মাটিতে পড়ে গেল। ক্রসটা কোমরের সঙ্গে আটকে থাকার চিহ্ন অনেক দিন পর্যন্ত থাকল তার শরীরে।
আগস্ট, ১৯৬৬ থেকে মে, ১৯৬৯ পর্যন্ত ভুতুড়ে এসব কাজকারবার হয় প্রিচার্ডদের বাড়িতে। এসময়টায় তাদের প্রতিবেশীরা বাড়িটাকে একটা আলো ঘিরে থাকতে দেখে। কিন্তু আলোটাকে মোটেই সাধারণ আলো মনে হয়নি। এসময়টায় আশপাশের বাড়িগুলোর থেকে বিদ্যুতের বিলও অনেক কম এসেছে তাদের।
আরেকদিনের ঘটনা। ডায়না কিচেনে কফি বানাচ্ছে। হঠাৎ বাতি নিভে গেল। মিসেস প্রিচার্ড একটা টর্চ আনতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এর পরপরই ডায়নার আতংকিত চিৎকার শুনলেন। দৌড়ে এসেই ভয়াবহ একটা দৃশ্য দেখলেন। সিঁড়িতে পড়ে আছে ডায়না। তার সোয়েটার এমনভাবে কেঁটে-ছিঁড়ে গেছে মনে হচ্ছে যেন শক্তিশালী কিছু একটা ওপরতলা থেকে টেনেহিচড়ে নীচে নামিয়েছে তাকে। বাড়ির সবাই দৌড়ে এল তার সাহায্যে। ডায়নার পাশেই সিঁড়িতে হুড়মুড় করে পড়লেন তারা। পরে মেয়েটার গলায় পাওয়া গেল রহস্যমৃয় আঙুলের চিহ্ন।